কলকাতা, 17 মে: শতবর্ষ প্রাচীন ঐতিহ্যশালী ফুলের বাজার হল মল্লিক ঘাট ফুল বাজার । এশিয়ার বৃহত্তম বাজার যেখানে ফুল ও ফুলের তৈরি সাজসজ্জা বিক্রি হয় । তবে বাজারের জীর্ণ কাঠামো থেকে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, ঘিঞ্জি দমবন্ধ করা অবস্থা এখন বিরাজমান । এবার সেই বাজারের খোলনলচে বদলে যাবে । মাথা তুলবে পাঁচ তলা ‘মল’, পুরোটাই ফুল বাজার ।
আপাতত পরিকল্পনার স্তরে রয়েছে সবটাই । উদ্যান প্রতিপালন দফতরের অনুমতি মিললেই ডিটেইলস প্রজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি করে ফেলবে কলকাতা কর্পোরেশন । শতবর্ষের ইতিহাস থেকে ঐতিহ্য রক্ষায় সঙ্গেই ব্যাপক ভাবে অধুনিকরণ হবে ।
সূর্যের প্রথম আলো দেখার আগেই শুরু হয় যায় এই ফুল বাজারের কেনাকাটা । চলে বেলা পর্যন্ত । বাজারের জীর্ণ তিন লোহার কাঠামো নিচে থেকে শুরু করে আশপাশে বসে পাইকারি বাজার । ব্রিজের ধারে, রাস্তার ধারে কিছু খুচরো বিক্রেতা বসেন । বাজার শেষে বিপুল পরিমাণ ফুল বিক্রি না হলে বা কোনোভাবে পচে গেলে রোজই ফেলে দিতে হয় । মল্লিক ঘাট থেকে জগন্নাথ ঘাট পর্যন্ত এলাকা নিয়ে এই ফুল বাজার । এখন থেকেই কলকাতা ও তার লাগোয়া বিভিন্ন জেলায় ফুল ও ফলের তৈরি সাজসজ্জা পাড়ি দেয় । এই গোটা বাজারে হবে ব্যাপকভাবে সংস্কার ও আধুনিকীকরণ ।
কলকাতা পুরনিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, যেমন শহরের বুকে বিভিন্ন মল দেখা যায়, ঠিক সেই রকমই চারতলা একটি ফুলের মল হবে । ফুল নিয়ে আসা বা ফুল নিয়ে যাওয়ার জন্য বড় লরি, ছোট হাতি, ভ্যান এই জাতীয় গাড়ি ঢোকা বের হওয়ার জন্য কংক্রিটের রাস্তা ও গাড়ি রাখার জায়গা তৈরি হবে । গোটা চত্বর পর্যাপ্ত আলো ও সুন্দর বাতিস্তম্ভ দিয়ে সেজে উঠবে ।
যেমন পাইকারি দোকান থাকবে, তেমন খুচরো বিক্রির দোকান থাকবে । প্রতিদিন এখন অবিক্রিত ফুল নষ্ট হয়, ক্ষতি হয় প্রচুর টাকার । এই মলেই থাকবে কোল্ড স্টোর। ফলে ফুল রাখলে পরের দিনগুলোতেই বিক্রি করা যাবে । ক্ষতির মুখে পড়তে হবে না ।
ফুল ও ফুলের সাজ সজ্জার পাশাপশি ফুল দিয়ে তৈরি হয়, এমন নানা পণ্য বিক্রি করার দোকানও থাকবে । যেমন রং, আবির, ধূপ । ফুলের যে বর্জ্য প্রতিদিন হয়, সেই বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ করতে একটি প্ল্যান্ট তৈরি হবে । চারতলা বহুতল পুরোটাই ফুলের ব্যবসা । থাকবে আধুনিক একাধিক শৌচালয় । বিশ্রামাগার । খাবার জায়গা । প্রাথমিক চিকিৎসার জায়গা । বসার জায়গা । এই বাজারের সংস্কারের সঙ্গেই মল্লিক ঘাট ও জগন্নাথ ঘাট আমূল সংস্কার করা হবে ।
এই প্রসঙ্গে কলকাতা কর্পোরেশনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘গোটা জায়গাটি উদ্যান প্রতিপালন দফতরের হাতে । তারা অনুমতি দিলেই ডিপিআর করে টেন্ডার করা হবে । ভোল বদলে যাবে গোটা বাজারের । উপকৃত হবেন ফুল ব্যবসায়ী থেকে হাজার হাজার ক্রেতা । ঐতিহ্য থেকে ইতিহাস রক্ষা পাবে । সার্বিক সংস্কারের ফলে আরও দৃষ্টি নন্দন হয়ে উঠবে । এখন এটা পরিকল্পনা স্তরে ।’’