জলপাইগুড়ি, 26 এপ্রিল: জলপাইগুড়ির কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের বিচারাধীন বন্দির মৃত্যু। অভিযোগ, পরিবারকে না জানিয়েই কলকাতায় চিকিৎসা করাতে পাঠিয়েছিল জেল কর্তৃপক্ষ। সেখানেই মৃত্যু হয় বিচারাধীন ওই আদিবাসী বন্দির। মৃত বন্দির নাম মতিলাল নায়েক (67) ৷ তিনি রায়পুর চা বাগানের গুদাম লাইনের বাসিন্দা ছিলেন ৷ কলকাতায় গিয়ে তাঁর দেহ আনার সামর্থ নেই পরিবারের। জেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ বন্দির পরিবার ।
পরিবারের তরফে জানা গিয়েছে, শ্বশুর ও জামাইয়ের মধ্যে বিবাদকে কেন্দ্র করেই রক্তারক্তি ঘটনা ঘটে । অভিযোগ, শ্বশুর মতিলাল নায়েক ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে জামাই বীরপাল নায়েককে । হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় বীরলালের । এরপর কোতয়ালি থানার পুলিশ মতিলালকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায় । তারপর থেকে মতিলাল জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেই বিচারাধীন বন্দি ছিলেন ।
রায়পুর চা বাগানের প্রধান হেমব্রম বলেন, "হঠাৎ করে আমাদের কাছে খবর আসে মতিলাল কলকাতা মেডিক্যালে মারা গিয়েছেন । শুনে আমরা অবাক হয়ে যাই । কারণ আমরা জানতামই না মতিলালকে কলকাতার আলিপুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে । কী হয়েছিল সেটাও আমাদের জেল কর্তৃপক্ষ জানায়নি । আমাদের এখন জেল থেকে জানানো হয়েছে দেহ কলকাতা থেকে গিয়ে নিয়ে আসতে হবে । আমাদের চা বাগান বন্ধ । পরিবারের অবস্থাও ভালো নয় ৷ কীভাবে দেহ আনব বুঝতে পারছি না ।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইতে এলে তারা কোনও সদুত্তর দিচ্ছে না । আমাদের সহযোগিতাও করছে না । তাই আমরা বাধ্য হয়েই জেলা পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে সব কিছু জানালাম । আমরা চাইছি ঘটনায় তদন্ত হোক । শুধু তাই নয়, কীভাবে মতিলাল মারা গেলেন, কেন অসুস্থ হওয়ার পর পরিবারকে জেল কর্তৃপক্ষ জানালো না, তাও জানতে চাই আমরা ।"
এদিকে মতিলালের আত্মীয় অজিত নায়েক বলেন, "জলপাইগুড়ি সংশোধনাগারে বিচারাধীন বন্দি ছিলেন আমার পিসেমশাই। কিন্তু তাঁকে জেল থেকে কবে কলকাতা চিকিৎসার জন্য পাঠানো হল ৷ কী হয়েছিল আমরা কিছুই জানানো হয়নি জেল থেকে । মারা যাওয়ার পর আমাদের জানানো হল । এখন আমাদের জেল থেকে জানানো হচ্ছে কলকাতায় গিয়ে দেহ নিয়ে আসতে হবে । এটা আমাদের পক্ষে কার্যত অসম্ভব । আমরা চাই প্রশাসনিক সহযোগিতা ।" এদিকে জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ।
উল্লেখ্য, 2024 সালের 16 অক্টোবর লক্ষ্মীপুজোর দিন রাতে মদের ঠেকে শ্বশুর ও জামাইয়ের বিবাদ হয় । অভিযোগ, সেই বিবাদের জেরে ধারালো চাকু দিয়ে জামাইয়ের পেটে আঘাত করে খুন করেন মতিলাল। স্থানীয়রাই রক্তাক্ত অবস্থায় জামাই বীরলালকে উদ্ধার করে জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজের অধীন সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যায় ৷ তবে পথেই বীরলালের মৃত্যু হয় । ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত শ্বশুর মতিলাল নায়েক পলাতক ছিলেন। পরে মতিলালকে গ্রেফতার করে কোতয়ালি থানার পুলিশ ।