বোলপুর, 13 সেপ্টেম্বর: শান্তিনিকেতনে সোনাঝুরির 'বেআইনি' হাটের জন্য ধুকছে সরকারি কর্মতীর্থ হাট । অভিযোগ এমনটাই। এমনকী, এই সোনাঝুরির খোয়াই হাটের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতি সপ্তাহে টাকাও নেওয়া হয় বলে অভিযোগ ৷ যা বছরে হিসেবে কয়েক লক্ষ টাকা। এই টাকা কোথায় যায় ? কে নেয় ? উঠছে এমনই নানা প্রশ্ন ৷
বন দফতরের দাবি, তাদের খাতে জমা পরে না এই টাকা ৷ এমনকী বোলপুর পুরসভাতেও এই টাকা আসে না। এর সঙ্গেই প্রশ্ন উঠেছে, বন দফতরের জায়গায় কীভাবে একটি ব্যবসায়িক হাট বসতে পারে ? জঙ্গল ধ্বংস করে এই হাট বসা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে সরব বোলপুর-শান্তিনিকেতনের পরিবেশ প্রেমীরা ৷
বোলপুর পুরসভার চেয়ারপার্সন পর্ণা ঘোষ বলেন, "আমাদের খাতে সোনাঝুরির হাট থেকে কোনও টাকা আসে না। অথবা, আমরা হাট পরিচ্ছন্ন রাখার পরিষেবা দিয়ে থাকি।" অন্যদিকে, বন দফতরের অতিরিক্ত জেলা আধিকারিক (এডিএফও) সোমনাথ চৌধুরী বলেন, "এই হাট নিয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে রিপোর্ট দেব ৷ আমাদের খাতে হাট থেকে কোনও টাকা আসে না।"
আনুমানিক 2000 সালে শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি জঙ্গলে আশ্রম কন্যা শ্যামলী খাস্তগীর স্থানীয় আদিবাসী শিল্পদের নিয়ে 'শনিবারের হাট' বসিয়েছিলেন ৷ 2012-13 সাল থেকে এই হাট 'খোয়াই হাট' নামে পরিচিতি পায় ৷ আর দিন দিন হাটের পরিধিও বাড়তে থাকে ৷ সোনাঝুরির এই 'বেআইনি' হাটের জন্য কার্যত ধুঁকছে সরকারি কর্মতীর্থ হাট। খোয়াই হাটের অদূরে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের নিয়ে তৈরি কর্মতীর্থ হাট ৷ তবে তাদের বিকিকিনি তেমন নেই। কারণ, পর্যটকের আকর্ষণ সোনাঝুরির খোয়াই হাট। কর্মতীর্থ হাটের ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন, বন দফতরের জায়গায় কীভাবে একটি ব্যবসায়িক হাট বসতে পারে ?
কর্মতীর্থ হাটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সুনিতা বিশ্বাস, সুমিতা খাতুনরা বলছেন, "আমাদের এটা সরকারি হাট। আর সোনাঝুরির ওই হাট বেআইনি ৷ ওই হাটের জন্য আমাদের বিক্রি নেই ৷ ওই হাটে প্রচুর টাকার লেনদেন হয়। পর্যটকেরা ওখানেই যান ৷ আর আমরা ঋণ নিয়ে জিনিস কিনে ব্যবসা করছি, আমাদের বেচাকেনা নেই।" বর্তমানে সোনাঝুরির জঙ্গলে খোয়াই হাটে প্রায় 2000 ব্যবসায়ী বসেন বলে জানা গিয়েছে ৷ অভিযোগ, বর্তমানে বেশিরভাগই বহিরাগত ব্যবসায়ী। আদিবাসী শিল্পী-ব্যবসায়ী নেই বললেই চলে ৷ জানা গিয়েছে, এই হাটের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতি শনিবার 20 টাকা করে নেয় হাট কমিটি। এছাড়া, উৎসব-অনুষ্ঠানে দিতে হয় আলাদা চাঁদা। বছরে প্রায় 20 লক্ষ টাকা ওঠে এই হাট থেকে।
তবে এই বিপুল অঙ্কের টাকা কোথায় যায়, উঠছে প্রশ্ন ৷ বন দফতর জানাচ্ছে তাদের খাতে এই টাকা জমা পরে না ৷ বোলপুর পুরসভা জানাচ্ছে, তাদের খাতে এই টাকা জমা পরে না ৷ অথচ, হাট পরিচ্ছন্ন রাখার পরিষেবা দেয় বোলপুর পুরসভা ৷ শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদ জানাচ্ছে, তাদের খাতেও এই টাকা জমা পরে না ৷ তাহলে হাট পরিষ্কারের নামে তোলা এই বিপুল অঙ্কের টাকা কোথায় যায় ? কে বা কারা রয়েছে এর নেপথ্যে ?
সোনাঝুরির খোয়াই হাটের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তোলা টাকা যে সরকারি কোন খাতে যায় না তা কার্যত স্বীকার করে নিয়ে হাট কমিটির সদস্য তন্ময় মিত্র বলেন, "আমাদের এই হাট বহু দিনের। প্রতি সপ্তাহে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে 20 টাকা করে নেওয়া হয় ৷ ওই টাকায় হাট পরিষ্কার করা হয় ৷ বাকি টাকা আমাদের মধ্যেই থাকে। কারও কোনও সমস্যা হলে তখন দেওয়া হয়।"