কলকাতা, 15 মে: উত্তরবঙ্গের চা বলয়ের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লা বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। কলকাতায় তৃণমূল ভবনে এসে ঘাসফুল প্রতীকে আস্থা প্রকাশ করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই গুঞ্জন চলছিল, বিজেপি-র সঙ্গে তাঁর দূরত্বও বেড়েছে।
এদিন সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তিনি রাজ্যের শাসকদলে নাম লেখালেন। আর তৃণমূলে যোগদানের আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জন বার্লা বলেন, “2007 সালের আদিবাসী আন্দোলনের পর থেকেই জমির পাট্টা পাওয়ার দাবি উঠেছিল। এত বছরেও সেই দাবি পূরণ হয়নি। কিন্তু দিদির সরকার এসে সেটা বাস্তব করল। মাত্র পাঁচ ডেসিমাল হলেও, জমি তো পেল চা বাগানের শ্রমিকরা। এটা আমাদের কাছে ঐতিহাসিক মুহূর্ত।”
তিনি আরও বলেন, “অসমের ডবল ইঞ্জিন সরকার যেখানে আট লক্ষ শ্রমিকের জন্য এক ইঞ্চি জমিও দেয়নি, সেখানে আমাদের রাজ্যে মাত্র চার লক্ষ শ্রমিক থাকা সত্ত্বেও এই উদ্যোগ কার্যকর হয়েছে। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। উনি চা সুন্দরী, দুয়ারে সরকার, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার— একের পর এক প্রকল্পের মাধ্যমে চা বলয়ের উন্নয়নে নজির গড়েছেন। আজ রাজ্যের হাজার হাজার চা শ্রমিক এই প্রকল্পগুলির সুবিধা পাচ্ছেন।”
জন বার্লা আরও বলেন, “আসামে এক কোটিরও বেশি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ থাকলেও এখনও তারা উপজাতি হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। অথচ পশ্চিমবঙ্গে দিদি আদিবাসীদের মর্যাদা দিয়েছেন। আমি এখন বুঝতে পারছি, কারা সত্যিই আমাদের উন্নয়নের কথা ভাবে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিই, আমি সেই নেত্রীর সঙ্গে থাকব যিনি কাজ করে দেখিয়েছেন।” তিনি জানান, চা বাগানের আরও কিছু সমস্যা রয়েছে, যেমন পরিকাঠামো, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুযোগ— এসব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করবেন। তাঁর কথায়, “আমি জানি, দিদির কাছে গেলে কোনও সমস্যাই অমীমাংসিত থাকে না। আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি ও অধিকার নিয়ে তিনি আন্তরিক। সবচেয়ে বড় কথা তিনি সবাইকে নিয়ে চলেন। সব ধর্ম সব জাতির মানুষকে সম্মান করেন। কেউকে ভাগ করেন না।”
তিনি বলেন,"বিজেপি ভাগাভাগির রাজনীতি করে। হিন্দু মুসলমানের মধ্যে ভাগ করে, আদিবাসীদের মধ্যেও ভাগাভাগির চেষ্টা করে। সেই কারণে আমি আনন্দিত যে সময় থাকতে বিজেপি থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি।" জন বার্লার এই দলবদল উত্তরবঙ্গের রাজনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বিজেপির আদিবাসী মুখ হিসেবে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা যেমন ছিল, তেমনই তাঁর এই সিদ্ধান্ত আদিবাসী সমাজ ও চা শ্রমিকদের মনোভাবেও পরিবর্তন আনতে পারে বলে মত বিশ্লেষকদের।