মালদা, 18 এপ্রিল: অবশেষে জাতীয় মহিলা কমিশনের নির্দেশে পিছু হটল পুলিশ প্রশাসন । শুক্রবার বিকেলে জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রাহাতকারের নির্দেশে বৈষ্ণবনগর থানার পারলালপুর হাইস্কুলের শরণার্থী শিবিরে ঢুকতে পারে সংবাদমাধ্যম ৷ সাংবাদিকদের সামনে পেয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের জেলখানায় বন্দি করে রাখার অভিযোগ করলেন শরণার্থীরা । রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও এদিন কথা বলেন শরণার্থীদের সঙ্গে ।
রাজ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে ৷ শান্তি ফেরানোর পাশাপাশি ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানোর জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন রাজ্যপাল ।
দুপুরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, বিকেলে জাতীয় মহিলা কমিশন ও সন্ধ্যা নাগাদ রাজ্যপাল মালদার শরণার্থী শিবিরে যান । সকলের সঙ্গে কথা বলার পর রাজ্যপাল বলেন, "এখানে এসে ঘরছাড়া মানুষদের সঙ্গে কথা বললাম ৷ তাঁদের উপর কতটা অত্যাচার হয়েছে তা তাঁরা জানালেন । ওখানে মহিলাদেরও মারধর করা হয়েছে । কোলের বাচ্চাকে ছুড়ে ফেলা হয়েছে । বাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷ এসব কিছুতেই বরদাস্ত করা যায় না । এঁরা জানিয়েছেন, গ্রামে বিএসএফ ক্যাম্প বসানো হলে তাঁরা ঘরে ফিরবেন । পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করা হলে তাঁরা বাড়ি ফিরতে চান না ।" স্বচক্ষে সব দেখার পর রিপোর্ট দেবেন বলে জানান রাজ্যপাল । এরপর তিনি রাত 8টা নাগাদ মালদার ওই স্কুল থেকে বেরিয়ে যান ।

এক শরণার্থী, সামশেরগঞ্জের সুবল সিংহের অভিযোগ, "গতকাল রাত 12টা থেকেই পুলিশ ও প্রশাসন আমাদের ঘরে ফেরাতে তৎপর হয়ে ওঠে । কিন্তু আমরা এই পরিস্থিতিতে কিছুতেই ঘরে ফিরব না । ওখানে আমাদের কেটে ফেলা হবে । মেয়েদের ধর্ষণ করা হবে । একমাত্র কেন্দ্রীয় বাহিনীর ক্যাম্প বসলেই আমরা ঘরে ফিরে যাব । তবে গ্রামের মানুষ আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন । গতকাল সারারাত তাঁরা গ্রাম পাহারা দিয়েছেন । যাতে প্রশাসন আমাদের সরাতে না পারে ।"

আরেক ঘরছাড়া মহিলা রিংকি মণ্ডল বলেন, "এখানে আমরা বন্দি হয়ে রয়েছি । খাবার,পানীয় জল যা জুটছে আমরা তাতে ঠিক আছি । কিন্তু আমাদের কারও সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না । বাইরে বেরোতে দেওয়া হচ্ছে না । আমরা ঘরে ফিরতে চাই । কিন্তু পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করা হলে আমরা ঘরে ফিরব না ।"
বিষয়টি নিয়ে জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার বলেন,"এখানে যাঁরা রান্না করছিলেন পুলিশ তাঁদের জোর করে তুলে নিয়ে গিয়েছে । যে মানুষগুলোর ওপর নারকীয় অত্যাচার হয়েছে তাদের খাওয়া বন্ধ করে জোর করে বাড়ি পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে । এখানে আশ্রয় নেওয়া মহিলারা বলছেন, তাঁরা বাড়ি চান না, টাকা চান না । তাঁরা শুধু কেন্দ্রীয় বাহিনী চান । নিজেদের সম্মান নিয়ে বাঁচতে চান ।"

তিনি আরও বলেন, "বিশেষ একটি গোষ্ঠীর মানুষ হওয়ায় বেছে বেছে তাঁদের ঘর পোড়ানো হয়েছে । বাড়িতে থাকলে তাঁদের ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে । রামকৃষ্ণ মিশনের মতো যেসব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে চাইছে তাদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না । এমনকি সংবাদমাধ্যমকেও স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না । কারণ, তারা এই মানুষগুলোর কথা বাইরে তুলে ধরবে । যেভাবে এখানে মহিলাদের সঙ্গে আচরণ করা হচ্ছে আমি তার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি । আমরা যা করার করব কিন্তু মহিলাদের সম্মান কিছুতেই নষ্ট হতে দেব না ।"