জলপাইগুড়ি, 7 জুন: যত বিপত্তি একটি নারকেল গাছ নিয়ে ৷ অভিযোগ, প্রতিবেশীর নারকেল গাছ হেলে পড়েছে বাড়ির ছাদে ৷ আর তাতেই নাকি প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন এক অবসরপ্রাপ্ত কৃষি আধিকারিক ৷ বারবার বলেও নাকি প্রতিবেশী সেই নারকেল গাছ কাটেননি ৷ আর তাই মীমাংসার জন্য সোজা কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে মামলা ঠুকেছিলেন তিনি ৷ ঘটনা জলপাইগুড়ি জেলার পান্ডাপাড়ার ৷
জানা গিয়েছে, সেই মামলার প্রেক্ষিতে গত 23 এপ্রিল জলপাইগুড়ি পুরসভাকে গাছ কাটতে নির্দেশও দিয়েছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা ৷ কিন্তু, দেড় মাস কেটে গেলেও পুরসভার বিরুদ্ধে আদালতের রায় কার্যকর না-করার অভিযোগ করেছেন মামলাকারী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আধিকারিক ৷
জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ি পুরসভার 13 নম্বর ওয়ার্ডের পান্ডাপাড়ার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত কৃষি আধিকারিক সুমন্ত্র মিশ্র ৷ তাঁরই প্রতিবেশী রামপ্রসাদ সূত্রধরের বাড়ির সীমানায় একটি তিরিশ বছরের পুরনো নারকেল গাছ রয়েছে ৷ যেটি বেড়ে ওঠার পর হেলে গিয়ে ক্রমশ সুমন্ত্র মিশ্রের বাড়ির উপরে চলে এসেছে ৷ আর সেই নিয়েই বিবাদ ৷ সুমন্ত্র মিশ্রের অভিযোগ নারকেল গাছটি 25 শতাংশ শিকড়ের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে ৷ বর্ষার সময় জোরে হাওয়া দিল এবং মাটি নরম হয়ে নারকেল গাছটি তাঁর বাড়ির উপর ভেঙে পড়তে পারে ৷
এ নিয়ে সুমন্ত্র মিশ্রর প্রতিবেশী অর্থাৎ, নারকেল গাছের মালিক রামপ্রসাদ সূত্রধরের বক্তব্য, "আমি বুঝতে পারছি না, নারকেল গাছ আমার ৷ গাছটা কী ক্ষতি করছে, সেটাও জানি না ৷ আর গাছ কীভাবে বাড়ির উপর ভেঙে পড়বে বুঝতে পারলাম না ৷ এটা নিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার কী হল, বুঝতে পারলাম না ৷ আমি হাইকোর্টের নির্দেশ পাইনি ৷ পুরসভার তরফেও আমরা কোনও নির্দেশ পাইনি ৷ নির্দেশ পেলে গাছ কেটে ফেলতে হবে ৷"

তবে, সুমন্ত্র মিশ্রের যুক্তি, "পুরসভা হাইড্রেন কাটার সময় গাছটির শিকড় কেটে গিয়েছে ৷ বর্তমানে গাছটি 25 শতাংশ শিকড়ের উপর দাঁড়িয়ে আছে ৷ সেটি ভেঙে পড়লে আমার বাড়ির যেমন ক্ষতি হবে, তেমনই প্রাণহানির আশঙ্কাও রয়েছে ৷ যা নিয়ে আমি বাড়ির মালিকের সঙ্গেও কথা বলি ৷ ওঁকে বুঝিয়েছি, যাতে গাছটা কেটে ফেলেন ৷ কিন্তু, উনি শুনতে চাননি ৷ এরপর আমি আমার ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে বিষয়টা জানাই ৷ কিন্তু, কোনও সুরাহা হয়নি ৷ এমনকি পুরসভার চেয়ারম্যানের সঙ্গেও দেখা করে আমি বিষয়টা জানাই ৷ কিন্তু, আমার কথায় গুরুত্ব দেওয়া হয়নি ৷"
এরপরেই গতবছর সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে মামলা করেন সুমন্ত্র মিশ্র ৷ তিনি বলেন, "আমি বাধ্য হয়ে আদালতে যাই ৷ জলপাইগুড়ি পুরসভার বিরুদ্ধে অসহযোগিতার মামলা করি ৷ সঙ্গে যথাযথ নথি ও প্রমাণ পেশ করি ৷ যাতে আদালত পুরসভাকে গাছটি কাটার নির্দেশ দেয় ৷ আমার পেশ করা প্রমাণ ও যুক্তি শোনার পর, বিচারপতি অমৃতা সিনহা জলপাইগুড়ি পুরসভাকে আইন মেনে গাছ কাটার নির্দেশ দেন ৷ পুর-আইনে রয়েছে বিপজ্জনক গাছ কাটার নিয়ম ৷ সেই নিয়ম মেনে আদালত গাছ কাটতে নির্দেশ দিয়েছে ৷ তা সত্ত্বেও পুরসভা তা পালন করেনি ৷"
তাঁর অভিযোগ, গত 23 এপ্রিল জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ গাছটি কাটার জন্য জলপাইগুড়ি পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছে ৷ সেই রায়ের একটি কপি সুমন্ত্র মিশ্রের কাছেও রয়েছে ৷ যদিও, পুরসভার দাবি তারা রায়ের কোনও কপি হাতে পাননি ৷ যদিও সুমন্ত্র মিশ্রের বক্তব্য, আদালতে পুরসভার তরফে সরকারি আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন ৷ তাহলে কিসের যুক্তিতে রায়ের কপি হাতে না-পাওয়ার কথা বলছে পুরসভা !
এ নিয়ে জলপাইগুড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, "পুরসভা সবুজায়নের বিশ্বাসী ৷ বিচারপতি সিনহা যদি কোনও নির্দেশ দিয়ে থাকেন, সেটা দেখতে হবে ৷ গাছটা কেটে ফেলার কথা খতিয়ে দেখছি ৷ অর্ডার হাতে আগে পাই ৷ সেই অর্ডারের বিরুদ্ধে কেউ যদি ডিভিশন বেঞ্চে গিয়ে থাকে, যদি স্টে-অর্ডার পায় তাহলে কিছু করার নেই ৷ আমাদের কাছে যদি আগে বিষয়টি নিয়ে কেউ আসত, তাহলে আমরা আগেই মিটিয়ে দিতে পারতাম ৷ গাছ নিয়ে বিবাদ আদালত পর্যন্ত গড়াত না ৷"