কলকাতা, 26 জুলাই: রাজ্যপালের মানহানি সংক্রান্ত মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশ সংশোধন করল ডিভিশন বেঞ্চ । বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় ও বিচারপতি বিশ্বরূপ চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চ শুক্রবার তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, বাক-স্বাধীনতার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার । সত্য জানার অধিকার সবার আছে এবং সেই সত্য যদি জনস্বার্থের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাহলে সেই বিষয়ে জনপ্রতিনিধির জনসমক্ষে বলার অধিকার আছে ৷ সুপ্রিম কোর্ট একাধিক নির্দেশে সে কথা উল্লখ করেছে ।
এই পরিপ্রেক্ষিতে ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, এঁরা প্রত্যেকেই স্বাধীনভাবে তাঁদের কথা বলতে পারেন । তবে অবশ্যই তা যেন অসত্য ও মানহানিকর না হয় তা লক্ষ্য রাখতে হবে । সিঙ্গল বেঞ্চ সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর এই বিষয়ে নির্দেশ দেবে । 15 জুলাই বিচারপতি কৃষ্ণা রাওয়ের সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ চারজন আপিল করেছিলেন ডিভিশন বেঞ্চে ।
কুণাল ঘোষের তরফে আইনজীবী ধ্রুব ঘোষ এদিন বলেন, "দিল্লির তাজ প্যালেস হোটেলেও রাজ্যপাল একজনকে যৌন হেনস্থা করেছেন ৷ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে বলে কুণাল সেই ঘটনার উল্লেখ করেছেন মাত্র । এতে কীভাবে মানহানি করা হয় ? কুণাল একজন সাংবাদিক, ফলে তিনি এই বিষয়ে কিছু বলতেই পারেন । তাঁর বাক-স্বাধীনতা আছে ।"
এর আগে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে আইনজীবী সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, "মামলায় সংবাদমাধ্যমের বক্তব্যকে ভিত্তি করা হলেও কোনও মিডিয়া হাউসকে মামলায় যুক্ত করা হয়নি । কোনও রকম মানহানিকর মন্তব্য করেননি মুখ্যমন্ত্রী । তিনি জননেত্রী হিসাবে কিছু কথা বলেছেন । কিন্তু সেগুলো কোনওভাবেই মানহানিকর হতে পারে না । কারণ এই বক্তব্য নিয়ে অনেক আগে থেকেই জনসমক্ষে আলোচনা হচ্ছে । সংবিধানের 19 ধারা অনুযায়ী প্রত্যেকের বাক-স্বাধীনতা আছে । অবিলম্বে সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ জারি করা হোক ।"
বর্ষীয়ান আইনজীবী ও প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্র তৃণমূল বিধায়ক সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে বলেন, "বিধানসভায় সায়ন্তিকা শপথ গ্রহণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে চিঠি দিয়েছিলেন । কারণ রাজভবনে সাম্প্রতিক কালে একটা ঘটনা ঘটার পর সেখানে যেতে তিনি ভয় পাচ্ছেন বলে জানান । এখানে মানহানিকর বক্তব্য কোথায় ?"
রাজ্যপালের তরফে আইনজীবী ধীরজ ত্রিবেদী এদিন বলেন, সিঙ্গল বেঞ্চ অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ চারজনকে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন 14 অগাস্ট পর্যন্ত । এই মামলায় এখনও কোনও চূড়ান্ত নির্দেশ আসেনি । প্রত্যেকেই স্বীকার করেছেন যে, তাঁরা এই ধরনের মন্তব্য করছেন । এখন সেটাকে নিজেদের বাক-স্বাধীনতা বলে দাবি করছেন । দুই বিধায়ক রাজভবনে শপথ গ্রহণ করতে যেতে চান না বলে যে চিঠি তাঁরা রাজ্যপালকে দিয়েছিলেন, সেখানে একটা জায়গাতেও কোথাও মহিলারা রাজভবন যেতে ভয় পাচ্ছেন বা এই ধরনের কোনও বক্তব্য নেই । কিন্তু তাঁরা বাইরে মন্তব্য করেছেন, যেটা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে ।"
তিনি আরও বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অসত্য মন্তব্য করেছেন । 'মহিলারা রাজভবন যেতে ভয় পাচ্ছেন' বলেছেন । কিন্তু কারা সেই মহিলা ? কোন মহিলারা বলেছে ? সিঙ্গল বেঞ্চ সেই জন্যই মামলার শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছিলেন ।"