পোলবা (হুগলি), 21 এপ্রিল: পাকা আমের জন্য প্রসিদ্ধ মালদা, মুর্শিদাবাদের মতো জেলাগুলি ৷ হিমসাগর থেকে ল্যাংড়া আম দেশ-বিদেশে রফতানি হয় এইসব জায়গা থেকেই ৷ সেই তালিকায় নতুন সংযোজন হুগলি ৷ তবে পাকার থেকেও এই জেলার কাঁচা আম বেশি জনপ্রিয় ৷ হুগলি জেলায় বলাগড়, পোলবা, ব্যান্ডেল, চন্দননগর ও সিঙ্গুর-সহ একাধিক জায়গায় বাজার রয়েছে কাঁচা আমের । আর এখান থেকে কয়েকশো টন আম যায় বেশ কয়েকটি রাজ্যে ৷ এমনকি যায় বিদেশেও ৷ কাতার, লন্ডন ও ইতালির মতো জায়গায় রফতানি হয় হুগলির আম ।
হুগলি জেলাজুড়ে একাধিক আম বাগান রয়েছে । কালবৈশাখীর ঝড়ের দাপটে প্রতিবছর বহু আম বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয় । তার হাত থেকে বাঁচতে আগাম গাছগুলি থেকে ভালো জাতের কাঁচা আম পেড়ে নেওয়া হয় । পাকা আম উৎপাদনের আগে ভিনরাজ্যে বিশেষ চাহিদা রয়েছে হুগলির কাঁচা আমের । মূলত প্রস্তুতকারক সংস্থা স্কোয়াস, জ্যাম, জেলি ও আচার-সহ বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহার করে থাকে এই কাঁচা আম । তাই চাষিরা কাঁচা থাকতেই আম পেড়ে বিক্রি করে দেন ৷
হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোলাপখাস, মোহনভোগ, দোফলা-সহ বিভিন্ন আমের ফলন হয় হুগলিতে । যদিও ফলনের তুলনায় এই মরশুমে দাম কম, তাও চাষি থেকে ব্যবসায়ীদের ধারণা আমের দাম বাড়বে । কিছুটা লাভের আশায় তাই বেশ কয়েকটি প্রজাতির আম কাঁচা অবস্থায় পেড়ে নেওয়া হয় । গোটা এপ্রিল মাস কাঁচা আমের বাজার থাকে । রাজ্যের তুলনায় ভিন্ন রাজ্যে চাহিদা বেশি । সারাবছরই এই চাহিদা থাকে ৷ যার কিছুটা চাহিদা মেটায় দোফলা আম ।
পোলবার অনন্তপুরের চাষি বুবাই বাগ বলেন, "এবছর কাঁচা আমের বাজার 15 টাকা থেকে 20 টাকা কেজি প্রতি দাম যাচ্ছে । প্রথম দিকে আম চাষে বৃষ্টির অভাব ছিল । আর এখন যেভাবে দুর্যোগ হচ্ছে এখন আমের অবস্থা খুবই খারাপ । এখানকার আম বোম্বে দুবাই ও সিঙ্গাপুরে রফতানি হয় । এবছর কাঁচা আমের খদ্দের নেই বলে দামও কম রয়েছে । আশা করি কিছুদিন বাদ থেকেই আমের বাজার বাড়বে । আমের জুস, কাসন্দি, আচার তৈরি জন্য কারখানায় কাঁচা আমের চাহিদা থাকে । মূলত ঝড়-বৃষ্টির কারণে গাছের উপরের দিকের আম ঝরে পড়ে যায় । সেই কারণে পাকার আগেই সেই আম পেড়ে বিক্রি করে কিছুটা পয়সা ঘরে তুলি । এবারে আমের ফলন কম হয়েছে । আগামিদিনে পাকা আমের দাম পাওয়া যাবে ।"

হুগলি জেলায় ছয় হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ হয় । এছাড়াও গোটা জেলায় অল্প বিস্তর আমের ফলন রয়েছে । হুগলি ছাড়াও আশেপাশের জেলা হাওড়া, নদিয়া উত্তর 24 পরগনায় আমের বাজার রয়েছে ।

পোলবার গোটু বাজারের আম ব্যবসায়ী তাপস পাল বলেন, "গত বছরের তুলনায় এ বছরে আমের দামটা অনেকটাই কম আছে । এখানকার আম দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, উত্তরপ্রদেশ ও বিহার যাচ্ছে । প্রতিবছর এখান থেকে সৌদি, দুবাই ও মিশর-সহ বিদেশেও আমের বাজার রয়েছে । এখানে কাঁচা আমের বাজার আড়াই থেকে তিন মাস পর্যন্ত চলে ৷ গত বছরে 100 টনের উপর কাঁচা আম বাইরে পাঠিয়েছিলাম । আমার মতো একাধিক ব্যবসায়ী রয়েছে পোলবার গোটু বাজারে । তাঁরাও বিভিন্ন রাজ্যে আম পাঠান ৷ কাঁচা আমের বাজার একমাত্র ভিনরাজ্যেই বেশি চলে ।"

গোটু বাজারে আরেক ব্যবসায়ী সৌনিক কোলে বলেন, "কাঁচা আম আচারের জন্যই বেশি বিক্রি হয় উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে । প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে চাষিরা কাঁচা অবস্থায় আম বিক্রি করে দেন । 15-20 দিন কাঁচা আমের ভালো বাজার থাকে । তারপর বাজারে পাকা আম চলে আসে । এই বাজার থেকেই প্রায় গড়ে 100 টন আম ভিন রাজ্যে পাড়ি দেয় । হুগলি জেলায় গোটু বাজার ছাড়াও ব্যান্ডেল, এবং চন্দননগরের বউবাজারেও কাঁচা আম বিক্রি হয় । ফলন অনুযায়ী এ বছরে বাজার দাম খুবই খারাপ রয়েছে । বর্তমানে 15 টাকা থেকে 16 টাকা কেজি প্রতি আম বিক্রি হচ্ছে । এবছর আমের ফলন হওয়া উচিত ছিল ৷ তবে সেই হারে ফলন হয়নি । আশা করছি পাকা আমের বাজার বেশি থাকবে।"

কলকাতার আম রফতানিকারক অঙ্কুশ সাহা বলেন, "কলকাতা থেকে হুগলি, নদিয়া ও উত্তর 24 পরগনার পাশাপাশি এই এপ্রিল মাসে কাঁচা আম ইতালি, লন্ডন ও কাতারে পাঠানো হয় । এক মাসে প্রায় 80 টন কাঁচা আম রফতানি হয় বাংলা থেকে । আগামিদিনে আরও কাঁচা আমের উৎপাদন যদি বাড়ানো যায়, তাহলে রফতানি করা যাবে । কাঁচা আমের সারা বছরই চাহিদা থাকে ।"