কলকাতা, 28 মার্চ: মালদার মোথাবাড়ির ঘটনায় জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের রিপোর্ট তলব করেছে কলকাতা হাইকোর্ট । বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি স্মিতা দাস দে-র ডিভিশন বেঞ্চে আগামী বৃহস্পতিবার এই রিপোর্ট দিতে হবে ।
মালদার মোথাবাড়ির ঘটনায় আইনজীবী ও বিজেপি নেতা কৌস্তভ বাগচী কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন ৷ আবেদন জানান, ওই এলাকায় শান্তি বজায় রাখতে প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় আধা-সামরিক বাহিনী মোয়াতেন করা হোক । একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি ওই আইনজীবীর ।
উল্লেখ্য, এদিন সকালেই আইনজীবী ও বিজেপি নেতা তরুণজ্যোতি তেওয়ারি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এই নিয়ে ৷ তিনি জানান মালদার মোথাবাড়িতে হিন্দুদের উপর আক্রমণ করা হয়েছে । এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে নির্দেশ দিক আদালত । তিনি এনআইএ তদন্তেরও দাবি জানান ৷
আদালত সূত্রেই জানা যাচ্ছে, ওই এলাকায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে ইতিমধ্যেই এলাকায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী টহল দিচ্ছে । ফলে এলাকায় যে উত্তেজনার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তা এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে । তবে ঘটনাটি ঠিক কী, কীভাবে তা হয়েছিল, পুলিশ-প্রশাসন কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা জানতে চায় আদালত ৷ সেই কারণেই রিপোর্ট তলব করা হয়েছে মালদার জেলাশাসক ও জেলার পুলিশ সুপারের ৷
এই নিয়ে আইনজীবী তথা বিজেপি নেতা তরুণজ্যোতি তেওয়ারি বলেন, ‘‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে মোথাবাড়িতে কী হয়েছে, তা সারা পশ্চিমবঙ্গ দেখেছে, ভারত দেখেছে ৷ ...টার্গেট করে হিন্দুদের দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে ৷ ... কোন প্রশাসন চলছে ? যেখানে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে, যারা ভাঙছে, তারা আনন্দের সঙ্গে বলছে পুলিশ আমাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেবে না, পুলিশ গুলি চালাবে না ৷ একটা অদ্ভুত পরিস্থিতি চলছে পশ্চিমবঙ্গে ৷’’
তরুণজ্যোতি আরও বলেন, ‘‘মানছি পশ্চিমবঙ্গে 30 শতাংশের সরকার চলছে ৷ তা বলে 70 শতাংশের কি কোনও দাম নেই ? কলকাতা হাইকোর্টে এসেছিলাম আজ এনআইএ তদন্ত ও কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর মোতায়েন চেয়ে এবং ওখানকার মানুষের জীবনের সুরক্ষার দাবি নিয়ে ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বিষয়টি শুনেছে ৷ আজ প্রাথমিকভাবে আদালত সেখানকার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার রিপোর্ট জমা দিতে বলেছে ৷ যাতে সেখানে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসে, সেটা সুনিশ্চিত করতে বলেছে আদালত ৷ প্রয়োজনীয় পুলিশি নিরাপত্তাও আদালত দিতে বলেছে ৷ আগামী বৃহস্পতিবার মামলার শুনানি হবে ৷’’
এই মামলা নিয়ে আইনজীবী সূর্যনীল দাস বলেন, ‘‘সবাই জানেন যে গতকাল (বৃহস্পতিবার) মালদায় সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটেছে ৷ ... এই ঘটনা নিয়ে আমরা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলাম ৷ জরুরি ভিত্তিতে আজই (শুক্রবার) মামলার শুনানি করতে আবেদন করা হয় ৷ আমরা কৃতজ্ঞ যে আদালত আজই মামলার শুনানি করেছে ৷ আদালত সরকারের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছে ৷ কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা জানতে চেয়েছে ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘যেখানে এই হিংসার ঘটনা ঘটেছে, তা বাংলাদেশ সীমান্তের 50 কিলোমিটারের মধ্যে পড়ছে ৷ তাই এই এলাকা বিএসএফের এক্তিয়ারভুক্ত ৷ সেই কারণে সেখানে বিএসএফ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে ৷ আগামী বৃহস্পতিবার ফের শুনানি হবে ৷ সেদিন রাজ্যের তরফে অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট (কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেই রিপোর্ট) পেশ করা হবে ৷’’ ওই আইনজীবীর আরও বক্তব্য, পুরো ঘটনাটি ফেসবুকে লাইভ করা হয় ৷ যারা হামলা করেছে, তারাই এই ফেসবুক লাইভ করে ৷
প্রসঙ্গত, মালদার মোথাবাড়িতে দু’দিন আগে একটি মিছিল হয় ৷ সেই মিছিলে ডিজে বাজানোর অভিযোগকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায় ৷ তার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার এলাকায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ ৷ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরই এলাকায় বিএসএফ টহল দিতে শুরু করে ৷ শুক্রবার বিএসএফ জওয়ানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৷
এই নিয়ে এদিন মালদা জেলা পুলিশের তরফেও বিবৃতি দেওয়া হয়েছে সংবাদমাধ্যমের কাছে ৷ জানানো হয়েছে, উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও অভিযান চালানোর পাশাপাশি, সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে মোট 25টি পুলিশ পিকেট স্থাপন করা হয়েছে, যাতে আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকে । এছাড়া, সাতটি মোবাইল টহল ইউনিট সক্রিয় রয়েছে, যাতে যেকোনও অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে দ্রুত পদক্ষেপ করা যায় ৷
পুলিশের তরফে আরও জানানো হয়েছে যে জেলা পুলিশের উপস্থিতি আরও শক্তিশালী করতে অন্যান্য ইউনিট থেকেও বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে । সব সময় টহল চলছে ও কোথাও কোনও অশান্তির খবর বা সম্ভাবনা পেলেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে । অতিরিক্ত ও বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে ৷ তবে জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়নি বা চাওয়াও হয়নি ।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত, স্বতঃপ্রণোদিতভাবে ও জনসাধারণের অভিযোগের ভিত্তিতে মোট ছ’টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং 34 জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে । পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ও এলাকায় কঠোর পুলিশি নজরদারি চলছে । সকলকে শান্তি বজায় রাখার অনুরোধ করেছে পুলিশ ৷ গুজবের ফাঁদে পা না দিতেও সতর্ক করা হয়েছে জেলাবাসীকে ৷