ETV Bharat / state

ঈদের বাজারেও খাঁ খাঁ করছে কলকাতার মিনি বাংলাদেশ, আর্থিক সংকটে ব্যবসায়ীরা - KOLKATA MINI BANGLADESH

ঈদের বাজারেও খাঁ খাঁ করছে কলকাতার মিনি বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিত বিস্তীর্ণ এলাকা ৷ আর্থিক সংকটে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা ৷

ETV BHARAT
ঈদের বাজারেও খাঁ খাঁ করছে কলকাতার মিনি বাংলাদেশ (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : March 26, 2025 at 8:14 PM IST

4 Min Read

কলকাতা, 26 মার্চ: নিউ মার্কেট থেকে মির্জা গালিব স্ট্রিট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, মারকুইজ স্ট্রিট সংলগ্ন এলাকা মিনি বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিত । ওপার বাংলার বাসিন্দারা চিকিৎসা, ব্যবসা কিংবা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ভারতে এলে কলকাতার এই অংশেই মূলত থাকেন । কিংবা, যাতায়াতের জন্য এখান থেকে বাস বুকিং বা টাকা পরিবর্তনের কাজগুলো এখান থেকেই করে থাকেন । যাকে কেন্দ্র করে এই বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পরিবহণ, পোশাক থেকে শুরু করে হোটেল ব্যবসা গড়ে উঠেছে । বাংলাদেশিদের ঘিরে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে রমরমিয়ে ব্যবসা চললেও, এখন ছবিটা আলাদা ৷ ঈদের সময়েও খাঁ খাঁ করছে কলকাতার মিনি বাংলাদেশ ৷

গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দু'দেশের মধ্যে ভিসা সমস্যা দেখা দেয় । জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে দুই দেশের ভিসা দীর্ঘদিন বন্ধ রাখা হয় । গুরুতর শারীরিক সমস্যার অবনতি বা ব্যবসায়িক কাজের জন্য ভিসা মিলছে । তাতেও থাকছে নানান রকমের শর্ত ৷ ফলে, বাংলাদেশি পর্যটকের অভাবে কলকাতার মিনি বাংলাদেশের অবস্থা কার্যত সঙ্গীন । রমজান-ঈদের বাজারেও দেখা মিলছে না বাংলাদেশিদের ৷

ঈদের বাজারেও খাঁ খাঁ করছে কলকাতার মিনি বাংলাদেশ, আর্থিক সংকটে ব্যবসায়ীরা (ইটিভি ভারত)

স্বাভাবিকভাবেই আর্থিক সংকটে ভুগছেন ব্যবসায়ীরা । 75 থেকে 80 শতাংশ ব্যবসা কমে গিয়েছে । পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত একাধিক সংস্থা দোকানে ঝাঁপ বন্ধ করে ঈদের বাজারে পোশাক ব্যবসায় নেমেছেন । এই চত্বরে গড়ে ওঠা ছোটখাটো খাবারের দোকান কিংবা অন্যান্য সামগ্রীর দোকানগুলো তো আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে । ছোট হোটেলগুলোও বন্ধ হয়েছে একে একে ।

ETV BHARAT
খাঁ খাঁ করছে কলকাতার মিনি বাংলাদেশ (নিজস্ব চিত্র)

আর বড় হোটেলের কর্তাদের দাবি, 70 শতাংশেরও বেশি ঘর গত সাত মাস ধরে তালা বন্ধ রয়েছে । বাংলাদেশি পর্যটকের অভাবে একাধিক পরিবহণ সংস্থা আবার কর্মীদের অন্য জেলায় সরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে । সবমিলিয়ে গত সাত মাস ধরে কলকাতার এই অংশের ব্যবসায়ীদের সমস্যা ক্রমশই বাড়ছে । কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তাঁরা কেউই জানেন না । আর্থিক সমস্যা, ব্যবসায়িক জটিলতা নানান বিষয়ের সমস্যা সমাধানের আর্জি জানিয়ে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে । কিন্তু কোনও ভাবেই পরিস্থিতির বদল ঘটছে না ।

ETV BHARAT
ঈদের বাজারেও ফাঁকা মির্জা গালিব স্ট্রিট থেকে মারকুইস স্ট্রিট (নিজস্ব চিত্র)

