কলকাতা, 25 এপ্রিল: মামলার চার্জশিট তৈরি ও সাক্ষীদের নিয়ে বেশকিছু বিধিনিষেধ তৈরি করল কলকাতা পুলিশ ৷ এই নিয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ কুমার ভার্মার নির্দেশ ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে সর্বস্তরে ৷ লালবাজারের কর্তারা থেকে শুরু করে কলকাতার বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকরাও গতকাল, শুক্রবার থেকে নতুন নির্দেশ মেনে কাজও শুরু করেছেন ৷
কী নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতার নগরপাল ?
যেকোনও ঘটনার তদন্তের পর যখন চার্জশিট তৈরি হবে, সঙ্গে সঙ্গে তা পাঠিয়ে দিতে হবে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিকের কাছে ৷ তিনি চার্জশিটটি খুঁটিয়ে দেখবেন ৷ সেটা আদালতে পেশ করার মতো মনে হলে সংশ্লিষ্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার তা পাঠাবেন ডিভিশনাল ডিসি-কে ৷ ডিভিশনাল ডিসিও চার্জশিট খতিয়ে দেখবেন ৷ তিনি ছাড়পত্র দিলেই তা আদালতে পেশ করা হবে ৷
যেকোনও মামলার নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সাক্ষীদের ভূমিকা গুরুতর ৷ তাই সাক্ষীদের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে হবে ৷ যাঁরা অপরাধের প্রত্যক্ষদর্শী, তাঁদের নামই তালিকায় রাখতে হবে ৷ ঘটনার কথা শুনেছেন বা পুলিশকে সাহায্য করেছেন বলেই তাঁদের নাম সাক্ষীর তালিকায় রাখা যাবে না ৷
লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, "কোনও একটি মামলায় একজন কিংবা দু’জন সাক্ষী থাকা যেমন অনুচিত, তেমনই অনেক সাক্ষী থাকাও ঠিক নয় । এর মধ্যে একটি সামঞ্জস্য থাকা অত্যন্ত কাম্য ।’’
কেন এই নির্দেশ দিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার ?
কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, অনেক ক্ষেত্রে সাক্ষীদের তালিকায় তৈরি করতে গাফিলতি দেখা যায় ৷ অহেতুক সাক্ষীদের সংখ্যা বাড়ানো হয় ৷ সেই কারণে জটিলতা তৈরি হয় ৷ অনেকক্ষেত্রে এই সব কারণের জন্য জামিন পেয়ে যান অভিযুক্তরা ৷ সেই বিষয়টিই এবার বন্ধ করতে চাইছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ কুমার ভার্মা ৷
সম্প্রতি লালবাজারে কলকাতা পুলিশের শীর্ষস্তরের একটি বৈঠকে এই প্রসঙ্গ তোলেন তিনি ৷ শহরের বুকে ঘটে যাওয়া তিনটি অপরাধের ঘটনার উদাহরণ দেনও তিনি । ওই তিনটি ঘটনা হল, একবালপুরে মা ও দুই মেয়ে খুন, 2011 সালে বালিগঞ্জে জোড়া খুনের মামলা ও লেক থানা এলাকায় জোড়া খুন ৷ এই তিনটি ক্ষেত্রেই অভিযুক্তরা জামিন পেয়েছেন ৷
তাছাড়া তিনি আরও দু’টি ঘটনার উল্লেখ করেন, সেগুলি হল - আমেরিকান সেন্টারে হামলার ঘটনায় 400 জনের বেশি সাক্ষী রয়েছেন । আবার রশিদ খানের বউবাজার বিস্ফোরণের মামলায় 250 জনের নাম রয়েছে সাক্ষী তালিকায় । বহু আগে এই ঘটনাগুলি ঘটেছে ৷ ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একাধিক সাক্ষীর মৃত্যু হয়েছে ৷ অনেকে বয়ান বদলে ফেলেছেন ৷ অনেকে আবার এখন সাক্ষী দিতে রাজি হচ্ছেন না ৷ ফলে মামলার নিষ্পত্তিও আটকে রয়েছে ৷
নগরপাল কলকাতা পুলিশের অন্দরে জানিয়েছেন, এই সকল ঘটনায় তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিক চার্জশিট পেশ করার সময় এমন কয়েকজন সাক্ষীর নাম উল্লেখ করেছেন, যাঁরা পরোক্ষ সাক্ষী ৷ প্রত্যক্ষদর্শী নন ৷ সেই কারণে অনেক সময় সাক্ষীর মানসিকতা বদলে যায় । সাক্ষীর বয়ান বদলে যায় ।
তাছাড়া দীর্ঘদিন ধরে এই মামলাগুলি আদালতে চলার ফলে নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা প্রত্যেকে একসঙ্গে আদালতে উপস্থিত থাকতে পারেন না । যার ফলে এই মামলাগুলো এই বছরের পর বছর চলেই যেতে থাকে । তার মধ্যে তদন্তকারী অফিসারের অন্য জায়গায় বদলি হয়ে যান ৷ ফলে পুরো প্রক্রিয়াও জটিল আকার ধারণ করে ।
সেই জায়গা থেকেই কলকাতা পুলিশকে বের করে আনতে চাইছেন মনোজ কুমার ভার্মা ৷ যাতে দ্রুত তদন্ত শেষ করে যথাযথ চার্জশিট দেওয়া যায় ৷ পাশাপাশি যথাযথ সাক্ষী পেশ করে মামলার নিষ্পত্তিও দ্রুত করা যায় ৷