বর্ধমান, 21 জুন: শরীরকে সুস্থ রাখতে শরীরচর্চা করা খুবই জরুরি একথা সকলেই জানেন । চিকিৎসক থেকে ফিটনেস বিশেষজ্ঞরাও নিয়মিত শরীর ফিট রাখার জন্য কী করা উচিত, সেই পরামর্শও দিচ্ছেন । কিন্তু কীভাবে শরীরকে ফিট রাখা যায় । যোগাসন না জিম, কী করলে শরীর ভালো থাকবে, তা নিয়ে অনেকেই দোটানায় ভোগেন ।
ফিটনেসবিদরা অবশ্য বলছেন জিমে গেলেই যে ভারী জিনিস তুলতে হবে তেমন কোনও কথা নেই, সেখানেও ধীরে ধীরে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ থেকে শুরু করা যেতে পারে । আবার কেউ বলছেন কায়িক পরিশ্রম কম করে শরীরকে সুস্থ রাখতে যোগাসন করা যেতে পারে ৷
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কেউ যদি দু’টো মিশিয়ে করতে পারেন, তাহলে শরীর মন দুটোই নিজের কন্ট্রোলে রাখা যাবে । তবে চিকিৎসকদের মতে, ভারতের প্রাচীনতম প্রক্রিয়া হচ্ছে যোগাসন । যোগের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটানো সম্ভব । ফলে শরীরকে সুস্থ রাখতে যোগের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ।
যদিও লকডাউনের পরে জিমে যাওয়ার প্রতি তরুণ প্রজন্মের প্রবণতা কিছুটা হলেও বেড়েছে । এতে শরীর যেমন সুস্থ সবল হচ্ছে, তেমনই তারা শিখছে কীভাবে ডিসিপ্লিনড ভাবে জীবনে চলাফেরা করা যায় । ঠিক তেমনই উলটো দিকে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য বর্ধমানের যোগ শিক্ষক-শিক্ষিকা জয়ন্ত হোড় ও মহাশ্বেতা হোড়ের কাছে যোগাসনের পাঠ নিচ্ছেন রিজিয়া তরফদার, পম্পা হাজরা, বর্ণালী দাসগুপ্ত, ঝুনু দে,শুভ্রা কুশারী, সোমা চট্টোপাধ্যায়রা ৷

বর্ধমান শহরের একটি জিমের প্রশিক্ষক উদ্দীপ দে বলেন, ‘‘জিমের প্রতি মানুষের আগ্রহ আগের থেকে অনেক বেশি বেড়েছে । বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম জিম বেশি পছন্দ করছে । শুধু তাই নয়ল মাঝবয়স্ক মানুষেরাও এখন জিমে আসছেন । এখন আসলে মানুষের খাদ্যাভাস বদলে গিয়েছে । জাঙ্ক ফুড মানুষ বেশি পরিমাণে খাচ্ছে । রোগজ্বালা বাড়ছে । ফলে জিমে এসে মানুষ হেলদি লাইফ লিড করছে । তবে আমরা মনে করি ষোলো বছর হওয়ার পরেই কারও জিম করা উচিত ।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘জিমের পাশাপাশি যোগাও খুব ভালো জিনিস । জিমে তখনই আসা যায়, যখন তারা মানসিকভাবে ঠিকঠাক থাকে । যোগা করলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ৷ জিম একজনকে ডিসিপ্লিন শেখাবে । যাঁরা জাঙ্ক ফুড খান, তাঁরা জিম করা শুরু করলে জাঙ্ক ফুড খাওয়া ছেড়ে দেবে ।’’

ওই জিম প্রশিক্ষক আরও বলেন, ‘‘আসলে জিমে যখন কেউ আসতে শুরু করবেন, তখন তিনি একদম সকালে ঘুম থেকে ওঠা অভ্যাস করবেন । রাতেও তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বেন । দিনে সে নিয়ম মেনে কাজকর্ম করবে । নিজেকে রুটিনে বেঁধে ফেলবে । তাদের লাইফস্টাইলটাই বদলে যাবে । এখন অনেকেরই হাঁটুতে ব্যথা, শরীরে ব্যথা হয় তারা জিমের মাধ্যমে শরীর সুস্থ রাখতে পারে । তাই অবশ্যই জিম করা উচিত কিংবা যোগা করা উচিত ।’’
ওই জিমের কর্ণধার অভিজিৎ হালদার বলেন, ‘‘সমস্যা হচ্ছে কম বয়স থেকে বাচ্চাদের ওজন বেশি ৷ সবাই কেরিয়ারে মগ্ন ৷ ডাক্তার বলছে ওজন কমাতে৷ তারা মাঠে যায় না । পড়াশোনার চাপ । তখন তারা জিমে আসছে । যোগা করতে যাচ্ছে । দু’টোই উপকারী । বডি এক্সসারসাইজ, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ । এখন মানুষের আগ্রহ বেড়েছে ।’’

