মালদা, 23 অক্টোবর: বিয়ে হয়েছিল ন’বছর আগে, সামাজিক মতে ৷ তার পরে আর রেজিস্ট্রি করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি গ্রাম্যবধূ ৷ গ্রামের অধিকাংশ দম্পতিই অবশ্য ভরসা রাখেন সামাজিক বিয়েতেই ৷ আইনি বিয়ের কথা ভাবেন না অনেকেই ৷ এখন তারই খেসারত দিচ্ছেন বছর ত্রিশের এক মহিলা ৷ ন’বছরেও সন্তান না-হওয়ায় তাঁকে এখন স্ত্রী হিসেবে মানতে অস্বীকার করছেন স্বামী ৷ শ্বশুরবাড়ির লোকজনও এক্ষেত্রে ঘরের ছেলের পাশে ৷ দীর্ঘ দু’বছর ধরে ওই যুবতী নানা উপায়ে শ্বশুরবাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেছেন ৷ কিন্তু সফল হননি ৷ অবশেষে স্ত্রীর মর্যাদা ফিরে পেতে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ৷
ঘটনাটি ইংরেজবাজার থানার একটি গ্রামের ৷ ওই মহিলার বক্তব্য, "2015 সালে ওই গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে সামাজিক মতে আমার বিয়ে হয় ৷ 2021 সাল পর্যন্ত আমরা একসঙ্গে সংসারও করি ৷ কিন্তু বিয়ের সাত বছর হয়ে গেলেও আমার কোনও সন্তান হয়নি ৷ এনিয়ে স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের সঙ্গে আমার ঝামেলা বাঁধত ৷ আমি তাদের অনেক বোঝানোর চেষ্টা করি, সন্তান না-হওয়ার দায় শুধু আমার নাও হতে পারে ৷ কিন্তু আমার স্বামী কোনওদিন নিজের শারীরিক পরীক্ষা-নীরিক্ষা করায়নি ৷ শেষ পর্যন্ত 2022 সালে শ্বশুরবাড়ি থেকে আমাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় ৷ বাধ্য হয়ে আমি বাবার বাড়িতে চলে যাই ৷"
তিনি আরও জানান, "তারপর থেকে বহুবার শ্বশুরবাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেছি ৷ কিন্তু ওরা আমাকে বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি ৷ এনিয়ে গ্রামে সালিশি সভা বসলেও ওরা সভায় হাজির হয়নি ৷ আমি এনিয়ে ইংরেজবাজার মহিলা থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করি ৷ কিন্তু পুলিশও সমস্যার সমাধান করতে পারেনি ৷ দিন দশেক আগে আমি ফের শ্বশুরবাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করি ৷ এবার আমার স্বামী আমাকে স্ত্রী হিসাবে মানতেই অস্বীকার করে ৷ সে বলে, তার সঙ্গে আমার নাকি বিয়েই হয়নি ৷ এটা ঠিক, আমাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয়নি ৷ কিন্তু আমাদের যে সামাজিক মতে বিয়ে হয়েছিল, গোটা গ্রাম তার সাক্ষী আছে ৷ আমরা যে স্বামী-স্ত্রী হিসাবে সংসার করেছি, তার অসংখ্য প্রমাণ আমার কাছে আছে ৷ নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমি বাধ্য হয়ে মালদা জেলা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি ৷ আদালতে আমি সুবিচার পাব বলে আশা রাখছি ৷"
অভিযোগকারিণীর মায়ের দাবি, "আমরা গরিব মানুষ ৷ 2015 সালে ধার-দেনা করে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলাম ৷ প্রথম দিকে মেয়ে-জামাইয়ের সংসার ভালোই চলছিল ৷ কিন্তু বছর চারেক পর থেকে ওদের দাম্পত্য জীবনে সমস্যা শুরু হয় ৷ এর মূল কারণ, ওদের সন্তান না হওয়া ৷ শুনেছি, জামাই এখন অন্য মেয়ের সঙ্গে প্রেম করছে ৷ তাকেই নাকি বিয়ে করবে ৷ সেই কারণে আমার মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে ৷ আমার বিশ্বাস, আদালতে মেয়ে ন্যায়বিচার পাবে ৷"
ওই মহিলার আইনজীবী দিলীপ ঘোষ বলেন, "মেয়েটির সঙ্গে খুব অন্যায় করা হয়েছে ৷ আদালতে অবশ্যই তিনি নিজের অধিকার ফিরে পাবেন ৷ তাঁরা যে স্বামী-স্ত্রী হিসাবে দীর্ঘদিন একসঙ্গে ছিলেন, তার বহু প্রমাণ রয়েছে ৷ প্রয়োজনে সেসব আদালতে পেশ করা হবে ৷"