কলকাতা, 30 এপ্রিল: মেছুয়া ফল বাজারে হোটেলে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সিট গঠন করল লালবাজার ৷ এই ঘটনায় ইতিমধ্যে এফআইআর দায়ের করেছেন তদন্তকারীরা ৷ সেই সঙ্গে হোটেলের ম্যানেজারকে আটক করা হয়েছে ৷ লালবাজার সূত্রে খবর, হোটেলের মোট তিনজন মালিক রয়েছেন ৷ তাঁরা ঘটনার পর থেকে পলাতক বলে অভিযোগ ৷ তদন্তকারীরা তাঁদের খোঁজ চালাচ্ছেন ৷
মঙ্গলবার সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ বড়বাজারের মেছুয়া ফল বাজারে অবস্থিত একটি হোটেলের দোতলায় আগুন লাগে ৷ দ্রুত সেই আগুন হোটেলের বাকি তলগুলিতেও ছড়িয়ে পড়ে ৷ যে ঘটনায় বিষাক্ত ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে দুই শিশু-সহ 14 জনের মৃত্যু হয়েছে ৷ মোট 13 জন আহত হন ৷ যাঁদের মধ্যে 12 জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয় ৷ আরেকজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৷
এই ঘটনায় হোটেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে ৷ এমনকি হোটেলের ইমার্জেন্সি এক্সিটও ঠিকঠাক ছিল না-বলে অভিযোগ ৷ আর সেই সবের তদন্তের জন্য লালবাজারের তরফে একটি সিট গঠন করা হয়েছে ৷ যেখানে গোয়েন্দা বিভাগের পদস্থ আধিকারিক-সহ কলকাতা পুলিশের সাইন্টিফিক উইং এবং হোমিসাইড বিভাগের দু’জন শীর্ষ আধিকারিক রয়েছেন ৷
লালবাজার সূত্রে খবর, হোটেলের ম্যানেজারকে আটক করা হয়েছে ইতিমধ্যেই ৷ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন সিটের আধিকারিকরা ৷ তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে হোটেলের যে তিনজন মালিক রয়েছেন, তাঁরা বর্তমানে কোথায় রয়েছেন, তাঁদের বাড়ির ঠিকানা কী, তাঁদের সঙ্গে ভিনরাজ্যের কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না, এমন নানা তথ্য জানতে চাইছেন তদন্তকারীরা ৷
সূত্রের খবর, অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে তিনজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না ৷ আর সবচেয়ে বড় বিষয় হল, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সময় হোটেলে তিনজনের মধ্যে এক মালিক উপস্থিত ছিলেন ৷ কিন্তু, রাতে তাঁর সঙ্গে পুলিশ যোগাযোগ করতে চাইলে, ফোন ধরেননি তিনি ৷
আর বুধবার সকাল থেকে ওই মালিকের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না ৷ এমনকি তাঁর ফোন বন্ধ বলে অভিযোগ ৷ তাঁরা গা-ঢাকা দিয়ে থাকতে পারেন বলে তদন্তকারীদের অনুমান ৷ ফলে তাঁদের হদিশ পাওয়ার জন্যই সংশ্লিষ্ট হোটেলের ম্যানেজারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ৷
এই বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন, "ইতিমধ্যেই এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আমরা গাফিলতির অভিযোগ এনেছি এবং জোড়াসাঁকো থানায় একটি প্রাথমিক এফআইআর করেছি ৷"
ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন কলকাতা পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা এবং হোমিসাইড বিভাগের গোয়েন্দারা ৷ কলকাতা পুলিশের সাইন্টিফিক উইংয়ের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করবেন ৷ সেগুলি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে ৷
তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, হোটেলটি পুরোপুরি বেআইনিভাবে চালানো হচ্ছিল ৷ সেখানে অগ্নিনির্বাপনের কোনও ব্যবস্থা ছিল না-বলে অভিযোগ ৷ এমনকি কোনও বিপর্যয় ঘটলে হোটেলের আবাসিকদের কোন পথে সুরক্ষিতভাবে বের করা যাবে, তার বন্দোবস্তও করা হয়নি ৷
তদন্তকারীদের অনুমান, এক্ষেত্রে হোটেলের মালিকদের চূড়ান্ত গাফিলতি রয়েছে ৷ কীভাবে গোটা ঘটনাটি ঘটল এবং হোটেল ও রেস্তোরাঁ চালানোর অনুমতি কারা দিল, আদেও কোনও অনুমতি ছিল কি না, সেই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখছে লালবাজারে বিশেষ তদন্তকারী দল ৷ এর সঙ্গেই আগুন কীভাবে লেগেছিল, তার তদন্ত আলাদাভাবে দমকল বিভাগ করছে ৷