কলকাতা, 14 এপ্রিল: পয়লা বৈশাখের প্রাকমুহূর্তে কালীঘাট স্কাইওয়াকের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সেই উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে রাজ্যের অশান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বার্তা দেন তিনি ৷ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ধর্ম যার যার নিজের, তবে উৎসব সবার । এই অবস্থায় অনুমতি নিয়ে যে কেউ আন্দোলন করতে পারে । তবে অবশ্যই তা শান্তিপূর্ণ হতে হবে ।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ওয়াকফ আইনে যে সংশোধনী আনা হয়েছে, তার প্রতিবাদে বিভিন্ন জায়গায় মিছিল-মিটিং হচ্ছে ৷ সেই প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকেই মুর্শিদাবাদের সুতি, ধুলিয়ান-সহ বেশ কিছু জায়গায় অশান্তি ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ ৷ পরিস্থিতি নিয়েন্ত্রণে সচেষ্ট রাজ্য পুলিশ ৷ পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনীও বিভিন্ন এলাকায় টহল দিচ্ছে ৷

গত কয়েকদিন ধরে এই পরিস্থিতি চললেও প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে দেখা যায়নি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৷ তিনি শুধু গত শনিবার সোশাল মিডিয়ায় একটি বার্তা দিয়েছিলেন ৷ সেই বার্তা সকলকে শান্তি বজায় রাখার অনুরোধ করেছিলেন ৷ ফলে সোমবার কালীঘাট স্কাইওয়াকের উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে তিনি কী বলেন, সেটাই দেখার ছিল ৷
যথারীতি এই নিয়ে মুখ খুলেছেন৷ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কোনও আপত্তি নেই বলেও জানিয়েছেন ৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “গণতান্ত্রিক দেশে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনের অধিকার সকলের আছে । তবে তা করতে হবে অনুমতি নিয়ে । এবিসিডি যেই হোন, আইন মেনে চলা সকলেরই দায়িত্ব ।”

পাশাপাশি নিশানা করেছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি, বিশেষ করে বিধানসভার প্রধান বিরোধী দল বিজেপিকে ৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার । আমি অন্য কোনও অনুষ্ঠানে গেলে অনেকে আমার টাইটেলটাই (পদবি) পাল্টে দেন । ধর্ম নিয়ে অধার্মিক খেলা খেলতে নেই । ধর্ম মানে সম্প্রীতি, একতা । তাই কিসের লড়াই, কিসের হিংসা ?” কালীঘাট থেকে রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে শান্তির বার্তাও দেন তিনি । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাংলার মাটি শান্তির মাটি । এই মাটিকে ভালোবাসুন । শান্তি বজায় রাখুন । কেউ কারও প্ররোচনায় পা দেবেন না । আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না ।’’
এদিকে যে স্কাইওয়াকের তিনি উদ্বোধন করলেন, তা চালু হওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই অপেক্ষা করছেন ভক্তরা ৷ 450 মিটার দীর্ঘ এবং 10.4 মিটার প্রস্থের এই আধুনিক স্কাইওয়াকে রয়েছে চলমান সিঁড়ি, লিফট, আধা-গোলাকার পলিকার্বনেট ছাউনি, এবং মন্দিরমুখী পথ । এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 7 মিটার উঁচুতে এবং সর্বোচ্চ উচ্চতা 16.5 মিটার ।

স্কাইওয়াক থেকে হকারদের জন্য তৈরি করা চারতলা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত মলে সরাসরি প্রবেশপথ রাখা হয়েছে । নিচের পথ গাড়ি চলাচলের উপযোগী করে হকার মুক্ত রাখা হয়েছে । 2021 সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের কাজ শেষ হল 2025-এর এপ্রিল মাসে । প্রাথমিক বাজেট ছিল 70 কোটি, যা পরে 82 কোটিতে পৌঁছেছে অতিরিক্ত কাজ ও জিএসটির কারণে ।
এই স্কাইওয়াক নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, “দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াক করার সময় অনেক আলোচনার মাধ্যমে হকারদের স্থানান্তর করা হয়েছিল । এখানেও আমরা হকারদের সম্মান রেখেই কাজ করেছি । সরকার 99.99 শতাংশ খরচ করেছে । রিলায়েন্স একটা সামান্য কাজ করতে চেয়েছিল, সেটাই শুধু অনুমোদন পেয়েছে ।”
এদিন উদ্বোধনী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, মেয়র ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, স্নেহাশিস চক্রবর্তী, সাংসদ মালা রায়, সৌগত রায়, অভিনেতা দেব, জুন মালিয়া, শিল্পপতি হর্ষবর্ধন নেওটিয়া-সহ বিশিষ্টজনেরা ।