বোলপুর, রামপুরহাট, 16 সেপ্টেম্বর: বঙ্গোপসাগরে তৈরি গভীর নিম্নচাপের জেরে টানা বৃষ্টিতে সম্পূর্ণ জলমগ্ন কোপাই নদীর তীরে অবস্থিত সতীপীঠের অন্যতম কংকালীতলা মন্দির ৷ দেবীর গর্ভগৃহে পর্যন্ত ঢুকে গিয়েছে জল ৷ বন্ধ পুজার্চনা ৷ তবে দেবীর ভোগ নিবেদনে খামতি রাখেননি স্থানীয় মানুষজন ও কংকালীতলা গ্রাম পঞ্চায়েত ৷ এক বুক জলের মধ্যে দিয়ে মাথায় করে পুজোর সামগ্রী নিয়ে ভোগ নিবেদন করা হল সোমবার ৷
কংকালীতলা মন্দিরে সেবাইত রাজনারায়ণ চৌধুরী বলেন, "মন্দিরে পুজো বন্ধ । কিন্তু মায়ের ভোগ নিবেদন বন্ধ রাখলে তো হবে না ৷ পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান মামনদার নেতৃত্বে ভোগ নিবেদন করা হল ৷ আশা করি জল কমে যাবে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে ।" কংকালীতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান মহিউদ্দিন শেখ ওরফে মামন শেখ বলেন, "ভক্তদের জন্য পুজো বন্ধ ৷ তবে ভোগ নিবেদন করা হয় ৷ কোনও বিপদ যাতে না ঘটে তার জন্য ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছে ।"
কোপাই নদীর জল বইছে মন্দিরের উপর দিয়েই ৷ এই মরশুমে এক মাসের মধ্যে দু'বার জলমগ্ন হল কংকালীতলা মন্দির । হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, দক্ষযজ্ঞের সময় দেবীর কাঁকাল পড়েছিল শান্তিনিকেতন থানার অন্তর্গত কোপাই নদীর তীরে ৷ সেই থেকে এই স্থানের নাম কংকালীতলা । দেশের 51টি সতীপীঠের মধ্যে অন্যতম এই কংকালীতলা মন্দির । নিম্নচাপের জেরে দু'দিন ধরে টানা মুষলধারে বৃষ্টিতে বোলপুর-শান্তিনিকেতনের একাধিক জায়গা জলমগ্ন । কোপাই ও অজয় নদী কার্যত ফুঁসছে ৷ ইতিমধ্যেই তিলপাড়া জলাধার থেকে 7 হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে ।
জেলার মধ্যে সর্বাধিক বৃষ্টি হয়েছে দুবরাজপুর ও বোলপুরে ৷ শান্তিনিকেতন থানার কসবা হয়ে পাঁড়ুই যাওয়ার পথে কোপাই সেতুর উপর দিয়ে বইছে জল ৷ স্বাভাবিকভাবেই বন্ধ পারাপার । লাভপুরের বিস্তীর্ণ এলাকাও প্লাবিত ৷ বাদ যায়নি সতীপীঠের অন্যতম কংকালীতলা মন্দিরও ৷ কোপাই নদী প্লাবিত হয়ে দেবীর গর্ভগৃহেও জল ঢুকে গিয়েছে । জলমগ্ন সমগ্র মন্দির চত্বর-সহ বলি দেওয়ার স্থান, ভোগের স্থান, পবিত্র কুণ্ড পর্যন্ত প্লাবিত ৷ বন্ধ হয়ে গিয়েছে মন্দিরে সাধারণ মানুষের প্রবেশ ৷ তবে এক বুক জল পার হয়ে মাথায় করে দেবীর ভোগ ও পুজার সামগ্রী মন্দিরে নিয়ে আসা হয় ৷ রীতি মেনেই ভোগ নিবেদন করা হয় ৷ কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বোঝা যাচ্ছে না ৷ কারণ বোলপুরের চতুর্দিক জলমগ্ন । যদি আবারও বৃষ্টি হয় পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা ৷
একই ছবি ধরা পড়েছে তারাপীঠে ৷ দ্বারকা নদীর জল বেড়ে গিয়েছে ৷ যার ফলে সেই জল ঢুকেছে তারাপীঠ মহাশ্মশানে । ফলে শবদাহ করতে এসে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে । নদীর ধারে থাকা কয়েকটি লজেও জল ঢুকতে শুরু করেছে । দ্বারকা নদীর জলস্তর ঘণ্টায় ঘণ্টায় বেড়ে চলছে । তৈরি হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি । ফলে দুশ্চিন্তায় রয়েছে এলাকাবাসী ৷
দু'দিনের বৃষ্টিতে জলমগ্ন রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল । জল থইথই হাসপাতাল চত্বরে জলের মধ্যে দিয়েই রোগী নিয়ে স্ট্রেচারে করে যাতায়াত করছেন রোগীর আত্মীয়রা ৷ জরুরি বিভাগ-সহ পুরো হাসপাতাল চত্বর ভরে গিয়েছে জলে ৷ সেই জল পেরিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে রোগী থেকে শুরু করে হাসপাতালের নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকদের । হাসপাতালের বেহাল অবস্থায় ক্ষুব্ধ রোগীর পরিজন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর্মীরা ।
একটানা বৃষ্টির কারণে জলস্তর বেড়ে গিয়েছে বীরভূমের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বিভিন্ন নদীতে । একই সঙ্গে জলস্তর বেড়ে গিয়েছে বীরভূমের দ্বারকা, ব্রহ্মাণী ও বাঁশলৈ নদীতে । নদীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন নদীতে থাকা ব্যারেজ থেকে দফায় দফায় জল ছাড়া হচ্ছে । সোমবার সকাল থেকে ব্রহ্মাণী নদীর উপর থাকা বৈধরা জলাধার থেকে 3940 কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে । অন্যদিকে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে বাঁশলৈ নদী । বন্যার জলে ডুবে গিয়েছে বীরভূমের নলহাটির দেবগ্রামে ব্রহ্মাণী নদীর উপর থাকা কজওয়ে । সেখানে যাতায়াতের জন্য নৌকা চলাচল শুরু হয়েছে ।
রামপুরহাট চাকলা মাঠ এলাকায় জল ঢুকে পড়েছে বাড়িতে । ছফুকো কাঁদর ও ঝনঝনিয়া কাঁদর সংস্কার হয়নি বলে অভিযোগ তুলছে রামপুরহাট 16 নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা । রামপুরহাট পুরসভার 17 নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর সঞ্জীব মল্লিক বলেন, "রামপুরহাট ছফুকো কাঁদরের পাশে শাসকদলের মদতে বেশ কয়েকটি বহুতলের নির্মাণ হয়েছে অবৈধভাবে । কাঁদর সংস্কার তো দূরের কথা । কাঁদর দখল করে চলছে অবৈধ নির্মাণ ৷ ফলে স্বাভাবিকভাবেই জল শহর থেকে বেরোতে পারছে না । জলমগ্ন হয়ে যাচ্ছে এলাকা । মাসখানেক আগেই 16 ওয়ার্ডের কাঁদর লাগোয়া একটি নির্মাণ অভিযোগ হওয়ায় বন্ধ করে পুরসভা । কিন্তু কয়েক দিন ধরে দেখছি আবার নির্মাণ আরম্ভ হয়েছে ।"