মালদা, 18 জুলাই: বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে প্রতিবাদের জেরে মালদার মানিকচকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধল গ্রামবাসীদের ৷ বৃহস্পতিবার প্রথমে ধাক্কাধাক্কি, এরপর পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়ায় গ্রামবাসীরা ৷ এমনকী পুলিশের একটি গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ ৷ পরে গুলি চালায় পুলিশ। এই সংঘর্ষে মাথা ফেটেছে মানিকচক থানার আইসি পার্থসারথি হালদারের ৷ আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন পুলিশকর্মী ৷ রাতের দিকে গুলি চালানোর কথা স্বীকার করে নিয়েছেন লিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব ।
এদিকে উত্তেজিত গ্রামবাসীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ 4-5 রাউন্ড গুলি চালায় ৷ অভিযোগ সেই গুলিতে আহত হয়েছেন দু’জন ৷ মানিকচকে এই গুলি চালনার ঘটনায় এবার রিপোর্ট চাইল নবান্ন ৷ জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে ঘটনাস্থলে রয়েছেন মালদা রেঞ্জের ডিআইজি সুধীর কুমার ৷ এই সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ 5 জন গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করেছে ৷
প্রতিদিন অনুভূত তাপমাত্রা থাকছে 48-50 ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ৷ এই প্রচণ্ড গরমের মধ্যে গত 10 দিন ধরে একটানা বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলছে মালদার মানিকচকে ৷ দিনে টানা একঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকছে না বলে অভিযোগ মানিকচক ব্লকের এনায়েতপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের ৷ এর প্রতিবাদে বুধবার স্থানীয় বিদ্যুৎ দফতরে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা ৷ সেই খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছয় মানিকচক থানার পুলিশ ৷ তারা বিক্ষোভ তুলে নেওয়ার জন্য গ্রামবাসীদের অনুরোধ করে ৷ কিন্তু গ্রামবাসীরা তা না শোনেনি ৷ এই পরিস্থিতিতে পুলিশ এক গ্রামবাসীকে মারধর করে বলে অভিযোগ ৷
এরপর বৃহস্পতিবার সকালে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রতিবাদে এনায়েতপুর, মোহনা-সহ 10টি জায়গায় মালদা-মানিকচক রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন গ্রামবাসীরা ৷ সেই অবরোধ তুলতে যায় পুলিশ ৷ তখনই বুধবারের রোষ আছড়ে পড়ে পুলিশের উপর ৷ অভিযোগ, বুধবার মারধরের ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছিল সবাই ৷ বৃহস্পতিবার রাজ্য সড়ক অবরোধ তুলতে গেলে তাদের উপর সেই রোষ আছড়ে পড়ে ৷ প্রথমে পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হয় ৷ এরপর রীতিমতো সংঘর্ষ বেধে যায় পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীদের সংঘর্ষ বাধে ৷
অভিযোগ, উত্তেজিত গ্রামবাসীদের সামলাতে পুলিশ 4-5 রাউন্ড গুলি চালায় ৷ গুলিতে আহত হয়েছেন দু’জন ৷ তাঁদের মালদা মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৷ এই মুহূর্তে ঘটনাস্থলে রয়েছেন পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব সহ জেলা পুলিশের কর্তারা ৷ রয়েছেন মালদা রেঞ্জের ডিআইজি সুধীর কুমার ৷ পুলিশি ভূমিকার প্রতিবাদে আগামিকাল 12 ঘণ্টার মানিকচক বনধ ডেকেছে সিপিআইএম ৷
এলাকার বাসিন্দা তথা সিপিআইএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দেবজ্যোতি সিনহা বলেন, “মাস দুয়েক ধরেই গোটা মানিকচক ব্লক জুড়ে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলছে ৷ রথযাত্রা, মহরমের দিনেও এলাকা অন্ধকারে ছিল ৷ এই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রতিবাদে আজ এনায়েতপুর, মোহনা, শোভানগর, মানিকচক সহ প্রায় 10 জায়গায় পথ অবরোধ করে ক্ষুব্ধ মানুষজন ৷ এনায়েতপুরে উন্মত্ত জনতাকে পুলিশ নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে গুলি চালিয়েছে ৷ গুলিতে কয়েকজন আহত হয়েছে বলে শুনেছি ৷ আমি দলের তরফে পুলিশের গুলিচালনার প্রতিবাদ জানাচ্ছি ৷" তিনি আরও জানান, তিনদিন আগেই বিষয়টি সিপিএম নেতা আইসিকে জানিয়েছিলেন ৷ বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে ৷ সিপিএম নেতা দেবজ্য়োতির অভিযোগ, পুলিশ বিষয়টিতে গুরুত্ব দেননি ৷
পুলিশের গুলি চালানোর কথা এখনও স্বীকার করেননি ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব ৷ তিনি বলেন, "পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ৷ এই ঘটনায় দু’পক্ষের কয়েকজন আহত হয়েছেন ৷ এখনও পর্যন্ত তিনজন পুলিশকর্মীর গুরুতর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে ৷ আমরা গোটা ঘটনা আরও খতিয়ে দেখে পুরো বিষয়টি বলতে পারব ৷ পুলিশ কোনও গুলি চালিয়েছে কি না, সেটাও দেখা হচ্ছে ৷" পুলিশ সুপার গুলিচালনার বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মানিকচকে এদিন পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়েছে বলে খবর ৷ নবান্নর তরফে গুলি চালানোর কারণ নিয়ে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে ৷
নবান্নর তরফে এই ঘটনায় রিপোর্ট তলব করা হয়েছে ৷ জানা গিয়েছে, এই ঘটনা ইতিমধ্যে নজরে এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর ৷ তিনি রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রীও। বিষয়টি নজরে আসতেই তিনি মুখ্যসচিবকে বিষয়টি দেখার জন্য বলেন ৷ এরপরই মুখ্যসচিব জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছ বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট চেয়েছেন বলে নবান্ন সূত্রে খবর ।