শ্যামলী পরিবহণের কর্মী সুদীপ ঘোষ জানান, "যখন বাংলাদেশের এই সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, তখন রমজান এবং ঈদের বাজারে কয়েক হাজার মানুষ কলকাতায় কেনাকাটা থেকে শুরু করে নানান কাজে আসতেন । কিন্তু ভিসা সমস্যা থাকার কারণে এ বছর কার্যত পর্যটক শূন্য রয়েছে । হাতেগোনা যে ক'জন বাংলাদেশি এখানে আসছেন, তাঁদের অধিকাংশই আসছেন চিকিৎসার প্রয়োজনে ।"

ETV BHARAT
ধুঁকছে পরিবহণ সংস্থাগুলি (নিজস্ব চিত্র)

তিনি আরও বলেন, "পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, আগে ছয় মাসের জন্য চিকিৎসা ভিসা পাওয়া গেলেও একাধিকবার যাতায়াত করতে পারতেন দুই দেশের মানুষ । কিন্তু এখন চিকিৎসার জন্য ভিসা পাওয়া গেলেও তিনবার যাতায়াতের সুযোগ থাকছে । আগে কলকাতা থেকে রমজান মাসে বা ঈদের আগে প্রতিদিন আট থেকে নয়টি বাস কলকাতা থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিত । এখন সেটা দিনে একটায় এসে দাঁড়িয়েছে । তাও সেই সমস্ত বাসের অধিকাংশ আসনই খালি থেকে যাচ্ছে ।"

ETV BHARAT
এবার রমজানে অন্য ছবি কলকাতার মিনি বাংলাদেশের (নিজস্ব চিত্র)

হোটেল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কর্মী গৌতম রায় বলেন, "একাধিক হোটেল বন্ধ হয়ে গিয়েছে । কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সেদিকেই চেয়ে আছি আমরা । দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে অন্যান্য ছোট ব্যবসার মতো আমাদের বড় হোটেল বন্ধ করে দিতে হবে ।"

ETV BHARAT
ব্যবসায় মন্দা কলকাতার মিনি বাংলাদেশে (নিজস্ব চিত্র)

এদেশে আসা এক বাংলাদেশি বললেন, "চিকিৎসার জন্য সে দেশ থেকে কলকাতায় এসেছি । আগে ছ'মাসের ভিসাতে একাধিকবার চিকিৎসার জন্য কলকাতায় আসা যেত । এখন সেটা একবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হচ্ছে । সংকটময় পরিস্থিতিতে চিকিৎসাতেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ভিসা । কিছুতেই উদ্বেগ কাটছে না । দুই সরকারের আলোচনা করে এই সমস্যার সমাধানের প্রয়োজন ।"

দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক, আবারও একে-অপরকে জড়িয়ে প্রাণ ভরে শ্বাস নিক দুই বাংলা, এটাই চাইছেন ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ ৷

কলকাতা, 26 মার্চ: নিউ মার্কেট থেকে মির্জা গালিব স্ট্রিট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, মারকুইজ স্ট্রিট সংলগ্ন এলাকা মিনি বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিত । ওপার বাংলার বাসিন্দারা চিকিৎসা, ব্যবসা কিংবা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ভারতে এলে কলকাতার এই অংশেই মূলত থাকেন । কিংবা, যাতায়াতের জন্য এখান থেকে বাস বুকিং বা টাকা পরিবর্তনের কাজগুলো এখান থেকেই করে থাকেন । যাকে কেন্দ্র করে এই বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে পরিবহণ, পোশাক থেকে শুরু করে হোটেল ব্যবসা গড়ে উঠেছে । বাংলাদেশিদের ঘিরে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে রমরমিয়ে ব্যবসা চললেও, এখন ছবিটা আলাদা ৷ ঈদের সময়েও খাঁ খাঁ করছে কলকাতার মিনি বাংলাদেশ ৷

গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দু'দেশের মধ্যে ভিসা সমস্যা দেখা দেয় । জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে দুই দেশের ভিসা দীর্ঘদিন বন্ধ রাখা হয় । গুরুতর শারীরিক সমস্যার অবনতি বা ব্যবসায়িক কাজের জন্য ভিসা মিলছে । তাতেও থাকছে নানান রকমের শর্ত ৷ ফলে, বাংলাদেশি পর্যটকের অভাবে কলকাতার মিনি বাংলাদেশের অবস্থা কার্যত সঙ্গীন । রমজান-ঈদের বাজারেও দেখা মিলছে না বাংলাদেশিদের ৷

ঈদের বাজারেও খাঁ খাঁ করছে কলকাতার মিনি বাংলাদেশ, আর্থিক সংকটে ব্যবসায়ীরা (ইটিভি ভারত)

