কলকাতা, 30 এপ্রিল: অগ্নিদগ্ধ হোটেলের ট্রেড লাইসেন্স মঙ্গলবারই রিনিউ করা হয়েছিল। রিনিউ ফি বাবদ কলকাতা কর্পোরেশনের ট্রেজারিতে জমা পড়েছে 6000 টাকা। তবে নির্মীয়মাণ পানশালার কোনও তথ্য নেই বিল্ডিং বিভাগ বা লাইসেন্স বিভাগের কাছে, এমনটাই জানা গিয়েছে কর্পোরেশন সূত্রে।
ছয় তলা বাড়ির পুরোটাই বাণিজ্যিক। তবে দফায় দফায় বিল্ডিংয়ের না-না ধরনের কাজ করিয়ে পরিবর্তন হয়েছে কাঠামোর চরিত্র। পরিণত হয়েছে জতুগৃহে। যার মর্মান্তিক পরিণতি মঙ্গলবার রাতে অগ্নিকাণ্ডে 15টি প্রাণ শেষ হয়ে যাওয়া। কর্পোরেশন সূত্রে খবর, এই আগুন লাগা ছ'তলা বিল্ডিংয়ের একতলায় একটি রেস্তোরা-সহ মদের দোকান রয়েছে। এটা কর্পোরেশনের খাতায় লেখা, 'অন শপ উইথ রেস্টুরেন্ট'। এটি লাইসেন্স প্রাপ্ত। সংস্থার নাম-বিকাশ অ্যান্ড কোং। মালিকের নাম রিম্পেল চাওলা এবং ইশা চাওলা ৷ তবে যত কাণ্ড দ্বিতীয় তলা নিয়ে।
এই দ্বিতীয় তলায় চলছিল আরও একটি পানশালা তৈরির কাজ। এদিন দমকলের ডিজি রণবীর কুমার জানান, আগুনের উৎস ছিল এই দোতলা। এখানে কাজ চলছিল। সেখান থেকেই কোনওভাবে আগুন ধরে। আর কাজে ব্যবহৃত সামগ্রী মজুত ছিল যা দাহ্য বস্তু ৷ ফলে আগুন বড় আকার নেয়। কিন্তু এই দোতলায় যে পানশালার কাজ হচ্ছিল সেটা কি কলকাতা কর্পোরেশন জানানো হয়েছিল ?
কর্পোরেশনের তরফে অবশ্য উত্তর মিলছে না । পুরনিগমের তথ্য বলছে, দোতালায় যে দ্বিতীয় বার বা রেস্টুরেন্ট বানানোর বিষয়টি সামনে এসেছে, সেই সংক্রান্ত কোনও তথ্য কর্পোরেশনের লাইসেন্স বিভাগের বা বিল্ডিং বিভাগের কাছে নেই।
সেই ঘটনায় আরও একটি প্রশ্ন সামনে এসেছে, তা হল বিল্ডিং বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারদের অ্যাপ ডায়েরি ও রস্টার ডিউটি। গার্ডেনরিচ বেআইনি নির্মাণের পর কলকাতা কর্পোরেশন একটি বিল্ডিং বিভাগের নজরদারির লক্ষ্যে অ্যাপ ডায়েরি তৈরি করেছিল। সেই অ্যাপ ডায়েরি সাব অ্যাসিস্টেন্ট ইঞ্জিনিয়ার থেকে এক্কেবারে ডিজি পর্যন্ত দেখতে পারবেন। প্রতি ওয়ার্ডে বিল্ডিং বিভাগের সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার এই অ্যাপ ডায়েরি মারফত নির্মাণ কাজের ছবি ও বিস্তারিত লিখে নোট পাঠাবে । সেই তথ্য দেখে প্রয়োজনে উচ্চতর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে । তাহলে কি এই নিয়ম মানা হয়নি এই ওয়ার্ডে ? না মানলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে ? সেই প্রশ্নও উঠছে।
পুরনিগম সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ঋতুরাজ হোটেলটি বলরাম প্রপার্টি প্রাইভেট লিমিটেডের অধীনে। কর্পোরেশনের লাইসেন্সের খাতায় নথিভুক্ত একটি থাকা এবং খাবার হোটেল। পানশালার উল্লেখ নেই। বলরাম প্রপারটি প্রাইভেট লিমিটেডের মালিকের নাম রয়েছে-আকাশ চাওলা এবং অন্যান্য। 2019 সালের 29 মে এই নামে হোটেলটির লাইসেন্স নেওয়া হয়েছিল।
যদিও স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, 1980 সাল থেকে হোটেল চলে। সম্ভবত তাঁর বাবা বা অন্য কারও নামে হোটেল ছিল। 2019 সালে ছেলেদের নামে হয়। মঙ্গলবার অর্থাৎ যেদিন আগুন লেগেছে, সেদিনই কর্পোরেশনে ট্রেড লাইসেন্স রিনিউ হয়েছে। এই হোটেলের প্রত্যেক তলায় বড় বড় জানালা ইট সিমেন্ট দিয়ে ভরাট করে দেওয়াল করা হয়েছে। যে ছবি দেখে মেয়র নিজেই অবৈধ বলেছেন। আর এর জেরেই পরিণতি আরও ভয়াবহ হয়েছে।
ধোঁয়া বাইরে বেরোতে পারেনি। তেমনই উদ্ধার কাজে ভিতরে দমকল বা বিপর্যয় মোকাবিলা কর্মীরা ঢুকতে পারেননি। কর্পোরেশন সূত্রে খবর, ওই হোটেল ভবন বেশ কয়েকমাসে বেশ কিছু বেআইনি নির্মাণ করেছে। ছাদেও একাধিক ঘর তৈরি করেছে। যেগুলো সবটাই কর্পোরেশনের অগোচরে। তবে এই ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করল, মেয়র ফিরহাদ হাকিম কোনও বিপর্যয়ের পর যতই হাক ডাক করুন বাস্তবে বেআইনি নির্মাণে নজরদারি নেই কর্পোরেশনের । বিরোধীরা আবার দাবি করছেন, সব নজরদারি আছে। আর্থিক লেনদেন চলে বলেই চোখ বন্ধ করে নেয়। আর দুর্ঘটনা ঘটলে এই পরিণতি হয়।