বেলডাঙা, 31 মে: বেলডাঙার মাটিতে হিমাচল প্রদেশের তিনটে প্রজাতির আপেল ফলিয়ে তাক লাগিয়ে দিলেন স্কুল শিক্ষক রুপেশ দাস। বেলডাঙা পুরসভার 14 নম্বর ওয়ার্ডের কাছাড়িপাড়ায় বাড়ি সংলগ্ন দেড় কাঠা বাগানে আপেল ছাড়াও সংগ্রহে রেখেছেন বিভিন্ন বিদেশি গাছ।
রুপেশবাবু বলেন, "প্রথম এক বছর আপেল গাছের পরিচর্যা করতে হয়। বিশেষ করে শিকড়ের যত্ন নিতে হয়। কারণ আপেল গাছের শিকড় মিষ্টি স্বাদের হয়। উই পোকার আক্রমণ বেশি হয়। এর বাইরে গাছের পরিচর্যায় জলের উপর বিশেষ নজর রাখতে হয়। আপেল গাছে জল সেচ নিয়মিত করতে হয়। গাছের গোড়া যাতে শুকিয়ে না যায় সেদিকে নজর রাখতে হয়। পাশাপাশি গোড়ায় যাতে জল না জমে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হয়।"
কেউ যদি এই পথ অনুসরণ করতে চায়, সেক্ষেত্রে তিনি বলেন, "কাশ্মীরে আপেল চাষিরা পিআরজি ( প্ল্যান্ট গ্রোথ রেগুলেশন) স্প্রে করেন। ফলন বৃদ্ধিতে আমি এবার পরীক্ষামূলক স্প্রে করে দেখব।" বাগানে সাড়ে তিন বছর বয়সের গাছগুলির উচ্চতা এখন 10 ফুট। গত বছরই প্রতিটি গাছে অল্প সংখ্যক করে ফল এসেছিল। এবার তিনি ফুল আসার সময় থেকেই পরিচর্যায় মন দিয়েছিলেন। গাছে গাছে ফলের সংখ্যাও অনেক বেশি। সাইজও বেশ বড় হয়েছে। রুপেশবাবু জানান, সর্বোচ্চ 320 গ্রাম ওজনের আপেল ফলেছে একটি গাছে। যিনি খেয়েছেন তিনিই বাজারের আপেলের থেকে সুস্বাদু বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। মহারানি চক্রবর্তী, অমিত দে-রা জানান এই আপেল অত্যন্ত সুস্বাদু। রুপেশবাবু মিরাকল ঘটিয়েছেন।
সাড়ে তিন বছর আগে হিমাচলের একটি ফার্ম থেকে অনলাইনে 10টি আপেল গাছের চারা এনে লাগিয়েছিলেন। বাগানে সাতটি আপেল গাছ রয়েছে জানা গিয়েছে। গত বছরই প্রথম ফল এসেছিল। তবে সংখ্যা ও ফলের সাইজ কম ছিল। এবার প্রায় 15 কেজি আপেল ফলিয়েছেন বেলডাঙা পূর্ব চক্রের নপুকুড়িয়া নতুনপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহশিক্ষক রুপেশ দাস। আপেলের গুণমান নিয়ে অনেকেই প্রশংসা করেছেন।
কাশ্মীরে আপেল চাষে অভিজ্ঞ পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফিরিয়ে এনে সাগরদিঘিতে আপেল চাষ শুরু করেছিল রাজ্য সরকার। কৃষি ফার্মের বিশাল জায়গায় কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয়ে আপেল চাষ শুরু করেছিল সাগরদিঘি ব্লক প্রশাসন। কিন্তু সেই উদ্যোগ ফলপ্রসু হয়নি। প্রশাসনের উদ্যোগে আপেল চাষের প্রকল্প মুখ থুপড়ে পড়েছিল। উষ্ণ ক্রান্তীয় জলবায়ুতে আপেল গাছ টেকাতে পারেনি সাগরদিঘি ব্লক প্রশাসন। বেলডাঙায় সেই কাজ করে দেখালেন রুপেশবাবু।
রুপেশবাবুর ফল-ফুলের বাগানের শখও রয়েছে। তবে বিদেশি গাছের শৌখিন স্কুল শিক্ষক। আপেলের পাশাপাশি বাগানে রয়েছে পিচ, পার্সিমান(জাপানের জাতীয় ফল), অ্যাফ্রিকট,ফলসা, থাই আমড়া, মালবেরি, জাফরান। এবার লাগাবেন ব্লু বেরি। গতবছর এই বাগানে জাফরান (কেশর) ফলিয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, ডুয়ার্স অঞ্চলে জাফরান চাষের খুবই সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি কোনও সাহায্য পেলে দার্জিলিং লাগোয়া সমতল এলাকায় জাফরান চাষ করতে আগ্রহী রুপেশ দাস।