অন্যদিকে যোগব্যায়ামের শিক্ষক জয়ন্ত হোড় বলেন, ‘‘শারীরিক মানসিক আধ্যাত্মিক সামাজিক সব দিক থেকে সুস্থ থাকার জন্য আমরা যোগা করব । যাঁরা যোগা সম্পর্কে জানেন না বা এটা নিয়ে ভাবেন না, তাঁদের সচেতন করার দিন হচ্ছে বিশ্ব যোগ দিবস । সারাবছর ধরেই আমরা যোগা করব । একজন বাচ্চা থেকে বয়স্ক মানুষ সকলেই যোগা করতে পারেন । এখানে বিভিন্ন আসন ভঙ্গিমা আছে । বয়স অনুযায়ী ব্যায়াম করা যায় । এছাড়া মনসংযোগ বৃদ্ধি করার জন্য যোগের মাধ্যমে ধ্যান বা মেডিটেশন করা যায় ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এখন মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মন । এখন নানাদিক থেকে মানুষের মন বিক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে । এক্ষেত্রে যোগের কিন্তু বড় ভূমিকা আছে । যেটা অন্য কোনও খেলার মাধ্যমে করা সম্ভব নয় । মানসিক দিক দিয়ে যোগ ভালো থাকতে সাহায্য করে । তবে কিছু ব্যায়াম করার জন্য বেশ কিছু নিয়ম মেনে করতে হবে । তবে যোগা ও জিম দু’টোই খুব উপকারী । তবে একদম ছোটরা তো জিমে যাবে না । তারা প্রথমে যোগচর্চা করতে পারে । তবে ইয়ং জেনারেশনে জিমের প্রতি বেশি আকৃষ্ট ।’’

জয়ন্ত হোড় আরও বলেন, ‘‘তবে যোগার বড়ো সুবিধা তাঁকে বাইরে কোথাও যেতে হবে না । একবার ভালো করে শিখে নেওয়ার পরে ইচ্ছেমতো বাড়িতে বসেই যোগের চর্চা করা যেতে পারে । যারা কায়িক পরিশ্রম করতে চায় না তাদের জন্যও যোগা উপকারী । তবে আলস্য কাটিয়ে উঠে শরীরকে ঠিক রাখতে হবে । কিছু আসন প্রাণায়াম করলে শরীর ভালো থাকবে । তবে জিম ও যোগা দু’টোই উপকারী । যোগের ভাষা পৃথিবীর সবাই বোঝে । শরীরকে সুস্থ রাখতে যোগের বিকল্প নেই ।’’

যোগার শিক্ষিকা মহাশ্বেতা হোড় বলেন, ‘‘মেয়েদের মধ্যে যোগার প্রতি অনেক উৎসাহ দেখেছি । তাদের আমি খালি হাতের ব্যায়াম, নানা ধরনের আসন প্রাণায়াম সবই শেখাই । এতে তাঁরা অনেক উপকার পেয়েছেন । একটু বয়স হয়ে গেলে মেয়েদের অনেক রোগজ্বালা বাড়ে । সেখান থেকে ব্যায়ামের মাধ্যমে মুক্তি পাওয়া যায় । মেয়েদের শারীরিক মানসিক অনেক সমস্যা আছে । কিন্তু এখানে যোগা করতে এসে তাঁরা একটা অন্যরকম আনন্দ লাভ করে । ওরা নিজেদের স্বাধীনভাবে পরিবেশন করে । প্রতিটি মহিলার এটা খুব দরকার ৷ যোগা করলে তার মন ভালো থাকে, শরীর ভালো থাকে, শরীরে এনার্জি বাড়ে । ফলে তাঁর সংসার কিংবা অফিসেও সঠিকভাবে কাজ করতে পারছেন ।''

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এমএসভিপি ড. তাপস ঘোষ ইটিভি ভারতকে বলেন, ‘‘যোগা আলাদা জিম আলাদা । কিন্তু কেউ কারও পরিপূরক সেটা বলা যাবে না । যোগের যেমন প্রয়োজন আছে, তেমনই জিমেরও প্রয়োজন আছে । তবে যোগা ভারতের প্রাচীনতম প্রক্রিয়া । শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য এটা পরীক্ষিত সত্য । যোগের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক সমস্যা মেটানো সম্ভব । আধুনিক সমাজে জিমে যাওয়ার একটা প্রবণতা বেড়েছে । তবে জিমে যাওয়ার আগে কী ধরনের এক্সারসাইজ করা উচিত, সেটা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে । শরীরকে সুস্থ রাখতে যোগের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ।’’