মেদিনীপুর, 18 এপ্রিল: দু'দিনের জেলা সফরে পশ্চিম মেদিনীপুরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চারিদিকে চলছে এখন জোর প্রস্তুতি ও তৎপরতা ৷ তবে গতকাল (বৃহস্পতিবার) ঝড়-জলে কিছুটা পরিকল্পনায় ব্যাঘাত ঘটলেও দ্রুত পরিস্থিতি সারিয়ে তৈরি হচ্ছে প্রশাসন। শালবনিতে জিন্দাল গোষ্ঠীর তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সেখানে 1600 মেগাওয়াটের পাওয়ার প্ল্যান্টের পাশাপাশি সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথাও রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর।
এবছরের প্রথমের দিকে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে দু'টি 800 মেগাওয়াটের পাওয়ার প্ল্যান্ট গড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন সজ্জন জিন্দাল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, "শালবনিতে 16 হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে দু'টি 800 মেগাওয়াটের পাওয়ার প্ল্যান্ট করা হবে।" শালবনিতে জিন্দালদের সিমেন্ট কারখানা হওয়ার পরও যে বিপুল পরিমাণ জমি পড়ে আছে, সেখানেই এই পাওয়ার প্ল্যান্ট গড়ে উঠবে বলে প্রশাসন এবং JSW কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে। এবার সেই পাওয়ার প্ল্যান্টেরই শিলান্যাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, 2008 সালের 2 নভেম্বর জিন্দালদের প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তবে, ওইদিনই ফেরার পথে তাঁর কনভয়ে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ হয়। এরপর শুরু জঙ্গলমহলে মাওবাদী আন্দোলন। জিন্দালরা ইস্পাত কারখানার পরিকল্পনা বাতিল করেন। তারপর দেড় দশক অতিক্রান্ত। ইস্পাত কারখানার বদলে সিমেন্ট কারখানা গড়ার প্রস্তুতি নেন জিন্দালরা।
2018 সালে সেই কারখানার উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিকে, ইস্পাত কারখানা তৈরি করতে 8 হাজারের বেশি একর জমি জিন্দালদের দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে মাত্র 849 একর জায়গায় সিমেন্ট কারখানা তৈরি হয়েছে। বাকি জমি খালি পড়ে রয়েছে। শালবনি ব্লকের কুলফেনি, জামবেদিয়া, আসনাশুলি, নতুনডিহি, কাশিজোড়া, বর্জু-সহ প্রায় 30টি গ্রামের কয়েকশো জমিদাতা রয়েছেন। তাই এবার তারই উপর গড়ে উঠতে চলছে এই পাওয়ার প্ল্যান্ট।
জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর এই কর্মসূচির তারিখের বিষয়ে এখনও সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে, JSW সিমেন্ট কারখানার HR আধিকারিক দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, "মূলত এদিন মুখ্যমন্ত্রী ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করবেন আর তাতে এই 1600 মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্টে এলাকার প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারে।
যদিও এবিষয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর আসা প্রসঙ্গে আমাদের কাছে তেমন কোনও তথ্য ডিটেইলসে নেই। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জঙ্গলমহলের মানুষকে ভালোবাসেন, রাজ্যের মানুষকে ভালোবাসেন। তাই উন্নয়নের কাজে বারবার দৌড়ে আসেন শুনেছি। তিনি জিন্দালদের একটি অনুষ্ঠানে আসছেন এরই সঙ্গে তিনি প্রশাসনের একটি বৈঠক করবে বলে জানা গিয়েছে।
সূত্রের খবর, আগামী 21 এপ্রিল জিন্দালদের কারখানার শিলান্যাসের পর সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে রাত্রিযাপন করবেন। এর পরের দিন 22 এপ্রিল মেদিনীপুর শহরের প্রদ্যোৎ স্মৃতি সদনে প্রশাসনিক রিভিউ মিটিং এবং সাধারণ মানুষের হাতে বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা তুলে দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী।