ETV Bharat / state

উত্তর-পূর্ব ভারতে ঈদের বস্ত্র বাজারে নিয়ন্ত্রণ কালিয়াচকের, এবার ব্যবসা ছাড়াবে হাজার কোটি ! - EID 2025

উত্তর-পূর্ব ভারতে ঈদের বস্ত্র বাজারের নিয়ন্ত্রণ কার্যত রয়েছে মালদার কালিয়াচকের হাতে ৷ এবার ব্যবসা হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা ৷

ETV BHARAT
উত্তর-পূর্ব ভারতে ঈদের বস্ত্র বাজারে নিয়ন্ত্রণ কালিয়াচকের (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : March 28, 2025 at 6:19 PM IST

6 Min Read

মালদা, 27 মার্চ: কালিয়াচক ৷ নাম শুনলেই সবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে জাল নোট, অস্ত্রের দাপাদাপি আর পরিযায়ী শ্রমিকের ভিড় ৷ কিন্তু অন্ধকারেও আলোর রেখার দেখা মেলে ৷ সেই আলো মিলেছে কালিয়াচকেও ৷ বেশ কয়েক বছর ধরে মালদা, সংশ্লিষ্ট জেলা ও রাজ্য, এমনকি উত্তর-পূর্ব ভারতে ঈদের কাপড় বাজার কার্যত নিয়ন্ত্রণ করছে এই কালিয়াচক ৷ প্রতি বছরই ব্যবসার পরিধি বাড়ছে ৷ এবার সেই ব্যবসা হাজার কোটি টাকার গণ্ডি ছাড়িয়ে যেতে চলেছে ৷ এনিয়ে নিশ্চিত কালিয়াচকের বস্ত্র ব্যবসায়ীরা ৷

আর গোনার মত দিন নেই ৷ এখন ঈদের চাঁদ দেখার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন ইসলাম সম্প্রদায়ের মানুষ ৷ সব ঠিক থাকলে আগামী রবিবার রাতেই দেখা মিলবে কাস্তে চাঁদের ৷ সোমবার ইদের খুশি ছড়িয়ে পড়বে এক কোনা থেকে আরেক কোনায় ৷ মালদা মুসলিম অধ্যুষিত জেলা ৷ 2011 সালের জনগণনা অনুযায়ী দেখা যায়, এই জেলায় ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষ রয়েছেন 51.27 শতাংশ ৷ পরের 14 বছরে সেই হার যে আরও অনেক বেড়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷ ফলে যে কোনও ঈদেই এই জেলায় জামা-কাপড়ের ব্যবসা ভালো হয় ৷ ব্যবসায়ীদের একাংশ জানাচ্ছেন, 2024 সালে গোটা জেলায় এই ব্যবসার পরিমাণ ছিল প্রায় 1200 কোটি টাকা ৷ তার মধ্যে কালিয়াচক থেকেই ব্যবসা হয়েছে প্রায় 900 কোটি টাকার ৷

কালিয়াচকে এবার ঈদের বস্ত্র বাজারের ব্যবসা ছাড়াবে হাজার কোটি ! (নিজস্ব ভিডিয়ো)

বিশ্বজোড়া মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব এখন গোটা দেশে ৷ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম ৷ ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ কবে থামবে জানা নেই ৷ কিন্তু আকাশছোঁয়া বাজার যে আর কখনও মাটিতে নেমে আসবে না তা বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছে সবাই ৷ তার প্রভাব পড়েছে এবারের ইদের বাজারেও ৷ সামনেই ঈদের খুশিতে মেতে উঠবে মালদাবাসী ৷ কিন্তু চার ঠিক আগে জামা-কাপড়ের বাজারে সেই ভিড় কোথায় ? তবে ব্যবসায়ীরা জানালেন, বাজারে ভিড় বাড়ছে দুপুরের পর থেকে ৷ সন্ধের সময় পা রাখার জায়গা থাকছে না ৷

কালিয়াচকের হংকং মার্কেটে ছোট্ট দোকান মহম্মদ সেন্টু শেখের ৷ তিনি জানালেন, “ঈদের ব্যবসা এবার ভালো হয়েছে ৷ গত বছরের থেকে এবার ব্যবসা বেড়েছে ৷ বেশিরভাগ মানুষেরই নতুন জামা-কাপড় কেনা হয়ে গিয়েছে ৷ তবে এখনও ভিড় হচ্ছে ৷ দুপুরের পর থেকে ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়ছে ৷ আমার খুব ছোট দোকান ৷ আমার দোকানে মালদার বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও রায়গঞ্জ, বহরমপুর, ধুলিয়ান, এমনকি ঝাড়খণ্ড থেকেও ক্রেতা আসছে ৷ কালিয়াচকে হংকং মার্কেটের মতো ছ’টি জামা-কাপড়ের খুচরো মার্কেট রয়েছে ৷ প্রতিটি মার্কেটে 70-80টি করে দোকান ৷ অর্থাৎ গোটা কালিয়াচকে প্রায় 500 জামা-কাপড়ের দোকান রয়েছে ৷”

আরেক ব্যবসায়ী মুর্শেদ আলি বললেন, “আর তিনদিন বাজার চলবে ৷ সোমবার ঈদ ৷ এবার প্রথম রোজা থেকেই মানুষ বাজার করতে শুরু করেছিল ৷ যত সময় পেরিয়েছে, তত বেশি মানুষ বাজারে এসেছে ৷ তবে অন্যান্য বছরের মতো এবার বাজারে হঠাৎ করে ভিড় লাফিয়ে উঠছে না ৷ গোটা সময় ধরেই অল্পবিস্তর ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে ৷ আমি গত বছর ঈদে ভালো ব্যবসা করেছিলাম, এবারও ভালোই চলছে ৷ আমরা খুচরো ব্যবসায়ী ৷ প্রতি বছর আমার দোকানে বাইরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতা আসে ৷ কিন্তু এবার বাইরের ক্রেতা খানিকটা কম ৷ অন্যান্য বছর বিহার আর ঝাড়খণ্ডের প্রচুর ক্রেতা পাই ৷ এবার সেভাবে পাইনি ৷”

ETV BHARAT
প্রতি বছরই বাড়ছে ব্যবসার পরিধি (নিজস্ব চিত্র)

কালিয়াচক বাজারে জামা-কাপড়ের দুটি বড় দোকান মহম্মদ ইনজামুল হকের ৷ তাঁর কথায়, “গত বছরের থেকে এবার ব্যবসা খানিকটা বেড়েছে ৷ মালদা তো বটেই, আশেপাশের জেলা, বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে এবার প্রচুর ক্রেতা আমার দোকানে এসেছে ৷ মালদা শহরের মানুষও এখানে বাজার করতে আসে ৷ তবে উত্তরবঙ্গ কিংবা উত্তর-পূর্ব ভারতের কোনও রাজ্য থেকে ক্রেতারা আমাদের মতো খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছে আসে না ৷ আমার দুটি দোকান ৷ এবার এখনও পর্যন্ত 20 লাখ টাকার বেশি ব্যবসা করেছি ৷ প্রায় প্রতিটি বড় খুচরো দোকানেই এমন ব্যবসা হয়েছে ৷ পুজোর সময়ও আমাদের ব্যবসা হয় ৷ তবে ঈদের তুলনায় অর্ধেক ৷”

ETV BHARAT
কালিয়াচকে চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা (নিজস্ব চিত্র)

এবার ঈদের ব্যবসা মুখে হাসি ফুটিয়েছে পাইকারি ব্যবসায়ীদেরও ৷ কালিয়াচক মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মহম্মদ নাজিমুদ্দিন নিজেও একজন পাইকারি বস্ত্র ব্যবসায়ী ৷ তিনি জানান, “এবার 12টি রোজা পেরিয়ে যাওয়ার পর বাজারে প্রচুর ক্রেতা এসেছেন ৷ তার আগে অল্প অল্প করে ব্যবসা চলছিল ৷ কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতেই বাজার গতি পায় ৷ এবার বস্ত্র শিল্পের প্রতিটি বিভাগের ব্যবসা খুব ভালো হচ্ছে ৷ কিছু মাল কিন্তু আমাদের কালিয়াচকেও তৈরি হয় ৷ সেসব অসম, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মেঘালয়ের মতো রাজ্যেও যাচ্ছে ৷ ঝাড়খণ্ড আর বিহার তো আছেই ৷"

ETV BHARAT
কাপড়ের বাজারের পরিকাঠামো ভালো করার দাবি ব্যবসায়ীদের (নিজস্ব চিত্র)

এবারের ব্যবসা দ্বিগুণ হবে আশা করে তিনি বলেন, "ঈদ একেবারে সামনে চলে এসেছে ৷ এখন বাজারে প্রচণ্ড ভিড় ৷ বিশেষ করে মেয়েদের ভিড় বেশি ৷ আমাদের ধারণা, এবার গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ ব্যবসা হবে ৷ এবার ব্যবসার পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে ৷ তবে ঈদ শেষ হলে সঠিক হিসাব পাওয়া যাবে ৷ এভাবে চলতে থাকলে কালিয়াচকের ব্যবসা ভবিষ্যতে গোটা দেশে অন্যতম হয়ে উঠবে ৷ কিন্তু এখানে মূল সমস্যা হল জায়গার অভাব ৷ ছোট্ট জায়গা ৷ এখানে জামা-কাপড়ের পাইকারি বাজার নেই ৷ সেই বাজার করার মতো জায়গাও নেই ৷ জেলা প্রশাসনকে এখনও না জানালেও আমরা বিষয়টি মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনকে বলেছিলাম ৷ কিন্তু আমাদের কোনও কথার গুরুত্ব দেওয়া হয় না ৷ জেলা প্রশাসনও দেয় না ৷”

এবিষয়ে জেলার বণিকসভা, মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি জয়ন্ত কুণ্ডু বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে কালিয়াচকে কাপড়ের ব্যবসার পরিমাণ দ্রুতগতিতে বাড়ছে ৷ সেখান থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের অনেক রাজ্যে মাল যাচ্ছে ৷ এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত, পার্শ্ববর্তী বিহার ও ঝাড়খণ্ডেও কালিয়াচক থেকে মাল যায় ৷ ঈদের সময় মুসলিম মানুষজন প্রচুর পরিমাণে জামা-কাপড় কিনে থাকেন ৷ গত বছর ঈদেও কালিয়াচকে 500 থেকে 700 কোটি টাকার কাপড়ের ব্যবসা হয়েছিল ৷ এবার তাঁরা অনুমান করছেন, ব্যবসার পরিমাণ হাজার কোটি টাকা হবে ৷"

তবে তাঁর মতে, "কিন্তু কালিয়াচকে ভালো ব্যবসা হলেও মালদা শহরের পাইকারি ব্যবসায়ীরা এবার ঈদে তেমন ব্যবসা করতে পারেননি ৷ কারণ, অনলাইন শপিং আর ছোট-বড় একাধিক মল ৷ শহরের ছোট ব্যবসায়ীদের উপর এসবের প্রভাব না পড়লেও বড় ব্যবসায়ীদের উপর পড়েছে ৷ আশা করব, আগামী দিনে কালিয়াচকে জামা-কাপড়ের ব্যবসার একটা হাব তৈরি হবে ৷ এতে গোটা জেলার অর্থনৈতিক উন্নতি হবে ৷ তবে কালিয়াচকে জায়গার যে অভাব রয়েছে সেটা ঠিক ৷ আমরা রাজ্য সরকারকে বারবার বলেছি, কালিয়াচকে ভালো ব্যবসায়িক পরিকাঠামো প্রয়োজন ৷ বড় গুদাম, মার্কেট কালিয়াচকে নেই ৷ কালিয়াচকের ব্যবসা যদি বাড়াতে হয়, সেখানকার ব্যবসায়ীদের নিয়েই প্রশাসন ও রাজ্য সরকারকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে হবে ৷”

মালদা, 27 মার্চ: কালিয়াচক ৷ নাম শুনলেই সবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে জাল নোট, অস্ত্রের দাপাদাপি আর পরিযায়ী শ্রমিকের ভিড় ৷ কিন্তু অন্ধকারেও আলোর রেখার দেখা মেলে ৷ সেই আলো মিলেছে কালিয়াচকেও ৷ বেশ কয়েক বছর ধরে মালদা, সংশ্লিষ্ট জেলা ও রাজ্য, এমনকি উত্তর-পূর্ব ভারতে ঈদের কাপড় বাজার কার্যত নিয়ন্ত্রণ করছে এই কালিয়াচক ৷ প্রতি বছরই ব্যবসার পরিধি বাড়ছে ৷ এবার সেই ব্যবসা হাজার কোটি টাকার গণ্ডি ছাড়িয়ে যেতে চলেছে ৷ এনিয়ে নিশ্চিত কালিয়াচকের বস্ত্র ব্যবসায়ীরা ৷

আর গোনার মত দিন নেই ৷ এখন ঈদের চাঁদ দেখার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন ইসলাম সম্প্রদায়ের মানুষ ৷ সব ঠিক থাকলে আগামী রবিবার রাতেই দেখা মিলবে কাস্তে চাঁদের ৷ সোমবার ইদের খুশি ছড়িয়ে পড়বে এক কোনা থেকে আরেক কোনায় ৷ মালদা মুসলিম অধ্যুষিত জেলা ৷ 2011 সালের জনগণনা অনুযায়ী দেখা যায়, এই জেলায় ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষ রয়েছেন 51.27 শতাংশ ৷ পরের 14 বছরে সেই হার যে আরও অনেক বেড়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷ ফলে যে কোনও ঈদেই এই জেলায় জামা-কাপড়ের ব্যবসা ভালো হয় ৷ ব্যবসায়ীদের একাংশ জানাচ্ছেন, 2024 সালে গোটা জেলায় এই ব্যবসার পরিমাণ ছিল প্রায় 1200 কোটি টাকা ৷ তার মধ্যে কালিয়াচক থেকেই ব্যবসা হয়েছে প্রায় 900 কোটি টাকার ৷

কালিয়াচকে এবার ঈদের বস্ত্র বাজারের ব্যবসা ছাড়াবে হাজার কোটি ! (নিজস্ব ভিডিয়ো)

বিশ্বজোড়া মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব এখন গোটা দেশে ৷ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম ৷ ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ কবে থামবে জানা নেই ৷ কিন্তু আকাশছোঁয়া বাজার যে আর কখনও মাটিতে নেমে আসবে না তা বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছে সবাই ৷ তার প্রভাব পড়েছে এবারের ইদের বাজারেও ৷ সামনেই ঈদের খুশিতে মেতে উঠবে মালদাবাসী ৷ কিন্তু চার ঠিক আগে জামা-কাপড়ের বাজারে সেই ভিড় কোথায় ? তবে ব্যবসায়ীরা জানালেন, বাজারে ভিড় বাড়ছে দুপুরের পর থেকে ৷ সন্ধের সময় পা রাখার জায়গা থাকছে না ৷

