পূর্ব বর্ধমান, 23 সেপ্টেম্বর: রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে ফের কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । কেন্দ্রকে কটাক্ষ করে তাঁর বার্তা, "নির্বাচনে যা খরচ করে দলগুলি, তার চার ভাগের এক ভাগ আমরা পেলেই গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব ।"
সোমবার দুপুরে পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসকের কনফারেন্স হলে জেলা প্রশাসনের আধিকারিক ও মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "বন্যার জল সরে গেলে বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম, হুগলি, হাওড়া, নদিয়া, উত্তর 24 পরগনা, দক্ষিণ 24 পরগনা-সহ যে জেলাগুলিতে বন্যার জলে জমি প্লাবিত হওয়ায় শস্য নষ্ট হয়েছে, তাঁদের ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে । তাঁরা যাতে শস্যবিমার টাকা পান সেটা দেখতে বলা হয়েছে । চাষি ভাইদের দুশ্চিন্তা করতে মানা করছি, কারণ আমরা বিনা পয়সায় শস্যবিমার টাকা চাষিদের প্রতি বছর দিয়ে থাকি ।"
পূর্ব বর্ধমানে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পরে ফের এদিন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "বাংলার দুর্ভাগ্য বাংলা এবং অসমে যে পরিমাণ বন্যা হয়, অন্য কোনও রাজ্যে হয় না । কারণ বাংলা নদীমাতৃক । নদী, পুকুর সমুদ্রে ঘেরা আমাদের বাংলার অবস্থানটা ঠিক নৌকার মতো । একটুতেই প্রচুর জল জমে যায় । আর ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলেই আমাদের চিন্তা বেড়ে যায় । নিজেদের বাঁচাতে তারা জল ছেড়ে দেয় । সেই জল বাংলাকে ভাসিয়ে দেয় । দীর্ঘদিন ড্রেজিং না-করার ফলে ফরাক্কার জলে প্লাবিত হয় মালদা, মুর্শিদাবাদ ও বিহারের কিছুটা অংশ । কিন্তু বিহার প্লাবিত হলে তখন তারা বাঁধ কেটে দিয়ে সেই জল বাংলায় ঢুকিয়ে দেয় । গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও ডিভিসি - এই তিনটেই কেন্দ্রের অধীনে আছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা কোনও কাজ না-করার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঘরবাড়ি ডুবে যাচ্ছ । হেক্টরের পর হেক্টর কৃষিজমি ডুবে যাচ্ছে । ডুবে যাচ্ছে সবজির ক্ষেত । নির্বাচনে আমরা বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করি । আমি সব রাজনৈতিক দলকে বলব বড় বড় বিল্ডিং বানিয়ে, নিজেদের মূর্তি বানিয়ে যে টাকাটা আপনারা খরচ করেন, এই টাকার এক চতুর্থাংশ যদি আমরা পাই তাহলে আমরা গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণটা ভালো করে করতে পারি ।"
Today, I chaired an administrative review meeting in Purba Bardhaman to assess the flood situation in the region.
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) September 23, 2024
I have directed all Government officials to be present on the ground, personally evaluating the extent of the damage, and taking immediate steps to alleviate the… pic.twitter.com/MuXrh12vra
মুখ্যমন্ত্রীর মতে, "আগে তো কেউ বন্যা নিয়ে খবরই রাখত না ৷ এখন তো আমরা 24X7 মনিটরিং করি । সমস্ত দফতরের ছুটি বাতিল করা হয়েছে । কারণ একটাই, রাত জেগে সরকারি কর্মচারী, পুলিশ ও আমাদের দলের স্বেচ্ছাসেবীরা পাহারা দিচ্ছে । সমস্ত জায়গায় রিলিফ ক্যাম্প করা হয়েছে । আমরা অনেকগুলো ফ্লাড সেন্টার তৈরি করেছি কিন্তু তাতেও বাঁধ ভাঙছে । জলের প্লাবনে মানুষ সমস্যায় পড়ছে । প্রয়োজনে পুজোতে স্কুল ছুটি পড়লে সেই সব জায়গাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করব ।"
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, "জেলা প্রশাসনকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে ৷ এমনকি যাঁদের বাড়ি নেই সেই তালিকা তৈরি করে তাঁদেরকে তিনটি করে ত্রিপল দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ৷ ডিসেম্বর মাসে আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরি করার জন্য প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া হবে । আসলে ডিভিসি কেন্দ্রের অধীনে, তারা কোনও কাজ না করায় আজ লক্ষ লক্ষ মানুষের ঘর জলের তলায় চলে যাচ্ছে ।"