কলকাতা, ২৬ এপ্রিল: কখনও নাম করে আইনজীবী আর সিপিআইএম নেতা, কখনও নাম না করে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ৷ শনিবার প্রত্যেককেই নিশানা করলেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ ৷ এসএলএসটি প্রার্থীদের সমর্থনে সংবাদমাধ্যমকে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে এদিন কার্যত তোপ দেগেছেন কুণাল ৷ তিনি কর্মশিক্ষা ও শারীরশিক্ষা বিষয়ের প্রার্থীদের সমর্থনে তাঁদের নিয়োগে স্টে অর্ডার তুলে দ্রুত নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন ৷
তাঁর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী এই প্রার্থীদের সমর্থনে রেকমেন্ডেশন লেটার দিয়েছেন ৷ কিন্তু সিপিআইএমের উকিলদের জন্য এই প্রার্থীদের নিয়োগ করা যাচ্ছে না ৷ এদিন কুণাল এসএলএসটি প্রার্থীদের সঙ্গে দেখাও করেন ৷ তাঁদের পুনর্বহালে যাবতীয় সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন ৷
কুণাল এদিন বলেন, “শারীরশিক্ষা ও কর্মশিক্ষা বিষয়ে যাঁরা চাকরিপ্রার্থী, তাঁদের কেন্দ্র করে গতকাল কলকাতা হাইকোর্টে একটি ঘটনা ঘটেছে ৷ আজ তাঁদের একটি প্রতিনিধি দল আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন ৷ তাঁদের সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে ৷ শারীরশিক্ষা এবং কর্মশিক্ষা, এই দু’টি বিষয়ে চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্টের যে স্টে অর্ডার রয়েছে, সেটা অবিলম্বে তুলে দিয়ে এঁদের নিয়োগ করতে দেওয়া প্রয়োজন ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এঁরা সবাই যোগ্য৷ এঁদের বিরুদ্ধে সিবিআই-এরও কোনও বিরূপ মন্তব্য নেই ৷ কোনও অভিযোগ নেই ৷ এঁদের দাবিতে সাড়া দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রেকমেন্ডশন লেটার পর্যন্ত শিক্ষা দফতর দিয়ে দিয়েছে ৷ অর্থাৎ তাঁরা জানেন, কে কোন স্কুলে যোগ দিতে যাচ্ছেন ৷”
এরপরেই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ও সিপিআইএমর বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হয়ে ওঠেন তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ৷ তাঁর বক্তব্য, “সবকিছু ঠিক থাকলেও সিপিআইএমের উকিলরা চক্রান্ত করে জটিলতা তৈরি করে এঁদের চরম বিপদের মধ্যে ফেলেছেন ৷ এই স্থগিতাদেশ দীর্ঘদিন ধরে চলছে ৷ এঁরা আইনজীবীদের কাছে যাচ্ছেন ৷ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি যখন যা চাইছেন, সব দেওয়া হচ্ছে ৷ রাজ্য সরকারের তরফেও দেওয়া হয়েছে ৷ একেকদিন একেকটি বিষয় এসে হাজির হচ্ছে ৷ গতকাল আবার সিপিআইএমের তরফে তাঁদের আইনজীবীরা নানা ফ্যাকরা তুলেছেন ৷ কেন জানি না, হাইকোর্টের বিচারপতি সিপিআইএমের কোনও কোনও আইনজীবীকে দেখলে তাঁদের একটু পছন্দ করেন কি করেন না...৷’’
কুণাল আরও বলেন, ‘‘অভিজিৎ গঙ্গ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে দেখেছিলাম, ভগবান বলা হচ্ছিল তাঁদের ৷ এখন তিনি সাংসদ ৷ ফলে কে কখন কোথায় আছেন, বোঝা খুব মুশকিল ৷ গতকাল হাইকোর্টে এই চাকরিপ্রার্থীরা যন্ত্রণায় কোনও বিক্ষোভ দেখিয়ে ফেলেছেন ৷ কিন্তু সেখানে সিপিআইএমের কিছু আইনজীবী যে গুন্ডামি করলেন, যে ভাষা ব্যবহার করলেন, তার তীব্র নিন্দা করছি ৷ কাল কা যোগী, নাম ঠিকানা পরিবর্তনের উকিল, চামচাবাজি করে থাকে, সে বলছে, তারা ক্ষমতায় এলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলায় থাকতে দেব না ৷ তৃণমূল এখন শুধু রবীন্দ্র সংগীত শুনিয়েছে ৷ কিন্তু তৃণমূল যদি আজ মনে করে তোমায় পাড়ায় থাকতে দেবে না, তুমি কোথায় যাবে ? এরা পাড়ার গুন্ডা ৷”
তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্রের বক্তব্য, “এঁরা যখন ধর্নায় বসেছিলেন, যোগ্য চাকরিপ্রার্থী রাজু দাসের পাশে মহম্মদ সেলিম কি করছিলেন ? তখন বলছিলেন যোগ্যদের চাকরি দিতে হবে৷ আর এখন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এঁদের অযোগ্য বলে চাকরি আটকাচ্ছেন ? সুজন চক্রবর্তী বসে ছিলেন এঁদের ধরনায় ৷ 2021 সালের 6 জানুয়ারি এই সুজন চক্রবর্তী এঁদের চাকরির জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন ৷ আর আজ সিপিআইএমই এঁদের চাকরিতে বাধা দিচ্ছে ৷ কতটা ধান্দাবাজ, দ্বিচারী হলে এমনটা হয় !”
কুণালের বক্তব্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসএলএসটি প্রার্থীরাও অভিযোগ করেন, সিপিআইএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং ফিরদৌস শামিম তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন ৷ 2019 সালে বিকাশরঞ্জন তাঁদের পক্ষে মামলা লড়েছিলেন ৷ এখন তাঁদের বিপক্ষে মামলা লড়ছেন ৷ তাহলে 2019 সালে ভুল ছিল না, এখন ভুল ? বিচারপতির কাছে তাঁদের প্রশ্ন, যে মামলা একবার খারিজ হয়ে গিয়েছে, সেই মামলা আবার বৈধ কীভাবে হল ? তাঁরা গোটা বিষয়ে ন্যায়বিচার দাবি করছেন ৷