কালিয়াচকের হংকং মার্কেটে ছোট্ট দোকান মহম্মদ সেন্টু শেখের ৷ তিনি জানালেন, “ঈদের ব্যবসা এবার ভালো হয়েছে ৷ গত বছরের থেকে এবার ব্যবসা বেড়েছে ৷ বেশিরভাগ মানুষেরই নতুন জামা-কাপড় কেনা হয়ে গিয়েছে ৷ তবে এখনও ভিড় হচ্ছে ৷ দুপুরের পর থেকে ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়ছে ৷ আমার খুব ছোট দোকান ৷ আমার দোকানে মালদার বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও রায়গঞ্জ, বহরমপুর, ধুলিয়ান, এমনকি ঝাড়খণ্ড থেকেও ক্রেতা আসছে ৷ কালিয়াচকে হংকং মার্কেটের মতো ছ’টি জামা-কাপড়ের খুচরো মার্কেট রয়েছে ৷ প্রতিটি মার্কেটে 70-80টি করে দোকান ৷ অর্থাৎ গোটা কালিয়াচকে প্রায় 500 জামা-কাপড়ের দোকান রয়েছে ৷”

আরেক ব্যবসায়ী মুর্শেদ আলি বললেন, “আর তিনদিন বাজার চলবে ৷ সোমবার ঈদ ৷ এবার প্রথম রোজা থেকেই মানুষ বাজার করতে শুরু করেছিল ৷ যত সময় পেরিয়েছে, তত বেশি মানুষ বাজারে এসেছে ৷ তবে অন্যান্য বছরের মতো এবার বাজারে হঠাৎ করে ভিড় লাফিয়ে উঠছে না ৷ গোটা সময় ধরেই অল্পবিস্তর ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে ৷ আমি গত বছর ঈদে ভালো ব্যবসা করেছিলাম, এবারও ভালোই চলছে ৷ আমরা খুচরো ব্যবসায়ী ৷ প্রতি বছর আমার দোকানে বাইরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতা আসে ৷ কিন্তু এবার বাইরের ক্রেতা খানিকটা কম ৷ অন্যান্য বছর বিহার আর ঝাড়খণ্ডের প্রচুর ক্রেতা পাই ৷ এবার সেভাবে পাইনি ৷”

ETV BHARAT
প্রতি বছরই বাড়ছে ব্যবসার পরিধি (নিজস্ব চিত্র)

কালিয়াচক বাজারে জামা-কাপড়ের দুটি বড় দোকান মহম্মদ ইনজামুল হকের ৷ তাঁর কথায়, “গত বছরের থেকে এবার ব্যবসা খানিকটা বেড়েছে ৷ মালদা তো বটেই, আশেপাশের জেলা, বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে এবার প্রচুর ক্রেতা আমার দোকানে এসেছে ৷ মালদা শহরের মানুষও এখানে বাজার করতে আসে ৷ তবে উত্তরবঙ্গ কিংবা উত্তর-পূর্ব ভারতের কোনও রাজ্য থেকে ক্রেতারা আমাদের মতো খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছে আসে না ৷ আমার দুটি দোকান ৷ এবার এখনও পর্যন্ত 20 লাখ টাকার বেশি ব্যবসা করেছি ৷ প্রায় প্রতিটি বড় খুচরো দোকানেই এমন ব্যবসা হয়েছে ৷ পুজোর সময়ও আমাদের ব্যবসা হয় ৷ তবে ঈদের তুলনায় অর্ধেক ৷”

ETV BHARAT
কালিয়াচকে চলছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা (নিজস্ব চিত্র)

এবার ঈদের ব্যবসা মুখে হাসি ফুটিয়েছে পাইকারি ব্যবসায়ীদেরও ৷ কালিয়াচক মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মহম্মদ নাজিমুদ্দিন নিজেও একজন পাইকারি বস্ত্র ব্যবসায়ী ৷ তিনি জানান, “এবার 12টি রোজা পেরিয়ে যাওয়ার পর বাজারে প্রচুর ক্রেতা এসেছেন ৷ তার আগে অল্প অল্প করে ব্যবসা চলছিল ৷ কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পেতেই বাজার গতি পায় ৷ এবার বস্ত্র শিল্পের প্রতিটি বিভাগের ব্যবসা খুব ভালো হচ্ছে ৷ কিছু মাল কিন্তু আমাদের কালিয়াচকেও তৈরি হয় ৷ সেসব অসম, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মেঘালয়ের মতো রাজ্যেও যাচ্ছে ৷ ঝাড়খণ্ড আর বিহার তো আছেই ৷"

