ETV Bharat / state

একটা লাথি অনেকটা মনোবল কেড়েছে লালবাজারের, নেই সমন্বয়, বন্ধ ঘরে ক্ষোভ প্রকাশ সিপি-র! - KOLKATA POLICE

কসবা থেকে ভাঙড়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সমন্বয়ের অভাবকেই দুষছে লালবাজার ৷ ভবিষ্যতে সমন্বয় বৃদ্ধিতে একাধিক নির্দেশ কলকাতার নগরপাল মনোজ কুমার ভার্মার ৷

Kolkata CP Manoj Kumar Verma
কলকাতার নগরপাল মনোজ কুমার ভার্মা (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : April 21, 2025 at 9:26 PM IST

4 Min Read

কলকাতা, 21 এপ্রিল: বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার সময় লাথি মারছেন এক পুলিশ কর্মী ৷ চলতি মাসেই কলকাতার কসবায় ডিআই অফিসে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালীন এমনই দৃশ্য সামনে এসেছিল ৷ যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় সর্বত্র ৷

এই ঘটনায় ক্ষোভের রেশ পৌঁছেছে লালবাজারেও ৷ এই নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ স্বয়ং কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ কুমার ভার্মাও ৷ তিনি এই নিয়ে লালবাজারের অন্দরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে খবর ৷

কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, গত শনিবার লালবাজারে ক্রাইম কনফারেন্স হয় ৷ সেখানে নগরপাল তো উপস্থিত ছিলেনই ৷ পাশাপাশি ছিলেন কলকাতা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা ৷ সেখানেই কসবা-কাণ্ড নিয়ে মনোজ কুমার ভার্মা ক্ষোভ প্রকাশ করেন ৷ একই সঙ্গে তিনি ওই বৈঠকে জানান যে পুলিশের বিভিন্নস্তরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ঘটছে ৷ গোয়েন্দা-তথ্য ঠিকমতো লালবাজারে এসে পৌঁছোচ্ছে না ৷ যার ফলে প্রায়ই আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে ৷

কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, সমন্বয়ের অভাবের বিষয়টি নিয়ে বিশেষ করে আলোচনা হয় কসবায় চাকরিহারাদের বিক্ষোভ ও ভাঙড়ে ওয়াকফ-অশান্তি নিয়ে ৷ কসবায় চাকরিহারাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি আচমকাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ৷ তার পরই পরিস্থিতি রণক্ষেত্রের আকার নেয় ৷ সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়েই যাবতীয় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে লালবাজারকে ৷

অন্যদিকে দক্ষিণ 24 পরগনার ভাঙড়ে নয়া ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে হওয়া বিক্ষোভ সামলাতে হিমশিম খায় কলকাতা পুলিশ ৷ পুলিশের বেশ কয়েকটা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ৷ 15 জন পুলিশ কর্মী আহতও হন ৷ ঘটনাস্থলে যান স্বয়ং নগরপাল ৷ সেই নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে ৷ প্রশ্ন ওঠে, আগাম কোনও তথ্য কেন ছিল না পুলিশের কাছে ?

আইপিএস মহলের একাংশের দাবি, প্রত্যেকটি বিষয়ে আগাম খবর পেতে ব্যর্থ হয়েছে কলকাতা পুলিশের এসবি বা স্পেশাল ব্রাঞ্চ । আবার আইপিএস মহলের অন্য এক অংশের দাবি, এসবি কিংবা স্পেশাল ব্রাঞ্চ-এর আধিকারিকরা যখন কোনও ঘটনার আগাম খবর পান, সেই খবর থানা ও ডেপুটি কমিশনারের কাছে পৌঁছাতে অনেক দেরি হয় । ততক্ষণে যা হওয়ার তাই হয়ে যায়। এর জন্য দায়ী সমন্বয়ের অভাব ৷

শনিবার লালবাজারে ক্রাইম কনফারেন্সে সমন্বয় সাধনে জোর দিতে বাহিনীর প্রত্যেক অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা পুলিশের নগরপাল মনোজ কুমার ভার্মা । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘আসন্ন আইন-শৃঙ্খলার নিরাপত্তায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের সঙ্গে থানার অফিসার ইনচার্জদের সমন্বয় সাধন করতে হবে । এজন্য এগিয়ে আসতে হবে কলকাতার প্রত্যেকটি ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার কিংবা উপ নগরপালদের ।’’

