কলকাতা, 13 এপ্রিল: শহরের যেকোনও জায়গায় নির্মাণ কাজ হলে এবার কিউআর কোড-সহ অনুমোদিত নকশার তথ্য বোর্ডে টাঙানো বাধ্যতামূলক । এমনটাই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা পুরনিগম । যদি নির্মাণস্থলের একাধিক প্রবেশপথ হয়, তাহলে প্রতিটি প্রবেশের মুখেই বাধ্যতামূলকভাবে লাগাতে হবে এই বোর্ড । আর এই নির্দেশ অমান্য করলেই কাজ বন্ধের নোটিশ লাগাবেন পুরকর্তারা ।
বড় নির্মাণের ক্ষেত্রে আকছার অভিযোগ মেলে, নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে ত্রুটি থাকার । অনেক ক্ষেত্রে আশপাশের বাসিন্দারা অভিযোগ করেন ৷ আবার অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্মাণে ফ্ল্যাট বা অফিসের ক্রেতারা । ফ্ল্যাট কেনার পর এক এক করে সেই সব আইনি ত্রুটি নজরে আসে, যেগুলি সুকৌশলে নির্মাণকারীরা এতদিন গোপন করে রেখে দিয়েছিলেন । এর ফলে সমস্যার মুখে পড়তে হয় ক্রেতাদের । সেই সমস্ত সমস্যার সমাধানেরই পথ বের করল এবার কলকাতা পুরনিগমের বিল্ডিং বিভাগ । এবার নির্মাণকারী বিল্ডিংয়ের খুঁটিনাটি তথ্য মুহূর্তে আগে ভাগেই জানতে পারবেন ক্রেতারা । এমনকি আশপাশের বাসিন্দারাও ।
নির্মাণ পুর আইন মেনে হচ্ছে তো ? মনে আর থাকবে না সংশয় । এই উদ্দেশ্যেই সম্প্রতি পুরনিগমের বিল্ডিং বিভাগ জারি করেছে একটি নির্দেশিকা । ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, নির্মাণস্থলের বাইরে লাগাতে হবে একটি 6 ফুট দৈর্ঘ্য ও 4 ফুট প্রস্থের টিনের বোর্ড । তাতে বিল্ডিং অনুমোদিত নকশার বিশদে তথ্য দিতে হবে । পাশাপাশি সেই বোর্ডে 1 ফুট দৈর্ঘ্য ও 1 ফুট প্রস্থ মাপের কিউআর কোড দিতে হবে । যেটা কেউ চাইলে স্ক্যান করে বিশদে অনুমোদিত নকশা-সহ সমস্ত তথ্য জানতে পারেন ।
এই বোর্ড এমন জায়গায় লাগাতে হবে যা সহজেই সকলের নজরে আসে । বড় প্রকল্পগুলোতে একাধিক প্রবেশপথ করা হলে, প্রতিটি প্রবেশের জায়গায় এই বোর্ড বাধ্যতামূলকভাবেই লাগাতে হবে । প্রতি বোর্ডেই থাকতে হবে কিউআর কোড । বোর্ডে কী কী তথ্য থাকবে নির্দেশিকায় সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছে পুর কর্তৃপক্ষ ।
পুরনিগমের নির্দেশিকা অনুযায়ী, বোর্ডে উল্লেখ করতে হবে নির্মাণস্থলের নম্বর, পশ্চিমবঙ্গ রেরা রেজিস্ট্রশন নম্বর, পরিকল্পনা অনুমোদন নম্বর, অনুমোদনের তারিখ, জমির ক্ষেত্রফল, অনুমোদিত ফ্লোর সংখ্যা । পাশাপাশি কিউআর কোড স্ক্যান করলে সকলে যা জানতে পারবে সেই তথ্যগুলি হল - নির্মাণস্থলের নম্বর, পশ্চিমবঙ্গ রেরা রেজিস্ট্রেশন নম্বর, নকশা অনুমোদন নম্বর, অনুমোদনের তারিখ, জমির ক্ষেত্রফল, অনুমোদিত ফ্লোর সংখ্যা, ওয়ার্ড নম্বর, বরো নম্বর, মোট ফ্লোর এলাকা, কতগুলি গাড়ি পার্কিং করা যাবে সেই সংখ্যা, আবাসিক কোনটা বাণিজ্যিক, এলবিএস-এর নাম, স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারের নাম, আবেদনকারীর নাম । নির্দেশমতো তথ্য যদি বোর্ড বা কিউআর কোডে না দেখা যায়, অথবা না দেওয়া হয়, তাহলে বিল্ডিং আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে পুর কর্তৃপক্ষ মনে করবে । আর তখনই 401 ধারায় নির্মাণ কাজ বন্ধের নোটিশ টাঙানো হবে নির্মাণস্থলে ।
এই প্রসঙ্গে কলকাতা পুরনিগমের এক আধিকারিক বলেন, "অনেক ক্ষেত্রেই ফ্ল্যাট কিনলে অগ্রিম দেওয়া বা অনেকটা টাকা মেটানোর পর নানা বিষয়ে সমস্যা সামনে আসে । এমনকি ফ্ল্যাটে ঢুকে যাওয়ার পরেও জটিলতার মুখে পড়তে হয় ক্রেতাদের । একইভাবে আশপাশের লোকজনকেও নির্মাণের কারণে নিয়ম না মানলে বা বেআইনিভাবে নির্মাণ করলে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় । এই ব্যবস্থার ফলে সমস্যাগুলি অনেকটাই কমানো সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে ।"