কলকাতা, 6 জুন: কলকাতা জুড়ে চলছে একাধিক নির্মাণ কাজ । পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছে । এক্ষেত্রে নির্মাণ বর্জ্য (রাবিশ) বাধ্যতামূলকভাবেই কর্পোরেশনকে দেওয়ার কথা ৷ কিন্তু বাস্তবে সেই বর্জ্য উধাও হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ ।
নির্মাণ বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের জন্য কর্পোরেশনের তৈরি প্রায় নতুন সিএনডি প্ল্যান্টে কাঁচামালের অভাবে উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে । এদিকে উধাও হওয়া রাবিশ জলাশয় ভরাটের মতো কর্মকাণ্ডে কাজে লাগছে বলে অভিযোগ উঠেছে । কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যে কলকাতা পুরনিগমে বৈঠক হয়েছে ৷ যারা এই বর্জ্য দিচ্ছে না, তাদের ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনাও করছে কলকাতা পুরনিগম কর্তৃপক্ষ ৷
উল্লেখ্য, পরিবেশরক্ষায় সতর্ক হয়েছে কলকাতা পুরনিগম । একের পর এক পদক্ষেপ করা হয়েছে । তার মধ্যে বড় পদক্ষেপ হল নির্মাণ বর্জ্য, যাকে চলতি কোথায় রাবিশ বলে, সেই রাবিশ প্রক্রিয়াকরণ করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা । রাজারহাটের পাথরঘাটা এলাকায় বিপুল খরচ করে এর জন্য প্ল্যান্ট তৈরি হয়েছে ৷ তবে সেখানে কাঁচামালের অভাব দেখা দিয়েছে ।

এই প্ল্যান্ট তৈরি করা হয়েছিল সার্বিকভাবে পরিবেশরক্ষায় । উদ্দ্যেশ্য ছিল যে নির্মাণ বর্জ্য খোলাভাবে যথেচ্ছ পড়ে থেকে মাটি-জল কিংবা বাতাসে মিশে দূষণ ছড়াতো, সেই ক্ষেত্রে লাগাম দেওয়া । একই সঙ্গে এই রাবিশ ব্যবহার করেই শহর কিংবা শহরতলি এবং জেলায় যে দেদার জলাশয় ভরাট হতো, সেটা আটকানো । এই নির্মাণ বর্জ্যের গাড়ি মেয়র ফিরহাদ হাকিম নিজেই বেহালার কাছে আটকেছিলেন৷ ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে । অভিযোগ করেছিলেন, নজরদারি অভাবে এই রাবিশ পাচার হচ্ছে জলাশয় ভরাট করার জন্য৷ অসাধু লোকজন এই কাজ করছে ।
এর পর তিনি থেমে থাকেননি । কলকাতা কর্পোরেশনের বিল্ডিং বিভাগে এই নিয়ে আইন করা হয়েছে । সেই আইনে বলা হয়েছে, নতুন বহুতল তৈরির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জমির নির্মাণ বর্জ্য বাধ্যতামূলকভাবেই দিতে হবে কলকাতা কর্পোরেশনের কাছে । তার জন্য যে খরচ হবে, সেই টাকাও জমা দিতে হবে । তবেই নকশার অনুমোদন মিলবে । পরবর্তী সময় প্রতি বরোতে একজন করে পুরকর্তাকে এই বিষয়টি নিয়ে নজরদারির জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় ।
তবে দেখা যাচ্ছে নির্মানকারীরা টাকা জমা দিচ্ছে । কিন্তু রাবিশ আর দিচ্ছেন না । রাতারাতি সেই রাবিশ উধাও হয়ে যাচ্ছে । এদিকে সিএনডি প্ল্যান্টে প্রতিদিন 450-500 টন রাবিশ প্রয়োজন হলেও মেরেকেটে মিলছে 200-250 টন । ফলে অর্ধেক কাঁচামাল পাওয়া যাচ্ছে না ৷ ফলে উৎপাদন পুরোদমে করা যাচ্ছে না । এই সমস্যা বেশ কিছুদিন ধরে সামনে আসতেই এবার নড়েচড়ে বসল পুর প্রশাসন ।
সম্প্রতি কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বিল্ডিং বিভাগ ও ইঞ্জিনিয়রিং বিভাগ নিয়ে পুরকমিশনার বৈঠক করেন । সেখানে প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, এতদিন এই কাজে বিল্ডিং ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ছিল ৷ এবার ইঞ্জিনিয়রিং বিভাগও থাকবে । পুরনো নির্মাণ ভাঙার কথা কর্পোরেশনকে জানাতে হবে নির্মাণকারীদের পক্ষ থেকে । সেই খবর পাওয়ার পর কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ সেই নির্মাণ বর্জ্য সংগ্রহ করবে ।

সেই রাবিশ না-দিলে ভিত নির্মাণের পর বিল্ডিং বিভাগ পরিদর্শন করে পরবর্তী যে ছাড়পত্র দেয় নির্মাণ সংক্রান্ত, সেটা দেবে না । কলকাতায় প্রাথমিক খোঁজ করেই 15-20টি এমন নির্মাণ কাজ কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে, যারা টাকা জমা দিলেও রাবিশ দেয়নি । তাদের থেকে কারণ জানতে চেয়ে চিঠিও পাঠানোর পরিকল্পনা নিচ্ছে কর্পোরেশন ৷
কলকাতা পুরনিগমের আধিকারিক বলেন, ‘‘দূষণ ঠেকাতে ও পরিবেশরক্ষায় রাবিশ যাতে রাস্তায় পড়ে না-থাকে ও জলাশয় ভরাটে ব্যবহার না-করা হয়, সেই জন্য এমন প্ল্যান্ট তৈরি হয়েছিল । পাশাপশি এই রাবিশ থেকেই নানা ধরনের জিনিস তৈরি হচ্ছে ৷ যেমন - কর্পোরেশনের রাস্তা তৈরি, ফুটপাথ তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে৷ ফলে অল্প হলেও খরচে লাগাম দেওয়া যাচ্ছে ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘সেই কাঁচামাল পেতেই একাধিক নিয়ম করা হয়েছে । নির্মাণকারীদের বাধ্যতামূলকভাবেই এই রাবিশ কর্পোরেশনকে দিতে হবে । সেটা কোথায় ফাঁক থাকছে ও উধাও হওয়া রুখতেই বৈঠক । যাঁরা এই কাজ করেছে ৷ নির্মাণ বর্জ্য দেয়নি ৷ তাদের চিঠি পাঠিয়ে জানতে চাওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে । প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ হতে পারে ।’’