জলপাইগুড়ি/আলিপুরদুয়ার, 4 জুন: হাতি ও মানুষের সংঘাত নিয়ে উদ্বিগ্ন বন দফতর । শেষ চারমাসে আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলার জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে 25 জনের । বিশেষ করে বৈকুন্ঠপুর ও জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান এলাকায় এমন ঘটনা বেশি ঘটছে । হাতি ও মানুষের সংঘাত এড়াতে এবার বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করল বন দফতর ৷
জলপাইগুড়ি বৈকুন্ঠপুর বনবিভাগ, জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান, গরুমারা জাতীয় উদ্যান ও বক্সা টাইগার রিজার্ভ সংলগ্ন এলাকায় হাতির আক্রমণে পরপর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে ৷ মৃত্যুর সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে ।
গত 14 মে তারিখে হাতির হানায় রাজেশ ওরাও (36) নামে এক পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয় । সেই ঘটনাটি ঘটে জলপাইগুড়ি গাজোলডোবা তিস্তা ক্যানেল সংলগ্ন ভালোবাসা মোড়ের কাছে ঠকঠকি মোড় এলাকায় । এরপর গত 22 মে বৈকুন্ঠপুর বনবিভাগের জঙ্গল থেকে হাতি লোকালয়ে বেরিয়ে এসে দুইজনকে মেরে ফেলে । গাজোলডোবা টাকিমারির এলাকার বাসিন্দা তুষার দাস, নারায়ণ দাস নামে দুই যুবক হাতি তাড়াতে গিয়ে হাতির হানায় মারা যান । কয়েকদিন না পেরোতেই ফের 31 মে গভীর রাতে ফালাকাটা ব্লকের কুঞ্জনগরে হাতির হানায় একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয় । বেঘোরে প্রাণ হারান বৃদ্ধা মা, ছেলে ও এক সদ্যোজাত শিশুকন্যা ৷
বর্ষার মরশুমে এই মুহূর্তে জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে কমপক্ষে 150টি হাতি অবস্থান করছে । ফলে রাত নামতেই ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে তারা পাকা কাঁঠাল, ঘরে মজুত রাখা ভুট্টা সাবাড় করার লোভে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে ।
আলিপুরদুয়ারের ফালাকাটা কুঞ্জ নগর এলাকায় গ্রামপঞ্চায়েতের সদস্য গোপালচন্দ্র বর্মনের অভিযোগ, "সন্ধ্যা নামলেই হাতির তাণ্ডব শুরু হয়ে যায় । জমির ফসল নষ্ট করছে । পর্যাপ্ত কর্মীর অভাব, হাতি তাড়াতে কেউ আসছেন না । এর ফলে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল । একই পরিবারের তিনজন মারা গিয়েছে হাতির হানায় । এটা প্রশাসনের গাফিলতি বলে আমি মনে করি । আমরা চাই, হাতির আক্রমণ যেভাবেই হোক আটকাতে হবে । মানুষকে সুরক্ষা দিতে হবে বলে আমরা দাবি করছি ।"
বন্যপ্রাণী প্রেমী জয়দেব দে-র কথায়, "বন্যপ্রাণীদের উপস্থিতি ও আচরণ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হলেও, অনেকাংশেই মানুষের হুঁশ ফিরছে না । লোকালয়ে হাতির উপস্থিতি টের পাওয়া মাত্রই তাকে তাড়াতে নিরাপদ আস্তানা ছেড়ে বেরিয়ে পড়ছেন সাধারন মানুষজন । ফলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হচ্ছে না । বন বিভাগের কর্মীর অভাবেও হাতি তাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না ।"

পরপর হাতি-মানুষ সংঘাতের ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে বন দফতরের ৷ এমন ঘটনা রুখতে তারা বেশকিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে ৷ ইতিমধ্যেই জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন লোকালয়গুলিতে 28টি দল গঠন করে মানুষকে সচেতন করার জন্য জোরদার প্রচারে নেমেছেন বনকর্মীরা ।
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের বিভাগীয় বনাধিকারিক প্রবীণ কাশোয়ান জানান, "এই সময়ে হাতি ও মানুষের সংঘাত বেড়ে থাকে । বিশেষ করে মে মাস থেকে জুলাই মাসের এমন ঘটনার সংখ্যা বেশি হয় । মানুষ ও হাতির সংঘাত যাতে এড়ানো যায়, সে জন্য আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ করেছি । ইতিমধ্যেই জলদাপাড়া বন্যপ্রাণী বিভাগের 200 লোক মোট 28টি দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ডিউটি করছে । বন্যপ্রাণী বিভাগের 40টিরও বেশি দল সচেতেনতা বৃদ্ধি করছে । গ্রামে এবং চা-বাগান এলাকায় তারা জোরদার প্রচার শুরু করেছে । 200 জনেরও বেশি বনকর্মী ও জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য এই 'ডোর-টু-ডোর' ক্যাম্পেইনে অংশ নিচ্ছেন । 2000 এসএমএস-এর মাধ্যমে হাতির লোকেশন দেওয়া হচ্ছে । ওসি, আইসি-সহ অন্যান্যদের সতর্ক করা হয়েছে । জলদাপাড়ার 100 কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ফেনসিং রয়েছে ।"
বৈকুন্ঠপুর বনবিভাগের বিভাগীয় বনাধিকারিক রাজা এম জানান, "হাতির আক্রমণে প্রাণহানির ঘটনার পরই আমরা এলাকায় এলিফ্যান্ট স্কোয়াড বাড়িয়েছি । অস্থায়ীভাবে এলিফ্যান্ট ক্যাম্প করা হয়েছে । কিউআরটি করা হয়েছে । আমাদের ছ'টি টিম করা হয়েছে । কোনওভাবেই হাতি যাতে ক্ষতি করতে না-পারে সে ব্যাপারে আমরা সচেতন রয়েছি ।"