অশোকনগর, 8 জুন: অশোকনগর কিডনি পাচার-কাণ্ডে নয়া তথ্য পুলিশের হাতে! ধৃত আইনজীবী প্রদীপকুমার বরের মোবাইল ঘেঁটে এবার মিলল বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ। লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেনের সবটাই কিডনি পাচারের বলে মনে করছে বারাসত জেলা পুলিশ।
বিপুল এই টাকা কিডনি পাচারের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ধৃত আইনজীবী পেয়েছিলেন বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। তবে, কার কাছ থেকে তিনি কত টাকা পেয়েছিলেন? টাকার সঠিক পরিমাণ কত, তা ধৃত আইনজীবীকে জেরা করে জানার চেষ্টা করছেন বারাসত জেলা পুলিশের পদস্থ কর্তারা।
কিডনি পাচার চক্রে ধৃত আইনজীবীর মোবাইল থেকে আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে পেয়েছে পুলিশ। তদন্তকারীরা তাঁর মোবাইল ঘেঁটে একাধিক কিডনি দাতা, গ্রহীতার নাম যেমন হাতে পেয়েছেন। তেমনই উত্তর ও দক্ষিণ 24 পরগনা-সহ পাশ্ববর্তী জেলার কয়েকজন দালালের নামও জানতে পেরেছেন। ইতিমধ্যে সেই সমস্ত দালালের খোঁজ শুরু করেছে অশোকনগর থানার পুলিশ।

কিডনি পাচার চক্রে জড়িত দালালদের সঙ্গে প্রদীপকুমার বরের মোবাইলে কোনও কথোপকথন কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে কথাবার্তা ডিলিট হয়ে থাকলে তা উদ্ধার করতে ধৃত আইনজীবীর ফোন ফরেনসিকে পাঠাতে চাইছে তদন্তকারীরা। পুলিশের ধারণা, ধৃতের ফোন ফরেনসিক তদন্ত হলেই কিডনি পাচার চক্রে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসবে, যা তদন্তের অগ্রগতিতে সাহায্য করবে।
কিডনি দান করতে হলে দুটি বিষয় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।একটি জেলা ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের অনুমোদন। অন্যটি সরকারি নিয়ম মেনে কিডনি দাতাদের আদালত থেকে এফিডেভিট করানো। কিন্তু,অশোকনগর কিডনি পাচার চক্রের তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে সুদখোর মহাজন বিকাশ ওরফে শীতল এবং অমিত জানার মতো দালাল'রা কিডনি দাতাদের এফিডেভিট জোগাড় করতে আলিপুর আদালতের আইনজীবী প্রদীপকুমার বরের শরণাপন্ন হতেন। সেই সময় ওই আইনজীবী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে সহজেই এফিডেভিটের 'সম্মতি' আদায় করে নিতেন আদালত থেকে। এজন্য মোটা টাকা আদায় করতেন তিনি।
সূত্রের খবর, 500 টাকার এফিডেভিট জরুরি ভিত্তিতে করতে প্রদীপ 10 থেকে 15 হাজার টাকা নিতেন কিডনি চক্রের পাণ্ডাদের কাছ থেকে। এই ধরনের কতগুলি 'এফিডেভিট'সে করিয়েছে তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
এদিকে, কিডনি পাচার-কাণ্ডে ধৃত আইনজীবীকে জেরা করে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের নেফ্রোজিস্টের নামও জানতে পেরেছে অশোকনগর থানার পুলিশ। তাঁকে জেরা করে কিডনি পাচার চক্রে ওই নেফ্রোজিস্টের ভূমিকা ঠিক কী ছিল তা জানতে চাইছেন তদন্তকারীরা।
এই বিষয়ে বারাসত পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খাড়িয়া বলেন, "ধৃত আইনজীবীর ফোন থেকে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত-সহ আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে পেয়েছি আমরা। সেগুলি যাচাই করতেই আইনজীবীর ফোন ফরেনসিক তদন্তের জন্য পাঠানো হবে। আশা করছি সেখান থেকেও বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসবে।"