কলকাতা, 28 এপ্রিল: কলকাতা হাইকোর্টে প্রাথমিকের 32 হাজার চাকরি বাতিল সংক্রান্ত মামলার শুনানি পিছিয়ে গেল ৷ পরবর্তী শুনানি 7 মে ৷ আইনজীবীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় সবার বক্তব্য় একদিনে শোনা সম্ভব নয়, এই যুক্তি দিয়ে মামলার শুনানি পিছিয়ে দিয়েছে হাইকোর্ট ৷ বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে সোমবার থেকে এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল ৷
এদিন শুনানির শুরুতেই এজলাসে অনেক আইনজীবীর উপস্থিতি দেখে দুই বিচারপতি জানান, প্রাথমিকের এই চাকরি বাতিল সংক্রান্ত বিষয়ে সবমিলিয়ে 100-টিরও বেশি মামলা দায়ের হয়েছে। একটি শুনানিতে সবার বক্তব্য, আলাদা আলাদা করে শোনা সম্ভব নয়। মাত্র কয়েকজন প্রবীণ আইনজীবীর বক্তব্য শোনা হবে। এর পাশাপাশি, আইনজীবীদের বক্তব্যের সারাংশ লিখিত আকারে আদালতে জমা দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর আগামী 7 মে, দুপুর 2টোর সময় মামলার শুনানি শুরু হবে।
2014 সালে শিক্ষক যোগ্যতা পরীক্ষা বা টেট উত্তীর্ণদের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং 2016 সালে প্রাথমিক স্তরে 32 হাজার শিক্ষকের চাকরি হয় ৷ তবে নিয়োগের ঠিক পরেই, অ্যাপটিটিউড টেস্ট না নেওয়া, ওএমআর জালিয়াতি, সংরক্ষণের নীতি না মানা থেকে শুরু করে র্যাঙ্ক জাম্প সহ একাধিক অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। নিয়োগ দুর্নীতির মামলার রায় দিতে গিয়ে, প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় 2023 সালের 12 মে এই 32 হাজার চাকরি বাতিল করে দেন ৷ রাজ্য সরকার এই রায়কে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে চ্যালেঞ্জ করে ৷ বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি সুপ্রতীম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ চাকরি বাতিলের সিদ্ধান্তের উপর স্থগিতাদেশ দেয় ৷ পরে মামলা আসে বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চে । কিন্তু গত 7 এপ্রিল বিচারপতি সেন ব্যক্তিগত কারণে মামলাটি ছেড়ে দেন । এরপর এদিন এই নতুন বেঞ্চে (বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চে) মামলার শুনানি শুরু হওয়ার কথা ছিল ৷
প্রসঙ্গত, এই মাসের শুরুতে সুপ্রিম কোর্ট 26 হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর চাকরি বাতিল করে ৷ 2016 সালে এসএসসির মাধ্যম নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জন্য এই সমস্ত নিয়োগ হয়েছিল ৷ সেই নির্দেশের পর থেকে উদ্বেগে রয়েছেন 2016 সালেই নিয়োগ পাওয়া প্রাথমিকের শিক্ষক শিক্ষিকারা। সবারই নজর ছিল আজকের এই শুনানির দিকে ৷ কিন্তু তাঁদের উদ্বেগের অবসান হল না ৷ পিছিয়ে গেল মামলার শুনানি ৷
এই মামলার পাশাপাশি আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল সোমবার ৷ 26 হাজার চাকরি বাতিলের ঘটনায় আদালত অবমাননা সংক্রান্ত একটি পৃথক মামলা দায়ের হয়েছে হাইকোর্ট ৷ সেই মামলা হাইকোর্ট আদৌ শুনতে পারে কি না তারও শুনানি হওয়ার কথা ছিল ৷ সেই শুনানিও পিছিয়ে গিয়েছে ৷ বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ সাব্বার রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে আগামী 1 মে ফের শুনানি হবে এই মামলার।
আদালত অবমাননা সংক্রান্ত মামলায় কী কী হল হাইকোর্টে ?
- এদিনের শুনানিতে আইনজীবী পার্থসারথি সেনগুপ্ত রাজ্যের শিক্ষা দফতরের পক্ষে বলেন, "সুপ্রিম কোর্টে কোনও মামলা বিচারাধীন থাকলে সেই মামলায় হাইকোর্টে আদালত অবমাননার মামলা হতে পারে না।" এর সমর্থনে বম্বে হাইকোর্টের নির্দেশের কপি আদালতকে দিয়েছেন তিনি।
- স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী সপ্তাংশু বসু বলেন, "হাইকোর্ট এই মুহূর্তে আদালত অবমাননার মামলা শুনতেই পারে না।"
- প্রবীণ আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের পক্ষে বলেন, "নির্দেশটা আইন অনুযায়ী কার্যকর করা হচ্ছে কি না, সেটাই বিবেচ্য। শীর্ষ আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকলেও মূল নির্দেশটা ছিল হাইকোর্টেরই।"
- বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের পক্ষে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "শীর্ষ আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকলেও, মামলার মূল নির্দেশটা ছিল হাইকোর্টের। সেই নির্দেশ আইন অনুযায়ী কার্যকর করা হচ্ছে কি না, সেটাই এখানে প্রধান বিবেচ্য বিষয়।"
- শুনানি চলাকালীন বিচারপতি দেবাংশু বসাক প্রশ্ন করেন, "হাইকোর্টের নির্দেশের বেশকিছু পরিবর্তন করেছে সুপ্রিম কোর্ট । আবার উচ্চ আদালতের নির্দেশের বেশ কিছু জায়গায় হস্তক্ষেপ করেনি। তার মানে কি হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্ট দু'টি আদালতেই অবমাননার মামলা করা যায় ?"
- বিকাশ ভট্টাচার্য আদালতে দাবি করেন, মামলার শুনানির জন্য যে কেউ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতেই পারেন । তাঁর বক্তব্যের স্বপক্ষে বিভিন্ন আদালতের নির্দেশের কপি এদিন তিনিও বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চে জমা দিয়েছেন। এরপর বেঞ্চ জানায়, আগামী 1 মে মামলার শুনানি হবে ৷