কলকাতা, 8 এপ্রিল: কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি তথা বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করলেন দশ জন চাকরিহারা শিক্ষক ৷ এরপর তাঁদের নিয়ে সল্টলেকে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) দফতরে যান তিনি ৷ এদিকে এদিন দফতরে উপস্থিত ছিলেন না এসএসসি'র চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার ৷ তাই তাঁর সঙ্গে দেখা হয়নি বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ও চাকরিহারা শিক্ষকদের ৷
চাকরিহারা দশ শিক্ষক: সুমন বিশ্বাস, ভাস্কর ঘোষ, ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল, অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্য, রাজীব হাঁসদা, পল্লব দত্ত, সুদীপ কোনার, অভিজিৎ করণ, বাপ্পাদিত্য সর্দার এবং শ্বেতা রায় ৷ বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "মানুষের ভাতের থালা, শিশুর 'বেবি ফুড' সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৷ এর জন্য রাজ্য সরকার দায়ী ৷"
3 এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের রায়ে পর প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যোগ্য শিক্ষকদের চাকরি বাঁচাতে মুুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে একসঙ্গে কাজ করার আবেদন জানিয়েছিলেন ৷ এবিষয়ে অবশ্য সরকারের তরফে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি ৷
এদিন তিনি তীব্র কটাক্ষ করে বলেন, "আমি বলেছিলাম রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করুন ৷ তিনি সেটা করতে পারেননি ৷"
এদিন এসএসসি দফতরে গিয়ে চেয়ারম্যানের দেখা না পাওয়া প্রসঙ্গে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "তিনি নাই থাকতে পারেন ৷ অন্যান্য আধিকারিকরা ছিলেন ৷ তাঁরা চেয়ারম্যানের কাছে বার্তা পৌঁছে দেবেন ৷" তাঁর হুঁশিয়ারি এই চাকরি হারানোর ঘটনায় সারা বাংলা জুড়ে আরও বড় আন্দোলন তৈরি হবে ৷
তিনি বলেন, "পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা তো তৃণমূল কংগ্রেস ধ্বংস করেছে ৷ এখন সুপ্রিম কোর্ট আর বিজেপিকে দোষ দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এসএসসি যোগ্য-অযোগ্যর তালিকা বাছাই করতে পারবে ৷" প্রাক্তন বিচারপতির অভিযোগ, "কিন্তু এটা করতে দেওয়া হয়নি, এটা মুখ্যমন্ত্রীর আদেশেই করতে দেওয়া হয়নি ৷"
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় স্পষ্ট বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর একটা পরিকল্পনা ছিল- যোগ্য এবং অযোগ্যদের মধ্যে গুলিয়ে দিলে আদালত বলবে যে এদের আর আলাদা করা যাচ্ছে না তাই সকলের চাকরি থাকুক ৷ কিন্তু, তিনি যখন দেখলেন আদালত অন্য সুর গাইল, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে একটা স্টে অর্ডার নিলেন ৷ কিন্তু, তিনি এটা জানেন না যে, সেই অর্ডার হচ্ছে একটা ইন্টেরিম অর্ডার বা অন্তরবর্তী আদেশ ৷ এর চূড়ান্ত রায়টা হয় পরবর্তীকালে ৷"
তমলুক লোকসভার বিজেপি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "এটা তৃণমূল ভেঙে যাওয়ার একটা সূত্রপাত হতে পারে ৷ এভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাকিদের কুকথার সম্মুখীন হতে বাধ্য করছেন ৷ আর তিনি নিজে নবান্নে বসে গঙ্গার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন ৷ শিক্ষকদের স্কুলে যেতে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেআইনি কথা বলছেন ৷"
গত 3 এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট 2016 সালের এসএসসি'র পুরো প্যানেল বাতিল কর দেয় ৷ এক বছর আগে একই রায় দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ সেই রায় বহাল রাখে দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ ৷ দুই বিচারপতি এসএসসির নিয়োগ প্রক্রিয়াতে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে রায় দেন ৷ এই রায়ের কোপে চাকরি হারান যোগ্য ও অযোগ্য দুই ধরনের শিক্ষক ৷ 25 হাজার 752 জনের চাকরি বাতিল হয় ৷
স্বাভাবিক ভাবেই এই রায়ে শোরগোল পড়ে যায় সারা রাজ্যে ৷ বর্তমান সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বিচারপতি থাকাকালীন তাঁর এজলাসে এই মামলার শুনানি হয়েছিল ৷ উল্লেখ্য এই রায় ঘোষণার পর তিনি সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, এখনও যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের আলাদা করা সম্ভব ৷ তিনি মুখ্য়মন্ত্রীর কাছে একটি কমিটি গড়ার আবেদন জানিয়েছিলেন ৷ রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকদের চাকরি ফেরানোর জন্য পদক্ষেপের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে মৌখিক আর্জি জানিয়েছিলেন ৷
এদিকে গতকাল নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে চাকরিহারা 'যোগ্য' শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি যোগ্য শিক্ষকদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থার আশ্বাস দেন ৷ তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন- "যোগ্যদের চাকরি যাবে না ৷ সরকার কোনও একটা ব্যবস্থা অবশ্যই করবে ৷ আপনারা চিন্তা করবেন না ৷ আপনারা নিজেদের কাজ করুন ৷"
এছাড়া, তিনি চাকরিহারা শিক্ষকদের ঐচ্ছিকভাবে অর্থাৎ ভলান্টিয়ারি সার্ভিসের পরামর্শ দেন ৷ সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আপনাদের এখনও সরকার বরখাস্ত করেনি ৷ আপনারা স্কুলে যান ৷ ঐচ্ছিকভাবে যে কেউ কাজ করতে পারেন ৷"
অন্যদিকে, 7 এপ্রিল 26 হাজার চাকরি বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে মধ্য়শিক্ষা পর্ষদ ৷ তাদের আবেদন, নতুন নিয়োগ না-হওয়া পর্যন্ত বা চলতি শিক্ষাবর্ষ শেষ না-হওয়া পর্যন্ত এই চাকরিহারা শিক্ষকদের চাকরি বহাল থাকুক ৷