কলকাতা, 6 সেপ্টেম্বর: আরজি কর হাসপাতাল এবং ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সামনে শুরু হয়েছিল কলকাতা পুরনিগমের 'মে আই হেল্প ইউ ডেস্ক' ৷ এই সহায়তা শিবিরের কাজ ছিল জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য আসা কোনও রোগী যদি চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যান তাহলে তাঁর সহায়তা করা ৷ তবে শুরুতেই ঘটল ছন্দপতন ৷ ঘরের ভিতরেই চিকিৎসকদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হল কর্তৃপক্ষকে ৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের সম্মিলিত ক্ষোভের আঁচ পেয়ে নমনীয় মনোভাব নিলেন পুর প্রশাসনের কর্তারা ৷ বন্ধ করলেন চালু হওয়া দু'টি হেল্প ডেস্ক ৷ বাকি হাসপাতালগুলিতে নতুন করে খোলার সিদ্ধান্তেও ইতি টানা হল ৷
আরজি কর হাসপাতালে কর্তব্যরত পড়ুয়া-চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার বিচার চেয়ে চিকিৎসক সমাজ একজোট হয়েছে ৷ তাঁদের এই আন্দোলন এখন বৃহত্তর পরিসরে গণ-আন্দোলনের রূপ নিয়েছে ৷ সেখানে দাঁড়িয়ে কলকাতা পুরনিগমের এই 'হেল্প ডেস্ক' খোলা কার্যত এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে যাচ্ছিল বলেই অনেকের মত ৷ পুর চিকিৎসকরাই এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হলেন ৷ লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়ে জমা দিলেন পুর কমিশনার ধবল জৈন ও কলকাতা পুরনিগমের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তথা চিকিৎসক সুব্রত রায় চৌধুরীর কাছে ৷ দীর্ঘ আলোচনার পর চিকিৎসকদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করল পুর কর্তৃপক্ষ ৷
কলকাতা কর্পোরেশন সূত্রে খবর, পুর প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই ধরনের শিবির আর কোনও জায়গায় হবে না ৷ আরজি করে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্ম বিরতি চলছে । তার জন্য বহু রোগী জরুরি বিভাগে এসেও ফেরত যাচ্ছেন চিকিৎসা না পেয়ে ৷ এমন অভিযোগকে সামনে রেখেই কলকাতা কর্পোরেশনের তরফে শহরের দু'টি হাসপাতাল আরজি কর ও ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে দু'টি সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়েছিল ৷ পরিকল্পনা ছিল বাকি হাসপাতালগুলির সামনেও এমন শিবির করার ৷
তবে স্বাস্থ্য ভবন বা কলকাতা কর্পোরেশনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা কেউই প্রকাশ্যে এই ধরনের শিবির খোলার কোনও নির্দেশ দিয়েছেন বলে স্বীকার করেননি ৷ ফলে কলকাতা কর্পোরেশনের এমন মৌখিক নির্দেশে এই কাজ করতে গিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়তে হতে পারে স্বাস্থ্য কর্তা চিকিৎসকদের ৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, "আরজি করের ঘটনার বিচার চেয়ে যে আন্দোলন চলছে । চিকিৎসকদের সেই আন্দোলনে আমরাও অংশীদার ৷ এই আন্দোলন শুধু এখন আর আমাদের আন্দোলন নয়, জনগণের আন্দোলনের রূপ নিয়েছে ৷ সেখানে দাঁড়িয়ে এই ধরনের মৌখিক নির্দেশ দিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের হেল্প ডেস্কে বসানো হচ্ছিল । এর ফলে বাকি চিকিৎসকদের কাছে আমাদের সম্পর্কে বিরূপ ধারণা তৈরি হচ্ছিল ৷ পাশাপাশি কোনও লিখিত অনুমতি না থাকায় যাঁরা সেই হেল্প ডেস্ক চালাচ্ছিলেন, সেই সমস্ত স্বাস্থ্য কর্মীদের গণরোষের মুখে পড়ার একটি ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল ৷ তাই আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি রাখি, এই ধরনের পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে ৷"
তিনি দাবি করেন, "বাস্তবে আমাদের ঢাল করা হচ্ছিল । এই চিকিৎসকদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে বা কাউন্টার পার্ট হিসেবে আমাদের ব্যবহার করার পরিকল্পনা হচ্ছিল ৷ এটা আমরা কোনওভাবেই মেনে নিতে পারিনি ৷ আরজি করে মহিলা চিকিৎসকের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার দ্রুত বিচার হোক এটাই আমরা চাই ৷ আমাদের চিকিৎসকদের এই সমস্ত বিষয় শুনেছেন পুর কমিশনার ধবল জৈন ও স্বাস্থ্য বিভাগের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক চিকিৎসক সুব্রত রায় চৌধুরী ৷ তাঁরা জানিয়েছেন এই হেল্প ডেস্ক আর নতুন করে কোনও হাসপাতালে খোলা হবে না ৷ পাশাপাশি যে দু'টি হাসপাতালে খোলা হয়েছিল সেই দু'টি সহায়তা কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হল ৷"