হাওড়া, 26 মার্চ: হাওড়ার বেলগাছিয়া ভাগাড়ে ধসের ফলে শহরের বর্জ্য-ব্যবস্থাপনায় নতুন সঙ্কট তৈরি হয়েছে । প্রশাসন দ্রুত বিকল্প ভাগাড়ের সন্ধানে নেমেছে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তে প্রবল আপত্তি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বুধবার শিবপুরের আরুপাড়া এলাকায় নতুন ভাগাড় স্থাপনের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে স্থানীয়রা ব্যাপক বিক্ষোভ দেখান। যার ফলে পুরনিগমকে পিছু হটতে হয় ।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, বেলগাছিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে বর্জ্য মজুত করার সময় আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি । ফলে, আবর্জনার স্তূপ জমে গিয়ে মাটির ধারণক্ষমতা নষ্ট হয়েছে । বিশেষজ্ঞরা জানান, ‘‘আবর্জনার মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হচ্ছে, যা আগুন লাগার অন্যতম কারণ । তাই, ভাগাড়ে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা না-হলে আগামিদিনে আরও বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে ।’’
বেলগাছিয়া ভাগাড়ের ধসের পরে প্রশাসন নতুন ভাগাড়ের জন্য শিবপুরের আরুপাড়া এলাকাকে চিহ্নিত করে । কিন্তু বুধবার সকালে সেখানে বর্জ্য বহনকারী গাড়ি পৌঁছতেই স্থানীয় বাসিন্দারা তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। রাস্তা অবরোধ করে তাঁরা জানান, এখানে বিশ্ববিদ্যালয়, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার-সহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে । ভাগাড় হলে এলাকাটি দূষণের কবলে পড়বে, যা মেনে নেওয়া সম্ভব নয় ।
এই প্রসঙ্গে হাওড়া পুরনিগমের মুখ্য প্রশাসক সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা স্থানীয়দের মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছি । আপাতত এক থেকে দেড় মাসের জন্য আরুপাড়ায় বর্জ্য ফেলা হবে বলে পরিকল্পনা করা হয়েছিল । তবে, বাসিন্দাদের আপত্তির কারণে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে ।’’
প্রশাসনের পরিকল্পনা কী ?
সুজয় আরও বলেন, ‘‘আমরা কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (KMC) এবং বৈদ্যবাটি পুরসভার সঙ্গে আলোচনা করেছি । স্থানীয় মানুষের আপত্তি থাকায় পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গেও আমরা বৈঠক করেছি । পরিকল্পনা ছিল থানায় গিয়ে পরিস্থিতি বোঝা, তারপর ক্যাম্পসাইট পরিদর্শন করা । কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে সরাসরি এখানে আসতে হয়েছে ।’’
বেলগাছিয়া ভাগাড়ের সমস্যা প্রসঙ্গে সুজয় বলেন, ‘‘এটি সাময়িক আত্মত্যাগের বিষয় । আমরা বুঝতে পারছি, স্থানীয় মানুষ সমস্যার মুখে পড়েছেন । তবে এটাও মনে রাখতে হবে, শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের আবর্জনাও কোথাও না কোথাও ফেলতে হবে । বেলগাছিয়ার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সেই দায়িত্ব পালন করেছেন । তাই, বিকল্পের সন্ধানে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন ।’’
এই পরিস্থিতিতে কলকাতা পুলিশের ভূমিকাকে স্বীকৃতি জানিয়ে সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কলকাতা পুলিশ আমাদের প্রচুর সহায়তা করেছে । তবে, তাদেরও নির্দিষ্ট সময় দরকার। কারণ, শহরের নিয়মিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি অতিরিক্ত আবর্জনা সামলানো চ্যালেঞ্জিং কাজ । আমরা চাই, এক মাসের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হোক ।’’
বেলগাছিয়া ভাগাড়ের ধসের জেরে শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে । নতুন ভাগাড়ের সন্ধানে প্রশাসন তৎপর হলেও স্থানীয়দের বিক্ষোভের কারণে তা বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়ছে । আপাতত প্রশাসনের পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে । তবে, প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে— আগামী দিনে হাওড়ার দৈনিক ছ’শো মেট্রিক টন বর্জ্য কোথায় ফেলা হবে ?