ওই আধিকারিক আরও বলেন, ‘‘থানার অফিসার ইনচার্জদের সঙ্গে নিচুতলার পুলিশকর্মী ও আইন-শৃঙ্খলার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মী থেকে শুরু করে ডিসি অফিসে কর্তব্যরত পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারদের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে কাজ করা অত্যন্ত জরুরি ।’’

লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে যে বৈঠকে নগরপাল নির্দেশ দিয়েছেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি হাতের বাইরে যেতে পারে কি না, সেই সংক্রান্ত আগাম খবর পেতে হবে স্পেশাল ব্রাঞ্চের অফিসারদের । কোথায় কোন মিটিং মিছিলে কতজন লোক জড়ো হতে পারে, তার আগাম খবর নিয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ এবং ডেপুটি কমিশনার ও লালবাজারে রিপোর্ট পাঠাতে হবে স্পেশাল ব্রাঞ্চকে । সেই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই সংশ্লিষ্ট জায়গায় পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে, পুলিশ মোতায়েন করতে হবে অথবা নিরাপত্তার নীল নকশা সাজাতে হবে সংশ্লিষ্ট ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনারদের । ডেপুটি কমিশনারকে সাহায্য করবেন একাধিক অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিকরা । এছাড়াও পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখবে কলকাতা পুলিশের সদর দফতর ।

এই বিষয়ে লালবাজারে তরফ থেকে প্রত্যেকটি থানার অফিসার ইনচার্জদের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে ৷ তাতে যে বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ, তা হল এবার থেকে শহরের দায়িত্বে থাকা কিংবা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ডিউটিতে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের আরও সজাগ হতে হবে । উচ্চতর অফিসার কিংবা কোনও পদস্থ কর্তা না থাকলে থানার অফিসার ইনচার্জের নির্দেশ মতোই ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ করতে হবে পুলিশকর্মীদের । তাছাড়া লাঠি চালানোর ক্ষেত্রে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই ৷ কিন্তু কীভাবে চালানো হবে, সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে ৷

এই সব বিষয়ে দক্ষিণ কলকাতার একটি থানার অফিসার ইনচার্জ দাবি করেছেন, এই নির্দেশিকাগুলি প্রত্যেকটি ভালো । কিন্তু এগুলোকে কার্যকর করে তোলার জন্য আগে চাই সঠিক টেকনিক কিংবা শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ । ধীরে ধীরে বাহিনীর প্রশিক্ষণের মাত্রা নিচে নামছে ।

কলকাতা, 21 এপ্রিল: বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার সময় লাথি মারছেন এক পুলিশ কর্মী ৷ চলতি মাসেই কলকাতার কসবায় ডিআই অফিসে চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালীন এমনই দৃশ্য সামনে এসেছিল ৷ যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় সর্বত্র ৷

এই ঘটনায় ক্ষোভের রেশ পৌঁছেছে লালবাজারেও ৷ এই নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ স্বয়ং কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ কুমার ভার্মাও ৷ তিনি এই নিয়ে লালবাজারের অন্দরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে খবর ৷

কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, গত শনিবার লালবাজারে ক্রাইম কনফারেন্স হয় ৷ সেখানে নগরপাল তো উপস্থিত ছিলেনই ৷ পাশাপাশি ছিলেন কলকাতা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা ৷ সেখানেই কসবা-কাণ্ড নিয়ে মনোজ কুমার ভার্মা ক্ষোভ প্রকাশ করেন ৷ একই সঙ্গে তিনি ওই বৈঠকে জানান যে পুলিশের বিভিন্নস্তরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ঘটছে ৷ গোয়েন্দা-তথ্য ঠিকমতো লালবাজারে এসে পৌঁছোচ্ছে না ৷ যার ফলে প্রায়ই আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে ৷

কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, সমন্বয়ের অভাবের বিষয়টি নিয়ে বিশেষ করে আলোচনা হয় কসবায় চাকরিহারাদের বিক্ষোভ ও ভাঙড়ে ওয়াকফ-অশান্তি নিয়ে ৷ কসবায় চাকরিহারাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি আচমকাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ৷ তার পরই পরিস্থিতি রণক্ষেত্রের আকার নেয় ৷ সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়েই যাবতীয় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে লালবাজারকে ৷

অন্যদিকে দক্ষিণ 24 পরগনার ভাঙড়ে নয়া ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে হওয়া বিক্ষোভ সামলাতে হিমশিম খায় কলকাতা পুলিশ ৷ পুলিশের বেশ কয়েকটা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় ৷ 15 জন পুলিশ কর্মী আহতও হন ৷ ঘটনাস্থলে যান স্বয়ং নগরপাল ৷ সেই নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে ৷ প্রশ্ন ওঠে, আগাম কোনও তথ্য কেন ছিল না পুলিশের কাছে ?

