আসানসোল, 24 মার্চ: প্রয়াগরাজে কুম্ভ স্নান করতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল পশ্চিম বর্ধমানের জামুড়িয়ার বাসিন্দা বিনোদ রুইদাসের । উত্তরপ্রদেশ সরকার সেই ঘটনার পর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল 25 লক্ষ টাকা সাহায্য দেওয়া হবে । কিন্তু বিনোদের দেহের সঙ্গে আসেনি কোনও ডেথ সার্টিফিকেট বা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট । তাই ক্ষতিপূরণ নিয়ে সন্দিহান ছিল পরিবার । এবার হঠাৎই বিনোদের পরিবারকে নগদ 5 লক্ষ টাকা নিয়ে ব্যাঙ্কে জমা করতে আসতে দেখা গেল । ব্যাঙ্কেও হুলস্থুল । এত টাকা এল কোথা থেকে ? বিনোদ রুইদাসের পরিবারের দাবি, উত্তরপ্রদেশের পুলিশ এই টাকা নগদেই দিয়ে গিয়েছে ক্ষতিপূরণের প্রথম কিস্তি হিসেবে ।
গত 31 জানুয়ারি জামুড়িয়ার কেন্দা পুলিশ ফাঁড়িতে প্রয়াগরাজ থেকে একটি মৃতদেহ অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে আসে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ । দেহটি ছিল জামুড়িয়ার কেন্দা এলাকার বাসিন্দা বিনোদ রুইদাসের । মৃতদেহের সঙ্গে ছিল না কোনও ডেথ সার্টিফিকেট বা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট । উত্তরপ্রদেশ পুলিশ ওই ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ না জানালেও মৃতদেহের সঙ্গে থাকা তাঁর শ্যালক জানান, বিনোদ রুইদাস প্রয়াগরাজে কুম্ভ স্নানে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন । কিন্তু মৃতদেহের সঙ্গে আসেনি কোনও নথি । তাই মৃত্যুর সঠিক কারণ কী, তা নিয়ে সন্দিহান ছিল এই রাজ্যেরও পুলিশ ।
অন্যদিকে যোগী সরকার ঘোষণা করেছিল পদপিষ্টে মৃতদের পরিবারকে 25 লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে । কিন্তু যেহেতু বিনোদ রুইদাসের পরিবারের কাছে কোনও নথি ছিল না, তাই আর্থিক সাহায্যের আশাও তারা ছেড়ে দিয়েছিল । কিন্তু গত বুধবার রাতে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের একটি দল আসে জামুড়িয়ার কেন্দা এলাকায় বিনোদ রুইদাসের বাড়ি । তারা নগদ 5 লক্ষ টাকা পরিবারের হাতে তুলে দেয় একটি খামে করে । পাশাপাশি একটি সাদা কাগজে লিখিয়েও নেয় ।

বিনোদ রুইদাসের স্ত্রী শর্মিলা রুইদাস বলেন, "ওরা এসে জানায় এটা প্রথম কিস্তির টাকা । পাঁচ কিস্তিতে 25 লক্ষ টাকা আপনাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে । কিন্তু কোনও প্রমাণপত্র আমাদেরকে দেয়নি । সরকারি টাকা এভাবে কি দেওয়া হয় ?"
শর্মিলা রুইদাসের মনে এই প্রশ্ন আসার পর পরের দিন ব্যাঙ্কে গিয়ে সেই টাকা জমা করতে গিয়ে তাঁরা বিপাকে পড়েন । ব্যাঙ্ক আধিকারিকদের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয় এই টাকা তাঁরা কোথায় পেয়েছেন । তাঁরা জানান, মৃত বিনোদ রুইদাসের ক্ষতিপূরণ হিসেবে এই টাকা উত্তরপ্রদেশ সরকার তাঁদেরকে দিয়েছে । কিন্তু ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তা মানতে নারাজ । কারণ, সরকারি টাকা এভাবে আসে না ৷ সরকারি টাকা হয় ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার হবে কিংবা তাদেরকে সরকারি ভাবে চেক দেওয়া হবে । এইভাবে খামে ভরে নগদ টাকা কোনও সরকারি ক্ষতিপূরণ হয় না ।

পরে প্রতিবেশী ও এলাকাবাসীদের সহযোগিতায় প্রথমবারের এই পাঁচ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক জমা নিয়েছে । কিন্তু আগামিদিনে এইভাবে নথি ছাড়া নগদ টাকায় ক্ষতিপূরণ এলে ব্যাঙ্ক কিন্তু স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে নথি ছাড়া এইরকম ভাবে ক্ষতিপূরণের টাকা জমা করা যাবে না ।

মৃত বিনোদ রুইদাসের স্ত্রী শর্মিলা রুইদাস বলেন, "এখনও পর্যন্ত আমরা কোনও ডেথ সার্টিফিকেটও পাইনি । ফলে বিমার টাকা থেকে শুরু করে ছাত্র-ছাত্রীদের অন্যান্য স্কুল কলেজের নথি, সব জায়গায় কাগজপত্র আটকে রয়েছে । তাই টাকা পাঠানোর আগে উত্তর প্রদেশ সরকার আগে ডেথ সার্টিফিকেট পাঠাক ।’’
এদিকে এই নিয়ে বহুবার জিজ্ঞাসা করা হলেও উত্তরপ্রদেশ সরকারের তরফে কেউ মুখ খুলতে চাননি এই বিষয়ে ৷