মালদা, 4 জুন: একজন 31 বছর বয়সি শক্তসমর্থ যুবককে কী মহিলা একা খুন করতে পারেন ? বিষয়টি ভাবাচ্ছে পুলিশকে ৷ প্রাথমিকভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, শুধু অভিযুক্ত মহিলা নন, মালদার রতুয়া 2 নম্বর ব্লকের ঠিকাদার ব্য়বসায়ী সাদ্দাম নাদাপকে খুনের ঘটনায় আরও কেউ বা কারা যুক্ত রয়েছে ৷ মহিলা কোনও সুপারি কিলারকে নিয়োগ করেছিলেন কি না, সেটাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ ৷ এই নিয়ে তদন্ত করছে দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন থানার পুলিশও ৷
ভাসুরপোকে খুনের পর, দেহ দু’টুকরো করে চিলেকোঠার দেওয়ালে গেঁথে দেন কাকিমা ! মালদার ঠিকা ব্যবসায়ীর অপহরণের তদন্তে নেমে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পুলিশ ৷ সোমবার দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন এলাকায় অভিযুক্তের বাপের বাড়ি থেকে মৃত ব্যবসায়ী সাদ্দাম নাদাপের দেহ উদ্ধার করা হয় ৷ ঘটনাটি সামনে আসতেই দফায় দফায় জেরা করা হচ্ছে ধৃত মহিলাকে ৷
দূর সম্পর্কের কাকিমা হলেও নিহত সাদ্দামের সঙ্গে অভিযুক্তের ঘনিষ্ঠতা ছিল, সেই কথা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে মালদা জেলা পুলিশ ৷ পুলিশকে মহিলা জানিয়েছেন, বিভিন্নভাবে তাঁকে ব্ল্যাকমেইল করতেন সাদ্দাম ৷ একজন মহিলার উপর যতরকম অত্যাচার করা যায়, তাঁর উপর তা করেছিলেন তিনি ৷ সেকারণে নিজেই পরিকল্পনা করে সাদ্দামকে নিয়ে যান বাপের বাড়ি, অর্থাৎ তপন থানার সিহুর গ্রামে ৷

মালদা শহর থেকে সাদ্দাম নিজের স্কুটারে অভিযুক্তের বাপের বাড়ি যান ৷ মহিলার দাবি, মাঝরাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাদ্দামকে খুন করেন ৷ প্রথমে মাথায় অস্ত্রের কোপ বসান ৷ তারপর তাঁর গলা কেটে দেন ৷ এরপর মৃত ব্যবসায়ীর দেহ বাড়ির চিলেকোঠার ঘরের দেওয়ালে ভরে বাইরে থেকে ইট গেঁথে দেন বলে জানিয়েছেন অভিযুক্ত মহিলা ৷
পুলিশের দাবি, অভিযুক্ত যতটা সাধারণভাবে ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন, বাস্তবে তার একার পক্ষে এই কাজ করা ভীষণ কঠিন ৷ আরও বড় বিষয়, অভিযুক্তের স্কুল শিক্ষক স্বামী রহমান নাদাপ পুলিশকে জানাম, 17 মে তাঁর স্ত্রী বাপের বাড়ি যান ৷ 20 মে তিনি স্ত্রীকে বাড়ি নিয়ে আসেন ৷ কিন্তু, বাড়ি ফেরার পর থেকে অভিযুক্ত মহিলা সবসময় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে থাকত ৷ এই নিয়ে বারবার তাকে প্রশ্ন করা হলেও কোনও জবাব পাওয়া যায়নি ৷

রহমানের বক্তব্যে তদন্তকারীদের অনুমান, মহিলা একা এই ঘটনা ঘটাননি ৷ মৃতদেহের সঙ্গে উদ্ধার হওয়া ধারালো অস্ত্রটি দেখে তাঁদের অনুমান, অস্ত্রটি কসাইখানায় মাংস কাটায় ব্যবহার করা হয় ৷ অভিযুক্ত মহিলা সেই অস্ত্র কোথায় পেলেন, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ তাছাড়া সেদিন যে স্কুটারে সাদ্দাম মহিলার বাপের বাড়ি গিয়েছিলেন, সেই স্কুটারটির খোঁজ পাওয়া যায়নি ৷ সেটি কোথায় গেল, তদন্ত করে সেটাও জানার চেষ্টা করছে পুলিশ ৷
তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা জানাচ্ছেন, তদন্তে সবাইকেই স্ক্যানারে রাখা হয়েছে ৷ বেশ কয়েকজনের ফোন কল ডিটেইলস এবং সোশাল মিডিয়া খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷ তবে, মঙ্গলবার বিকেল 4টের পর দেহ মালদা পৌঁছনোয় আর ময়নাতদন্ত করা যায়নি ৷ বুধবার মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সাদ্দামের দেহের ময়নাতদন্ত করা হবে ৷ রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ ৷ পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, "গোটা ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে ৷ তদন্তে সবকিছুই খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷"
মঙ্গলবারও রতুয়া 2 নম্বর ব্লকের পুখুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কোকলামারি গ্রামে সাদ্দামের বাড়িতে শোকের আবহ ৷ তাঁর দাদা মিঠুন নাদাপ বলেন, "শুধুমাত্র টাকার জন্য আমার ভাইটাকে খুন হতে হয়েছে ৷ ভাই অনেক টাকা নিয়ে কাজ করতেন ৷ ওঁর নিজেরই দেড় কোটি টাকা ব্যবসায় ব্যবহার করেছিলেন ৷ ওঁকে খুন করার জন্য অনেকদিন ধরে পরিকল্পনা করা হয়েছে ৷ 25 লক্ষ টাকা সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন ৷ ভাইকে খুনের পিছনে অনেকে জড়িত রয়েছে ৷ আরও যদি টাকা লাগত তাহলে ওঁরা তো আমাদের বলতে পারত ! আমরা চার ভাই ৷ প্রয়োজনে জমি-বাড়ি বিক্রি করে টাকা দিতাম ৷ আমরা চাই, এই ঘটনায় যারা জড়িত আছে, তাদের কঠোর শাস্তি হোক ৷"
নিহত সাদ্দামের স্ত্রী নাসরিন খাতুনও মনে করছেন, এই ঘটনার পিছনে অনেকে জড়িত রয়েছে ৷ তিনি বলেন, "ওদের সঙ্গে স্বামীর ঝগড়া ছিল ৷ কিন্তু তাঁকে খুন করার জন্য কীভাবে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল সেটা জানি না ৷ তবে টাকার জন্যই অভিযুক্ত আর তার স্বামী রহমান নাদাপ আমার স্বামীকে মেরে ফেলল ৷ এর মধ্যে রহমানের শ্বশুর-শাশুড়ি আর সরাফ নাদাপও যুক্ত রয়েছে ৷ অভিযুক্ত মহিলার বন্ধুও এই ঘটনায় জড়িত ৷ ওরা আমাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় হয় ৷ আমি ওদের সবার শাস্তি চাই ৷"