স্বাভাবিকভাবেই আর্থিক সংকটে ভুগছেন ব্যবসায়ীরা । 75 থেকে 80 শতাংশ ব্যবসা কমে গিয়েছে । পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত একাধিক সংস্থা দোকানে ঝাঁপ বন্ধ করে ঈদের বাজারে পোশাক ব্যবসায় নেমেছেন । এই চত্বরে গড়ে ওঠা ছোটখাটো খাবারের দোকান কিংবা অন্যান্য সামগ্রীর দোকানগুলো তো আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে । ছোট হোটেলগুলোও বন্ধ হয়েছে একে একে ।

ETV BHARAT
খাঁ খাঁ করছে কলকাতার মিনি বাংলাদেশ (নিজস্ব চিত্র)

আর বড় হোটেলের কর্তাদের দাবি, 70 শতাংশেরও বেশি ঘর গত সাত মাস ধরে তালা বন্ধ রয়েছে । বাংলাদেশি পর্যটকের অভাবে একাধিক পরিবহণ সংস্থা আবার কর্মীদের অন্য জেলায় সরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে । সবমিলিয়ে গত সাত মাস ধরে কলকাতার এই অংশের ব্যবসায়ীদের সমস্যা ক্রমশই বাড়ছে । কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তাঁরা কেউই জানেন না । আর্থিক সমস্যা, ব্যবসায়িক জটিলতা নানান বিষয়ের সমস্যা সমাধানের আর্জি জানিয়ে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে । কিন্তু কোনও ভাবেই পরিস্থিতির বদল ঘটছে না ।

ETV BHARAT
ঈদের বাজারেও ফাঁকা মির্জা গালিব স্ট্রিট থেকে মারকুইস স্ট্রিট (নিজস্ব চিত্র)

শ্যামলী পরিবহণের কর্মী সুদীপ ঘোষ জানান, "যখন বাংলাদেশের এই সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, তখন রমজান এবং ঈদের বাজারে কয়েক হাজার মানুষ কলকাতায় কেনাকাটা থেকে শুরু করে নানান কাজে আসতেন । কিন্তু ভিসা সমস্যা থাকার কারণে এ বছর কার্যত পর্যটক শূন্য রয়েছে । হাতেগোনা যে ক'জন বাংলাদেশি এখানে আসছেন, তাঁদের অধিকাংশই আসছেন চিকিৎসার প্রয়োজনে ।"

ETV BHARAT
ধুঁকছে পরিবহণ সংস্থাগুলি (নিজস্ব চিত্র)

তিনি আরও বলেন, "পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, আগে ছয় মাসের জন্য চিকিৎসা ভিসা পাওয়া গেলেও একাধিকবার যাতায়াত করতে পারতেন দুই দেশের মানুষ । কিন্তু এখন চিকিৎসার জন্য ভিসা পাওয়া গেলেও তিনবার যাতায়াতের সুযোগ থাকছে । আগে কলকাতা থেকে রমজান মাসে বা ঈদের আগে প্রতিদিন আট থেকে নয়টি বাস কলকাতা থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিত । এখন সেটা দিনে একটায় এসে দাঁড়িয়েছে । তাও সেই সমস্ত বাসের অধিকাংশ আসনই খালি থেকে যাচ্ছে ।"

ETV BHARAT
এবার রমজানে অন্য ছবি কলকাতার মিনি বাংলাদেশের (নিজস্ব চিত্র)

হোটেল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কর্মী গৌতম রায় বলেন, "একাধিক হোটেল বন্ধ হয়ে গিয়েছে । কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সেদিকেই চেয়ে আছি আমরা । দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে অন্যান্য ছোট ব্যবসার মতো আমাদের বড় হোটেল বন্ধ করে দিতে হবে ।"

ETV BHARAT
ব্যবসায় মন্দা কলকাতার মিনি বাংলাদেশে (নিজস্ব চিত্র)

এদেশে আসা এক বাংলাদেশি বললেন, "চিকিৎসার জন্য সে দেশ থেকে কলকাতায় এসেছি । আগে ছ'মাসের ভিসাতে একাধিকবার চিকিৎসার জন্য কলকাতায় আসা যেত । এখন সেটা একবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হচ্ছে । সংকটময় পরিস্থিতিতে চিকিৎসাতেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ভিসা । কিছুতেই উদ্বেগ কাটছে না । দুই সরকারের আলোচনা করে এই সমস্যার সমাধানের প্রয়োজন ।"

দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক, আবারও একে-অপরকে জড়িয়ে প্রাণ ভরে শ্বাস নিক দুই বাংলা, এটাই চাইছেন ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.