হাবরা, 8 জুন: স্ত্রীর সঙ্গে 'পরকীয়া', আর তাই বন্ধুর ঘাড়ে ধারাল অস্ত্রের কোপ মারার অভিযোগ এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৷ শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর 24 পরগনার হাবরায় ৷ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত সুশান্ত পাল (47) পলাতক ৷ অন্যদিকে, আক্রান্ত সৌমিত্র সরকার (49) আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৷ তাঁর ঘাড়ে চারটি সেলাই পড়েছে ৷
জানা গিয়েছে, সৌমিত্র সরকার হুগলির শ্রীরামপুরের বাসিন্দা ৷ কর্মসূত্রে উত্তর 24 পরগনার গাইঘাটার বিএম পল্লি এলাকার বাসিন্দা সুশান্ত পালের সঙ্গে কয়েকবছর আগে তাঁর বন্ধুত্ব হয় ৷ আর সেই সুবাদেই সুশান্ত’র বাড়িতে যাতায়াত ছিল তাঁর ৷ কিন্তু, সেই যাতায়াতের মধ্যেই সুশান্তর স্ত্রী দেবিকা পালের সঙ্গে একটি সম্পর্ক তৈরি হয় সৌমিত্রর ৷ আর তারপর নিয়মিত সুশান্তর অনুপস্থিতিতে তাঁর বাড়িতে যাতায়াত করতে থাকেন সৌমিত্র ৷
সৌমিত্র এবং দেবিকার সম্পর্ক নিয়ে এলাকায় কানাঘুষো শুরু হয় ৷ বিষয়টি সুশান্তর কানেও যায় ৷ এরপরেই তিনি দেবিকাকে সতর্ক করেন এবং সৌমিত্রকে তাঁর বাড়িতে আসতে নিষেধ করেন ৷ কিন্তু, গোপনে তাঁদের সম্পর্ক চলতে থাকে বলে অভিযোগ ৷ মাস পাঁচেক আগে এক রাতে দেবিকা ঘর ছাড়েন সৌমিত্রর সঙ্গে ৷ তাঁরা হাবরা পুরসভার 24 নম্বর ওয়ার্ডের হাড়িয়া এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতে শুরু করেন ৷
সম্প্রতি সুশান্ত সেই বাড়ির ঠিকানা জানতে পারেন ৷ এরপর গত সপ্তাহে স্থানীয় লোকজন এবং ক্লাবের সাহায্যে স্ত্রীকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন ৷ তবে, স্ত্রীকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনলেও, তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে সৌমিত্রর পালানোর বিষয়টি মাথায় ঘুরছিল ৷ অভিযোগ, শনিবার রাতে হাবরায় সৌমিত্র সরকারের হাবরার ভাড়া বাড়িতে যান সুশান্ত ৷ সেখানে কেন তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে সৌমিত্র পালিয়েছিল, সে নিয়ে দু’জনের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয় ৷
অভিযোগ, বচসা চলাকালীন সুশান্ত একটি ধারাল অস্ত্র দিয়ে সৌমিত্রের ঘাড়ে আঘাত করেন ৷ তৎক্ষণাৎ রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি ৷ চিৎকার শুনে এলাকার লোকজন সেখানে চলে আসেন ৷ বেগতিক দেখে সুশান্ত সেখান থেকে পালিয়ে যায় ৷ এরপর সৌমিত্রকে উদ্ধার করে প্রথমে হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর, শারীরিক অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় আক্রান্তকে ৷ তাঁর ঘাড়ে মোট চারটি সেলাই পড়েছে ৷ আপাতত স্থিতিশীল রয়েছেন সৌমিত্র ৷
তিনি অভিযোগ করেছেন, "সুশান্ত তাঁর স্ত্রীর উপর অত্যাচার করত ৷ স্বামীর ঘর করবে না-বলে দেবিকা বেরিয়ে আসে ঘর থেকে ৷ এরপর আমার সঙ্গে প্রায় পাঁচ মাস সংসার করে ৷ এটা ও (সুশান্ত) মেনে নিতে পারেনি ৷ সবসময় হুমকি দিত ৷ বলত, তোকে খতম করে দেব ৷ ওর কঠোর শাস্তি চাই ৷"
প্রায়ই একই অভিযোগ করেছেন সৌমিত্রর বন্ধু সঞ্জয় দাস ৷ তিনি বলেন, "সৌমিত্র আমার বাড়িতেই ভাড়া থাকত ৷ সৌমিত্র এখন সুশান্ত'র সবচেয়ে বড় শত্রু ৷ কারণ ওর স্ত্রী'র সঙ্গে সৌমিত্র'র একটি সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ৷ সেটার পিছনে অবশ্য ছিল পারিবারিক বিবাদ ৷ ঘটনার সময়ে আমি বাড়িতে ছিলাম না ৷ সৌমিত্রই আমাকে ফোন করে জানায় যে, ওর উপর প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে সুশান্ত ৷ শুনে তড়িঘড়ি বাড়িতে ফিরে এসে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় সৌমিত্র পড়ে রয়েছে ঘরের মধ্যে ৷ তারপর ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় ৷"
এই ঘটনার পর বেশ কয়েক ঘণ্টা কেটে গেলেও অধরা রয়েছেন অভিযুক্ত সুশান্ত পাল ৷ তাঁর খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছেন বারাসত পুলিশ জেলার সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খাড়িয়া ৷ তিনি বলেন, "পরকীয়া নাকি ঘটনার নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷ ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে ৷"