আইপিএস মহলের একাংশের দাবি, প্রত্যেকটি বিষয়ে আগাম খবর পেতে ব্যর্থ হয়েছে কলকাতা পুলিশের এসবি বা স্পেশাল ব্রাঞ্চ । আবার আইপিএস মহলের অন্য এক অংশের দাবি, এসবি কিংবা স্পেশাল ব্রাঞ্চ-এর আধিকারিকরা যখন কোনও ঘটনার আগাম খবর পান, সেই খবর থানা ও ডেপুটি কমিশনারের কাছে পৌঁছাতে অনেক দেরি হয় । ততক্ষণে যা হওয়ার তাই হয়ে যায়। এর জন্য দায়ী সমন্বয়ের অভাব ৷

শনিবার লালবাজারে ক্রাইম কনফারেন্সে সমন্বয় সাধনে জোর দিতে বাহিনীর প্রত্যেক অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন কলকাতা পুলিশের নগরপাল মনোজ কুমার ভার্মা । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘আসন্ন আইন-শৃঙ্খলার নিরাপত্তায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের সঙ্গে থানার অফিসার ইনচার্জদের সমন্বয় সাধন করতে হবে । এজন্য এগিয়ে আসতে হবে কলকাতার প্রত্যেকটি ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার কিংবা উপ নগরপালদের ।’’

ওই আধিকারিক আরও বলেন, ‘‘থানার অফিসার ইনচার্জদের সঙ্গে নিচুতলার পুলিশকর্মী ও আইন-শৃঙ্খলার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মী থেকে শুরু করে ডিসি অফিসে কর্তব্যরত পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারদের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে কাজ করা অত্যন্ত জরুরি ।’’

লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে যে বৈঠকে নগরপাল নির্দেশ দিয়েছেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি হাতের বাইরে যেতে পারে কি না, সেই সংক্রান্ত আগাম খবর পেতে হবে স্পেশাল ব্রাঞ্চের অফিসারদের । কোথায় কোন মিটিং মিছিলে কতজন লোক জড়ো হতে পারে, তার আগাম খবর নিয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ এবং ডেপুটি কমিশনার ও লালবাজারে রিপোর্ট পাঠাতে হবে স্পেশাল ব্রাঞ্চকে । সেই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই সংশ্লিষ্ট জায়গায় পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে, পুলিশ মোতায়েন করতে হবে অথবা নিরাপত্তার নীল নকশা সাজাতে হবে সংশ্লিষ্ট ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনারদের । ডেপুটি কমিশনারকে সাহায্য করবেন একাধিক অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিকরা । এছাড়াও পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখবে কলকাতা পুলিশের সদর দফতর ।

এই বিষয়ে লালবাজারে তরফ থেকে প্রত্যেকটি থানার অফিসার ইনচার্জদের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে ৷ তাতে যে বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ, তা হল এবার থেকে শহরের দায়িত্বে থাকা কিংবা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ডিউটিতে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের আরও সজাগ হতে হবে । উচ্চতর অফিসার কিংবা কোনও পদস্থ কর্তা না থাকলে থানার অফিসার ইনচার্জের নির্দেশ মতোই ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ করতে হবে পুলিশকর্মীদের । তাছাড়া লাঠি চালানোর ক্ষেত্রে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই ৷ কিন্তু কীভাবে চালানো হবে, সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে ৷

এই সব বিষয়ে দক্ষিণ কলকাতার একটি থানার অফিসার ইনচার্জ দাবি করেছেন, এই নির্দেশিকাগুলি প্রত্যেকটি ভালো । কিন্তু এগুলোকে কার্যকর করে তোলার জন্য আগে চাই সঠিক টেকনিক কিংবা শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ । ধীরে ধীরে বাহিনীর প্রশিক্ষণের মাত্রা নিচে নামছে ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.