ETV BHARAT
কাপড়ের বাজারের পরিকাঠামো ভালো করার দাবি ব্যবসায়ীদের (নিজস্ব চিত্র)

এবারের ব্যবসা দ্বিগুণ হবে আশা করে তিনি বলেন, "ঈদ একেবারে সামনে চলে এসেছে ৷ এখন বাজারে প্রচণ্ড ভিড় ৷ বিশেষ করে মেয়েদের ভিড় বেশি ৷ আমাদের ধারণা, এবার গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ ব্যবসা হবে ৷ এবার ব্যবসার পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে ৷ তবে ঈদ শেষ হলে সঠিক হিসাব পাওয়া যাবে ৷ এভাবে চলতে থাকলে কালিয়াচকের ব্যবসা ভবিষ্যতে গোটা দেশে অন্যতম হয়ে উঠবে ৷ কিন্তু এখানে মূল সমস্যা হল জায়গার অভাব ৷ ছোট্ট জায়গা ৷ এখানে জামা-কাপড়ের পাইকারি বাজার নেই ৷ সেই বাজার করার মতো জায়গাও নেই ৷ জেলা প্রশাসনকে এখনও না জানালেও আমরা বিষয়টি মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনকে বলেছিলাম ৷ কিন্তু আমাদের কোনও কথার গুরুত্ব দেওয়া হয় না ৷ জেলা প্রশাসনও দেয় না ৷”

এবিষয়ে জেলার বণিকসভা, মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি জয়ন্ত কুণ্ডু বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে কালিয়াচকে কাপড়ের ব্যবসার পরিমাণ দ্রুতগতিতে বাড়ছে ৷ সেখান থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের অনেক রাজ্যে মাল যাচ্ছে ৷ এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত, পার্শ্ববর্তী বিহার ও ঝাড়খণ্ডেও কালিয়াচক থেকে মাল যায় ৷ ঈদের সময় মুসলিম মানুষজন প্রচুর পরিমাণে জামা-কাপড় কিনে থাকেন ৷ গত বছর ঈদেও কালিয়াচকে 500 থেকে 700 কোটি টাকার কাপড়ের ব্যবসা হয়েছিল ৷ এবার তাঁরা অনুমান করছেন, ব্যবসার পরিমাণ হাজার কোটি টাকা হবে ৷"

তবে তাঁর মতে, "কিন্তু কালিয়াচকে ভালো ব্যবসা হলেও মালদা শহরের পাইকারি ব্যবসায়ীরা এবার ঈদে তেমন ব্যবসা করতে পারেননি ৷ কারণ, অনলাইন শপিং আর ছোট-বড় একাধিক মল ৷ শহরের ছোট ব্যবসায়ীদের উপর এসবের প্রভাব না পড়লেও বড় ব্যবসায়ীদের উপর পড়েছে ৷ আশা করব, আগামী দিনে কালিয়াচকে জামা-কাপড়ের ব্যবসার একটা হাব তৈরি হবে ৷ এতে গোটা জেলার অর্থনৈতিক উন্নতি হবে ৷ তবে কালিয়াচকে জায়গার যে অভাব রয়েছে সেটা ঠিক ৷ আমরা রাজ্য সরকারকে বারবার বলেছি, কালিয়াচকে ভালো ব্যবসায়িক পরিকাঠামো প্রয়োজন ৷ বড় গুদাম, মার্কেট কালিয়াচকে নেই ৷ কালিয়াচকের ব্যবসা যদি বাড়াতে হয়, সেখানকার ব্যবসায়ীদের নিয়েই প্রশাসন ও রাজ্য সরকারকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে হবে ৷”

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.