কলকাতা, 23 এপ্রিল: কারও গা বেয়ে গজিয়ে উঠেছে বটগাছের মোটা শিকড়, কেউ বা জরাজীর্ণ চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বছরের পর বছর ধরে ৷ তবে, ম্লান হয়ে যায়নি তাদের জৌলুস ৷ কলকাতার ওলিগলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এই রকম একাধিক হেরিটেজ সম্পত্তি ৷ বহু সময় সেই সমস্ত সম্পত্তি মেরামত করতে কিংবা ভেঙে নির্মাণ করার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয় । আবেদনকারী আবেদন করলেও অনুমোদন মিলতে কাঠখড় পোড়াতে হয় বেশ । এবার সেই সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ করল কলকাতা পুরনিগম ৷ এই মর্মে একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করা হল পুরনিগমের তরফে ৷
পুরনিগমের নির্দেশিকা অনুযায়ী, এবার থেকে গ্রেড-2A, গ্রেড -2B, গ্রেড-3 তালিকাভুক্ত হেরিটেজ ভবনের ক্ষেত্রে সম্পূর্ন বা আংশিক ভেঙে ফেলা বা মেরামত করা, সংস্কার করার ক্ষেত্রে খানিকটা বাড়ানো বা পরিবর্তন করার বিষয় আবেদন করলে বেশ কিছু পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে ধাপে ধাপে অনুমোদন প্রক্রিয়া হবে ।

নয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী-
- কলকাতা কর্পোরেশন 1-এর আওতায় 393 A এবং 394 ধারা অনুসারে, সমস্ত প্রস্তাব পরিবেশ ও ঐতিহ্য বিভাগে জমা দিতে হবে ।
- খতিয়ে দেখতে হবে সম্পত্তির ইতিহাস, তাৎপর্য, অতীত এবং বর্তমান ব্যবহার, মালিকানা, রক্ষণাবেক্ষনের ব্যবস্থা, হস্তক্ষেপের রেকর্ড ছবি-সহ, বর্তমানে কাঠামোর বৈধতা ও নথিপত্র।
- এরপর আবেদনকারীর শর্ত মূল্যায়ন, নথি ও বাস্তবে মিলিয়ে দেখতে হবে ।
- সম্পত্তি বা ভবনের নকশা, থ্রিডি ভিউ ছবি, উচ্চতা ও রঙ নির্মাণ উপকরণ ও প্রস্তাবিত নকশা মিলিয়ে দেখা হবে ।
- পরবর্তী সময় উপকরণের গুণমান এবং পুনরুদ্ধার কৌশল-সহ প্রস্তাবিত মেরামত পুনরুদ্ধার ব্যবস্থা জানতে হবে আবেদনকারীর থেকে ।
এরপরের ধাপে প্রস্তাবিত ভবনের বিদ্যমান কাঠামো, ফ্লোর প্ল্যান, উচ্চতার জন্য ফ্লোর প্ল্যান দেখানো পরিকল্পনার একটি সেট প্রাথমিক ভাবে যাচাই ও বাছাইয়ের উদ্দেশ্যে কলকাতা কর্পোরেশনের বিল্ডিং বিভাগকে জমা দিতে হবে । সেই প্রক্রিয়া শেষ হলে বিল্ডিং বিভাগ তাদের পর্যবেক্ষণ পরিবেশ ও ঐতিহ্য বিভাগের কাছে পাঠাবে । তাদের তরফে বিষয়টি হেরিটেজ কনজারভেশন কমিটি(এইচসিসি)-র পেশ করা হবে । এইচসিসি সব খতিয়ে দেখে সুপারিশ করবে মেয়র পারিষদ সদস্যের কাছে । মেয়র পরিষদের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর সেই রেজোলিউশনের অনুলিপি আবেদনকারীকে চিঠি দিয়ে জানানো হবে ।

পাশাপশি, হেরিটেজ কনজারভেশন কমিটি একটি ড্রয়িং সেট বিল্ডিং বিভাগে পাঠাবে । পরের ধাপে পরিবেশ ও ঐতিহ্য বিভাগ সব প্রক্রিয়া শেষ করে বিল্ডিং বিভাগকে জানাবে । খুব শীঘ্রই বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন মডিউলটি কলকাতা কর্পোরেশনের অনলাইন চালু করা হবে ।
শহরজুড়ে ঐতিহ্যশালী ভবনের সংখ্যাটি প্রায় 1 হাজার 400-এরও বেশি । এর মধ্যে গ্রেড তালিকা অনুযায়ী, গ্রেড-1-এর রয়েছে 717টি, গ্রেড-2A-তে রয়েছে 216টি, গ্রেড - 2b-তে রয়েছে 119টি । একাধিক হেরিটেজ বিল্ডিংয়ের গ্রেড প্রাপ্তি বাকি আছে । গ্রেড-1 হেরিটেজ বিল্ডিং পরিবর্তন করা যায় না । তবে, বাকি গ্রেডগুলিতে করা যায় । অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় কেউ জরাজীর্ণ বাড়ি সংস্কার করতে না-পেরে প্রোমোটিংয়ে দিতে গিয়ে আটকে যান । অনেকে কিছুটা বাড়াতে গিয়ে সমস্যায় পরেন ৷
অনেক আবেদনকারী পরে জানেন তাঁর সম্পত্তি হেরিটেজ । অনেকেই আবার সেই তকমা সরাতে চান । এই আবহে অভিযোগ রয়েছে, বহু ভবন হেরিটেজ তকমা থাকলেও নির্মাণ কাজ হচ্ছে । এবার এমন নানা সমস্যার সমাধানে বিস্তারিত ভাবে একাধিক ধাপ তৈরি করল কলকাতা কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ । অনলাইনে মডিউল অনুসারে, হেরিটেজ ক্লিয়ারেন্সের জন্য পরিবেশ ও হেরিটেজ বিভাগের কাছে যাবে । সবুজ সঙ্কেত পেলে আবেদন দ্বিতীয় ধাপে স্থানান্তরিত হবে এনওসি পাওয়ার জন্য ।
এই প্রসঙ্গে কলকাতা কর্পোরেশনের আধিকারিক জানান, হেরিটেজ অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় সমস্যার মুখে পড়তে হয় । আদালতে মামলাও করা হয় ৷ এই পদ্ধতির ফলে অনুমোদনে আসবে স্বচ্ছতা । রক্ষা পাবে হেরিটেজ । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, "সম্পত্তি হেরিটেজ । গ্রেড পেন্ডিং । এদিকে সংস্কার করার সামর্থ নেই । অন্যদিকে, বিক্রি করতে পারছি না । ফলে জরাজীর্ণ বাড়িতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রয়েছি । জটিল নিয়েমের জাঁতাকলে আটকে ।"