মালদা, 7 এপ্রিল: এখন থেকে যাত্রীবাহী কিংবা মালবাহী ট্রেনের হ্যান্ড-ব্রেক কষতে হবে দায়িত্বপ্রাপ্ত গার্ডদেরই ৷ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এই নির্দেশে রেগে কাঁই রেলের গার্ডরা ৷ এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সোমবার পূর্ব রেলের গার্ডদের একাংশ অসুস্থতাজনিত ছুটি নিয়ে নিজেদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ৷ আগামীতে বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও জানিয়েছেন তাঁরা ৷ এনিয়ে কর্তৃপক্ষ কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ না করলে আগামীতে রেল যোগাযোগ স্তব্ধ করে দেওয়ার হুমকিও শোনা গিয়েছে তাঁদের মুখে ৷ যদিও তাঁদের এদিনের প্রতিবাদে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহত হয়নি বলেই দাবি কর্তৃপক্ষের ৷
গার্ডরা জানাচ্ছেন, প্রতিটি মালবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেনের সামনে ও পিছনের দিকে থাকে এসএলআর ভ্যান ৷ যেখানে থেকে তাঁদের ডিউটি করতে হয় ৷ প্রতিটি এসএলআর-এ থাকে হ্যান্ড-ব্রেকও ৷ জরুরি কোনও পরিস্থিতিতে এসএলআর-এ থাকা হ্যান্ড-ব্রেক কষেই ট্রেন থামানো হয় ৷ এতদিন এই কাজটি করতেন পয়েন্টসম্যানরা ৷ তাঁদের সুপারভিশন করতেন গার্ডরা ৷ কিন্তু গত 2 এপ্রিল একটি নির্দেশিকা জারি করে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে, এখন থেকে এই কাজ করবেন গার্ডরা ৷ সেই নির্দেশেই ক্ষুব্ধ ট্রেনের গার্ডরা ৷ তাঁদের বক্তব্য, এই কাজে অনেকটা সময় লাগে ৷ তাছাড়া এই কাজে তাঁদের ঝুঁকিও রয়েছে ৷

পূর্ব রেল সূত্রে জানা যাচ্ছে, বর্তমানে পূর্ব রেলে গার্ডের সংখ্যা প্রায় 700 ৷ এর মধ্যে প্রায় 200 জন গার্ড রয়েছেন মালদা ডিভিশনে ৷ কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মানতে না-পেরে তাঁদের কয়েকজন এদিন সিক লিভ নিয়ে নিজেদের প্রতিবাদ ব্যক্ত করেছেন ৷ তবে এনিয়ে তাঁরা কেউ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাননি ৷

যদিও অল ইন্ডিয়া গার্ড কাউন্সিলের পূর্ব রেলের সম্পাদক দেবাশিস উপলা ইটিভি ভারতকে জানান, "ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এই নির্দেশের প্রতিবাদে আজ মালদা ও বর্ধমানে কিছু গার্ড সিক লিভ নিয়ে নিজেদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ৷ আজ এভাবে প্রতীকী প্রতিবাদ করা হয়েছে ৷ আজ মালদা ডিভিশনের 20-25 জন গার্ড সিক লিভ নিচ্ছেন ৷ এই নির্দেশ মানা যে আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়, সেটা আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম ৷ কর্তৃপক্ষ আমাদের আবেদনে সাড়া দেয়নি ৷ আমরা এনিয়ে আইনের পথে যাব ৷ ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে আমাদের একটা ভূমিকা থাকে ৷ তাই আজ সব জায়গায় গার্ডরা লিভে যাননি ৷ আজ মালদা ও বর্ধমানে যেসব গার্ডের ডিউটি পড়েছিল, তাঁরাই সিক লিভে গিয়েছেন ৷ ভবিষ্যতে অন্যান্য ডিভিশনের গার্ডরাও গণহারে সিক লিভে চলে গেলে রেল যোগাযোগে কিন্তু বেশ ভালো প্রভাব পড়বে ৷"
এদিন মালদা ডিভিশনে সিক লিভ নেওয়া গার্ডদের কয়েকজন জানান, এমনিতেই তাঁদের প্রায় প্রতিদিন অতিরিক্ত ডিউটি করতে হচ্ছে ৷ তাঁরা পর্যাপ্ত বিশ্রামও পাচ্ছেন না ৷ তার উপর হ্যান্ড-ব্রেক কষার দায়িত্বও তাঁদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে ৷ তাঁরা কর্তৃপক্ষের এই নির্দেশ মানছেন না ৷ অবিলম্বে এই নির্দেশিকা প্রত্যাহার করা না-হলে পূর্ব রেলের প্রায় 700 গার্ড বিভিন্ন উপায়ে কর্মবিরতি শুরু করবেন ৷ যদিও এনিয়ে প্রশ্ন করা হলে মালদা ডিভিশনের ম্যানেজার মণীশ গুপ্তা জানান, বিষয়টি সঠিক তাঁর জানা নেই ৷ খোঁজখবর নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে পারবেন ৷ তবে এদিন রেল চলাচলে কোনও বিঘ্ন ঘটেনি ৷