পানিহাটি, 4 জুন: বাম আমল থেকে একচ্ছত্র আধিপত্য ৷ রয়েছে মারধর, থানায় ঢুকে গন্ডগোল-সহ একাধিক অপরাধের অভিযোগও । এহেন নঈম আনসারি অপরাধ জগতের 'কিং পিন' হয়ে ওঠে তৃণমূল আমলে ৷ অভিযোগ, শাসক নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে ক্রমশ 'নেপালি' অপরাধের জাল বিস্তার করতে শুরু করে ৷
এভাবেই এলাকার শাসক নেতাদের অত্যন্ত আস্থাভাজন ওঠে নঈম ৷ সেই সুবাদে অস্ত্র কারবারিতেও হাত পাকিয়ে ছিল বলে অভিযোগ ৷ বাম আমলে মূলত খড়দা, টিটাগড়, সোদপুর ও পানিহাটিতে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল তার ৷ তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর নঈমের রাজনৈতিক পরিচয়ও বদলে যায়।রাতারাতি জার্সি বদল করে তৃণমূল দলে নাম লেখায় সে ৷ ধীরে ধীরে শাসকদলের একজন সক্রিয় কর্মী হয়ে ওঠে ৷ পানিহাটি অস্ত্রভাণ্ডার-কাণ্ডে ধৃত এই তৃণমূল কর্মীই এখন চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে ৷

ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দ্রবদন ঝা বলেন,"কোথা থেকে ধৃত ব্যাক্তি এত বিপুল পরিমাণ অস্ত্র জোগাড় করেছিল । কোথায় সরবরাহ করত সে, সবকিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।” 10 দিনের পুলিশের হেফাজতে রয়েছে নঈম ওরফে নেপালি। তাকে জেরা করে তদন্তকারীরা জানার চেষ্টা করছেন, ঠিক কত টাকায় ও কাদের অস্ত্র ভাড়া দিত সে!
পানিহাটি অস্ত্রভাণ্ডার-কাণ্ডে নয়া মোড় ! তৃণমূল কর্মী নঈম আনসারির বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া বিপুল অস্ত্রভাণ্ডারের ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশের হাতে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে এমন কিছু অস্ত্র, যা মূলত ভারতীয় সেনা ব্যবহার করে থাকে। আর সেই অস্ত্র নাকি ভাড়ায় খাটাত নঈম ৷ জেরায় এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিশ ৷ কিন্তু কারা সেই অস্ত্র তার কাছ থেকে ভাড়া নিত ? উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।

বছর পঞ্চান্নর নঈম আনসারির বাড়ি পানিহাটির নয়াবস্তির মৌলানা সেলিম রোডে ৷ বিশেষ রকমের চেহারার কারণে তাঁর ডাকনাম হয়ে গিয়েছে 'নেপালি'। বাড়ির চারপাশ সিসি ক্যামেরায় মোড়া । বাড়ির নীচে রয়েছে একটি গ্রিল কারখানা ৷ বাড়িতে রয়েছে ভাড়াটিয়াও ৷ গত সোমবার রাতে নঈম আনসারির বাড়িতে হানা দেয় কামারহাটি ও খড়দা থানার পুলিশ ৷ সেখান থেকে উদ্ধার হয় স্টেইন গান, পাইপ গান থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত কার্তুজও ।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতের বাড়ি থেকে চারটি দেশি পাইপ গান, চার রাউন্ড 8 এমএম কার্তুজ, পাঁচ রাউন্ড .38 কার্তুজ, তিন রাউন্ড 7.62 এমএম কার্তুজ, এক রাউন্ড .318 নাইট্রো কার্তুজ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে । যে পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে কাউন্সিলর ঘনিষ্ঠ এই তৃণমূল কর্মীর বাড়ি থেকে, তাতে চক্ষু চড়কগাছ দুঁদে তদন্তকারীদেরও । জানা গিয়েছে, দুষ্কৃতীদের আগ্নেয়াস্ত্র ভাড়ায় দিত নঈম আনসারি ৷ অস্ত্র সরবরাহ করতে কয়েকজন সাগরেদও রাখা ছিল । রীতিমতো টিম তৈরি করে এই কারবার চালাত নঈম ৷ কিন্তু, এই অস্ত্র কারবারের খবর কী আগে থেকে পুলিশের কাছে ছিল না ? কী করছিল পুলিশ ? কেনই বা এত দেরিতে খবর পেল ? প্রশ্ন বিরোধীদের ৷

অন্যদিকে, এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষ ও স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সুভাষ দে'র সঙ্গে নঈমের ঘনিষ্ঠতার ছবি এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে রীতিমতো সুর চড়িয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী ৷ ধৃত নঈমকে পুরসভার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সুভাষ দে'র ডান হাত উল্লেখ করে রাজ্য পুলিশের রাজীব কুমারকে এ নিয়ে তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা । পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষকেও তদন্তের আওতায় রাখা উচিত বলে জানিয়েছেন শুভেন্দু ৷
এ নিয়ে নির্মল ঘোষের কোনও প্রতিক্রিয়া না-মিললেও মুখ খুলেছেন স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সুভাষ দে । তাঁর দাবি,"কাউন্সিলর হিসেবে অনেকেই ছবি তোলেন । কে, কী রকম, কার মনে কী আছে সেটা সব সময় বোঝা যায় না। শুভেন্দু অধিকারী জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে থাকেন । তাই, ওনার পক্ষে এসব বোঝা সম্ভব নয় ।"