বহরমপুর, 15 এপ্রিল: সামশেরগঞ্জে অশান্তির নেপথ্যে রয়েছে রাজনৈতিক সমীকরণ এবং পুলিশের কোনও উচ্চপদস্থ কর্তার অঙ্গুলিহেলন ৷ শাসকদল ও বিরোধী বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে এই ঘটনা ঘটিয়েছে, অভিযোগ তুললেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ৷ যদিও তিনি সরাসরি কোনও দলের নাম উল্লেখ করেননি ৷ এই অশান্তি সামলাতে পুলিশি ব্যর্থতার জন্য দায়ী পুলিশেরই কোনও এক শীর্ষস্থানীয় আধিকারিক, অভিযোগ কংগ্রেস নেতার ৷
মঙ্গলবার বহরমপুরে সাংবাদিক বৈঠকে এমন অভিযোগ করলেন কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী ৷ তাঁর সাংবাদিক বৈঠকে অশান্তির কারণ হিসাবে একাধিকবার সামশেরগঞ্জে কংগ্রেসের অপ্রত্যাশিত জয়ের কথা উঠে এল ৷ পাশাপাশি ঘটনার শুরু থেকে পুলিশ কেন নিষ্ক্রিয় ছিল ? তা নিয়েও বারবার প্রশ্ন তুলেছেন তিনি ৷ সাংবাদিকদের কাছে মুর্শিদাবাদের হিংসার বিষয়ে ওয়াকফ প্রসঙ্গ উত্থাপন করেননি তিনি ৷
বহরমপুরের প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর দাবি, "গত নির্বাচনে সামশেরগঞ্জে কংগ্রেসের অপ্রত্যাশিত জয়, সামশেরগঞ্জের এই অশান্তির পিছনে একটা কারণ ৷ যারা এই হিংসার ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা জানত না এর ব্যাপ্তি এতটা হবে ৷ যারা ভোটে হেরে যাবে তারা আশঙ্কা করেছিল, ভোটের বিভাজনে কংগ্রেস জিতে যাবে ৷ তারা চিন্তিত ছিল ৷"
মুর্শিদাবাদের অশান্তিতে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছে বিরোধী দলগুলি ৷ এমনকী তৃণমূলের মধ্যে থেকেও এই অভিযোগ করা হয়েছে ৷ এই প্রসঙ্গে অধীরের কথায়, "পুলিশের মধ্যে কোনও 'ফিফথ কলাম' কাজ করছে কি না, তা দেখতে হবে ৷ পুলিশ কেন চুপ ছিল ? শুধু কি রাজনৈতিক নেতাদের ইশারায় ? পুলিশের মধ্যে কোনও উপরওয়ালার ইশারায় ? (অশান্তিতে) পুলিশের মধ্যে কোনও উপরওয়ালার সাম্প্রদায়িক মানসিকতা কাজ করেছে ? এই প্রশ্ন তোলা দরকার ৷"
কংগ্রেসের প্রবীণ নেতার দাবি, সামশেরগঞ্জে একটি গোষ্ঠী আরেক গোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছে ৷ একইসঙ্গে ঘটনায় 14-15 জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি ৷
অধীরের প্রশ্ন, "যে অশান্তির শুরু জঙ্গিপুরের উমরপুরে ৷ তা সেখান থেকে সামশেরগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা হয়ে কেন ছড়িয়ে পড়ল ? পুলিশ কি মুর্শিদাবাদের ভূগোল, জনবিন্যাস জানে না ? গত বছর আমাকে ভোটে হারানোর জন্য অশান্তির ঘটনা ঘটানো হয়েছিল ৷ সেখান থেকে বেলডাঙা, নওদা ৷ তারপর থেকে এক বছর ধরে অশান্তির ঘটনা ঘটে চলেছে ৷ মুর্শিদাবাদের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে উত্তর প্রান্তে এই অশান্তি এমনি এমনি ছড়িয়ে পড়ছে না ৷"
তিনি জোর দিয়ে বলেন, "নির্বাচনী অঙ্ক বড় খতরনাক ৷ সামশেরগঞ্জে কংগ্রেসের জয় যদি কারও মনে ভীতির সৃষ্টি করে থাকে, কেউ যদি মনে করে আমার হার নিশ্চিত, তাহলে অশান্তির নেপথ্যে অবশ্যই তাদের প্রশ্রয় থাকতে হবে ৷ নির্বাচনী সমীকরণ এই কথা বলছে ৷"
পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগের নেপথ্যে পুলিশেরই শীর্ষকর্তার দিকে আঙুল তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি ৷ অধীরের বক্তব্য, "কেন পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছিল ? সেটা কি শুধুই রাজনৈতিক নেতাদের ইঙ্গিতে ? নাকি পুলিশেরই কোনও শীর্ষ আধিকারিকের ষড়যন্ত্র সেখানে ছিল ? আমি কোনও ব্যক্তির নাম নিচ্ছি না ৷ পুলিশ বাহিনীকে অপবাদ দিচ্ছি না ৷ কেন একটি শৃঙ্খলিত বাহিনী ঘণ্টার পর ঘণ্টা চুপ করে থাকবে ? কেন বিএসএফ-কে ডেকে চুপ করে বসিয়ে রাখা হল ৷ এটা জানার ও প্রশ্ন করার অধিকার আমাদের আছে ৷ তাই করছি ৷"
সোমবার রাতে মুর্শিদাবাদে ফিরেছেন কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী ৷ এরপর এদিন সাংবাদিক বৈঠক শেষে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ তিনজনের সঙ্গে দেখা করেন তিনি ৷ সেখান থেকে তিনি সরাসরি সামশেরগঞ্জ যান ৷ ঘটনায় ইন্ধন জুগিয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল ও বিরোধী দল বিজেপি ৷ তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে মুর্শিদাবাদে এসে দুর্গতদের পাশে থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন ৷ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি তুলেছেন অধীর চৌধুরী ৷
সংশোধিত ওয়াকফ বিল সংসদে পাশ হওয়ার পর থেকে এর বিরুদ্ধে দেশের নানা প্রান্তে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয় ৷ পশ্চিমবঙ্গের মালদা, মুর্শিদাবাদে সেই আঁচ এসে পড়ে ৷ 7 এপ্রিল থেকে মুর্শিদাবাদের সুতি, ধুলিয়ান, সামশেরগঞ্জের মতো এলাকায় অশান্তির ঘটনা শুরু হয় ৷ পরদিন অর্থাৎ 8 তারিখ থেকে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে ৷ কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় সুতি, ধুলিয়ান সামশেরগঞ্জ ৷
12 এপ্রিল, শনিবার এলাকাগুলিতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন জানান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷ আদালত তাতে সম্মতি দেয় ৷ এরপর শনিবার রাত থেকে এলাকায় পুলিশের সঙ্গে টহল দিতে থাকে সিআরপিএফ জওয়ান ৷ এদিকে শুক্রবার রাতে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে নেমেছিলেন বিএসএফ জওয়ানরা ৷ এই হিংসার ঘটনায় মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ ঘর ছেড়ে মালদায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে ৷