কলকাতা, 7 এপ্রিল: এসএসসি সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায়ের দিনেই প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় - "শুধু বাংলাকেই কি টার্গেট করা হচ্ছে ?" সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে চাকরিহারাদের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকেও ফের সেই প্রশ্ন তুললেন তিনি ৷ টেনে আনলেন ব্যাপম ও নিট কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ ৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা বা মধ্যপ্রদেশে প্রবেশিকা দুর্নীতি কিংবা নিট পরীক্ষা নিয়ে জোর বিতর্ক হলেও, সেখানে শিক্ষকদের চাকরি যায়নি । অথচ বাংলায় হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী চাকরি হারাচ্ছেন, বিচারপর্ব শেষ না-হওয়া সত্ত্বেও । মমতার অভিযোগ, "এটা কেবল দুর্নীতি নয়, একেবারে পরিকল্পিত চক্রান্ত ৷ বাংলার শিক্ষাব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার গভীর ষড়যন্ত্র ।"

মুখ্যমন্ত্রীর মতে, "যেখানে তদন্ত এখনও শেষ হয়নি, সেখানে এতজনকে একসঙ্গে বরখাস্ত করা ন্যায়বিচার নয় । কোর্ট নির্দেশ দিলেও, রাজ্যকে সত্য যাচাইয়ের সুযোগই দেওয়া হয়নি । কে ঠিক, কে ভুল - সেটা জানারই সুযোগ নেই । অথচ প্রতিটি চাকরি মানে একটি জীবন, একটি পরিবার, একটি স্বপ্ন । আর সেগুলি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে বিনা বিচারে ।"
তাঁর বক্তব্য, "আমি কারওকে অন্যায় করে চাকরি দিইনি, আবার কারও থেকে জেনেশুনে চাকরি কেড়েও নিইনি । কেউ ভুল করে থাকলে, তা সংশোধনের সুযোগ থাকা উচিত ।"
মুখ্যমন্ত্রী জানান, যোগ্য-অযোগ্যদের নিয়ে রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে ‘স্পষ্টীকরণ’ চাইবে । তার আগে কারওকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হচ্ছে না । তিনি আশ্বাস দেন, "আপনাদের মাথার উপর আমরা আছি । যতদিন আমি আছি, বাংলার শিক্ষা ব্যবস্থা কেউ ধ্বংস করতে পারবে না ।"

রাজনৈতিক মহলের মতে, মুখ্যমন্ত্রী এই বক্তব্যের মাধ্যমে একদিকে চাকরি হারার প্রতি তাঁর সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন, তেমনই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে 'ডবল স্ট্যান্ডার্ড' রাজনীতির অভিযোগ করেছেন ৷ ত্রিপুরা, মধ্যপ্রদেশ কিংবা নিট কেলেঙ্কারিতে যখন এমন হস্তক্ষেপ হয়নি, তখন কেন একমাত্র বাংলায়ই এমন কঠোর পদক্ষেপ করা হল, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি ৷
প্রসঙ্গত, সর্বভারতীয় ডাক্তারি প্রবেশিকা নিট পরীক্ষায় একাধিক অনিয়মের অভিযোগ ঘিরে সারা দেশে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল । পরীক্ষার্থীদের নম্বর বেশি দিয়ে মেধাতালিকা প্রকাশ, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয় । পরে সেই দায়ে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির শীর্ষ কর্তার বদলি ও পুনরায় তালিকা প্রকাশ করতে বাধ্য হয় কেন্দ্র ।
আরও আগে, 2013-15 সালে মধ্যপ্রদেশের ‘ব্যাপম কেলেঙ্কারি’তে প্রবেশিকা পরীক্ষায় ভুয়ো পরীক্ষার্থী, প্রশ্নপত্র ফাঁস-সহ একাধিক অভিযোগ সামনে আসে । গ্রেফতার হন বহু উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক নেতা ও আমলা । তবুও সেসব রাজ্যে এই বিপুল সংখ্যক চাকরি বাতিল হয়নি ।
তাই মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, "বাংলায়ই বা এতজন কেন চাকরি হারাচ্ছেন ? কারণ এ রাজ্য বিরোধী শিবিরে ? নাকি বাঙালি শিক্ষার্থীদের মেধাই বড় সমস্যা ?”