কলকাতায় পুজোর থিমে AI ও রোবটের যুগ, 50 বছর এগিয়ে নিয়ে যাবে টাইম মেশিন
জগৎ মুখার্জি পার্কে অসুর উড়বে ৷ তিনি মন্দ এআই ৷ মণ্ডপে আর কী চমক থাকছে তুলে ধরলেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি মনোজিৎ দাস ৷

Published : September 17, 2025 at 6:16 PM IST
কলকাতা, 17 সেপ্টেম্বর: এআই-এর ভালো ও মন্দ দুই দিক এবং তার প্রভাব ফুটে উঠছে গোটা জগৎ মুখার্জি পার্কের মণ্ডপ জুড়ে ৷ এবার জগৎ মুখার্জি পার্কের দুর্গাপুজো 89 বছরে পা দিল ৷ এই পুজো মণ্ডপ টাইম মেশিনে মানুষকে 50 বছর এগিয়ে নিয়ে যাবে ৷ মণ্ডপে এলে এআই ও রোবটের দুনিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে দর্শকদের ৷ এবারও জগৎ মুখার্জি পার্কের থিমের দায়িত্বে শিল্পী সুবল পাল ।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স
এআই বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ৷ এখন কমবেশি সকলে এই শব্দটার সঙ্গে পরিচিত ৷ গোটা বিশ্ব ক্রমশ এআই-এর উপর নির্ভরশীল হতে শুরু করেছে । কর্মচারীদের থেকেও কয়েকগুণ দ্রুততার সঙ্গে নাকি কাজ সেরে ফেলছে এই এআই । আবার অনেক অসম্ভব জিনিসকেও সম্ভব করে তুলছে । এর ফলে অদূর ভবিষ্যতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের পথ সঙ্কুচিত হওয়ার তীব্র আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে ।
থিম বর্ণনা করতে গিয়ে পুজো কমিটির কর্মকর্তা দ্বৈপায়ন রায় জানান, মানুষ যেদিন চাকা আবিষ্কার করল, সম্ভবত সেদিন থেকেই সময় আর শ্রম অতি মূল্যবান হয়ে গেল । নিজের স্বার্থেই শিখতে শুরু করল কীভাবে কম পরিশ্রমে, কম সময়ে অনেক কাজ সেরে ফেলা যায় । আর যখন শ্রমও বিনিময়যোগ্য পণ্য হয়ে উঠল, তখনই শুরু হল যন্ত্র-নির্ভরতা । কোটি কোটি প্রজাতির মধ্যে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের একমাত্র কারণ হল তাদের চিন্তাশক্তি । সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানবজাতিকে চিন্তাশক্তি উন্নত করেছে ।

এআই-এর বাড়বাড়ন্ত
বিশ্বজুড়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগের সূচনা হয়েছে । এই প্রযুক্তি আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ এখনই সেবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না । এআই প্রযুক্তি ক্রমবর্ধমান । এআই এমন এক প্রযুক্তি যা মানুষের মতো চিন্তা করতে পারে এবং বিভিন্ন জটিল কাজ দ্রুত ও নিখুঁতভাবে সম্পাদন করতে পারে । এর উপকারিতা অনেক ৷ সার্জারিতে সহায়তা ও ডেটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে চিকিৎসা ক্ষেত্রেও এআই নজির গড়েছে । শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত চাহিদা অনুযায়ী সহায়ক হয়ে উঠেছে এআই ভিত্তিক অ্যাপ ও টিউটর স্বয়ংক্রিয় মেশিন ৷ চ্যাটবটের মাধ্যমে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে । ভূমিকম্প বা ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথাও আগে ভাগে জানাতে করতে পারছে এআই ।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ
এআই-এর যেমন ভালো দিক আছে, তেমনই এর ভয়ংকর কিছু দিকও আছে । অনেক ক্ষেত্রেই মানুষকে সরিয়ে এআই মেশিন দ্বারা কাজ করানো হচ্ছে । যা বেকারত্ব বাড়াচ্ছে ৷ এআই নির্ভরতা মানুষের পারস্পারিক সম্পর্ক ও সংবেদনশীলতা কমিয়ে দিচ্ছে ৷ ব্যক্তিগত তথ্য চুরি ও নজরদারির ঝুঁকি বৃদ্ধি করছে ৷ যদি এআই যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ না-করা হয়, তবে ভবিষ্যতে এটি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে । তাই এ বছর গতানুগতিকতার বাইরে এসে জগৎ মুখার্জি পার্ক 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আশীর্বাদ না অভিশাপ' থিম হিসাবে বেছে নিয়েছে ।

পুজো কমিটির কর্মকর্তা দ্বৈপায়ন রায় বলেন, "জগৎ মুখার্জি পার্কের পুজো সবসময় মানুষকে নতুন কিছু উপহার দিতে চেষ্টা করে ৷ আশা করছি এবারও আমাদের মণ্ডপ ও থিম সকলের মন কাড়বে ৷ অন্যরকম কিছু উপহার দেবে দর্শককে ৷ চমক থাকছে দর্শকদের জন্য ৷"

মণ্ডপে থাকছে রোবট
এর আগে জগৎ মুখার্জি পার্কের পুজোয় বনগাঁ লোকাল ও গঙ্গার নীচের মেট্রো নিয়ে কাজ করেছেন শিল্পী সুবল পাল ৷ এবার থিম নিয়ে তিনি বলেন, "এবার এআই । মণ্ডপে পা দিলে এআই যুগ প্রবেশ করবেন দর্শকরা । রোবট বাইরে আর ঘরবন্দি মানুষ । বাইরের জগৎ নিয়ন্ত্রণ করছে এআই প্রযুক্তি । থাকছে টাইম টেবল মেশিন, যা দর্শকদের আগামীতে এগিয়ে নিয়ে যাবে 50 বছর পর কী হবে সেখানে ।"

মহিষাসুর মন্দ এআই
তিনি আরও বলেন, "দর্শকরা মণ্ডপের মূল অংশে প্রতিমার সামনে প্রবেশ করলে সেখানে অসুরকে উড়তে দেখবেন । যেহেতু এআই যুগে চাকরি হারাতে পারেন বহু মানুষ, সেই শঙ্কা থেকে এআই-এর মন্দ দিকগুলি সব বধ করবেন মা । মহিষাসুর মন্দ এআই । মণ্ডপের ভিতরে ছোট ছোট গর্তে মানুষকে হাতে ফোন-ল্যাপটপে আবদ্ধ হিসেবে তুলে ধরা হবে । দেবীর রূপ সাধারণ থাকছে । প্রজেক্টর ব্যবহার হবে ।"

