কলকাতা, 16 সেপ্টেম্বর: তিনদিনের টানা বৃষ্টির ফলে বেড়েছে নদীর জল । জল ঢুকে প্লাবিত একাধিক এলাকা ৷ ফলে পুজোর মুখে আবারও বন্যার ভ্রুকুটি রাজ্যে । অনেকেরই আশঙ্কা, এবারের পুজোয় হয়তো নৌকা ডিঙ্গি নিয়েই কাটাতে হবে তাঁদের । তবে প্লাবিত এলাকাগুলিতে নজর রাখছে প্রশাসন । একনজরে দেখে নেব বিভিন্ন এলাকার কী পরিস্থিতি ৷
- পশ্চিম মেদিনীপুর
জলমগ্ন ঘাটাল ও চন্দ্রকোনা: গত শুক্রবার রাত থেকে একনাগাড়ে ঝোড়ো হাওয়া ও মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে, যা সোমবারও অব্যাহত । এই অতিবৃষ্টির কারণে জল বেড়েছে ঘাটালের শিলাবতী, মনসুকার ঝুমি ও চন্দ্রকোনার ক্ষীরপাই কেঠিয়া নদীতে । ইতিমধ্যেই ঘাটাল পৌরসভার 16 ও 17 নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কিছু ঢালাই রাস্তা এবং চন্দ্রকোনার বেশকিছু গ্রামীণ পিচ রাস্তা-সহ রাজ্য সড়ক ডুবেছে জলের তলায় । জলে ডুবেছে মহকুমার বিঘের পর বিঘে কৃষিজমি । পুজোর আগে এই দুর্যোগ দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে বাসিন্দাদের । মূলত ঘাটাল, চন্দ্রকোনা ও দাসপুরের বেশকিছু নিচু এলাকায় প্রবল বৃষ্টির ফলে দেখা দিয়েছে জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা ।
অন্যদিকে, চন্দ্রকোনার পিংলা গ্রামে টানা বর্ষণে জলবন্দি 7টি পরিবার । ঘোষকিরা, চৈতন্যপুর এলাকায় শিলাবতী নদীর জল বৃদ্ধিতে ডুবেছে গ্রাম পঞ্চায়েতের তৈরি কাঠের সেতু ৷ নৌকা নামিয়ে চলছে নদী পারাপার । যদিও এই ঘটনায় আশ্বস্ত করেছেন পঞ্চায়েত সদস্য পুতুল বাগ দোলুই । তিনি বলেন, "আমি কর্মীদের নিয়ে এলাকা দেখতে গিয়েছিলাম । ওই কয়েকটি পরিবার এই জলমগ্ন পরিস্থিতিতে দুর্ভোগে রয়েছে । এই সময়ে ওদের পাশে দাঁড়ানোর সঙ্গে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে । এই বিষয়টি জানানো হয়েছে প্রশাসনের উচ্চ আধিকারিকদেরও ।" টানা বর্ষণে মাথায় হাত ব্যবসায়ী-সহ পুজো কমিটিদের ।
- পশ্চিম বর্ধমান
দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে বাড়ছে জল ছাড়ার পরিমাণ: টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে জেরবার দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে শিল্পাঞ্চলও । অতিবৃষ্টির কারণে দামোদরের দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ বেড়ে এখন 48.550 কিউসেক । পুজোর মুখে কি তাহলে বন্যার আশঙ্কা দামোদরের নিম্ন অববাহিকায় অবস্থিত তিন জেলায় ? সেই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে মানুষের মনে ৷ তবে এই জল ছাড়ার পরিমাণ পাঞ্চেত বা মাইথনের জল ছাড়ার কারণে নয় বলে সেচ দফতর সূত্রে খবর । গত 24 ঘণ্টায় দুর্গাপুরে বৃষ্টির পরিমাণ 70 মিলিমিটার । আসানসোলে বৃষ্টির পরিমাণ 151. 40 মিলিমিটার ।
কাঁকসায় টুমনি নদীর সেতু জলের তলায়: গভীর নিম্নচাপের জেরে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে ভারী বৃষ্টি । সেই বৃষ্টির জেরে বেড়েছে টুমনি নদীর জলস্তর । সেই জলে প্লাবিত হয়েছে কাঁকসার বিদবিহারের শিবপুর, কৃষ্ণপুর, নবগ্রাম-সহ একাধিক গ্রামের চাষের জমি । কয়েক হাজার বিঘা চাষের জমি এখন জলের তলায় । টুমনি নদীর জলে শিবপুরের ভাসাপুল জলমগ্ন হওয়ায় বিচ্ছিন্ন পশ্চিম বর্ধমানের সঙ্গে বীরভূমের যোগাযোগ । চরম দুর্ভোগের মুখে দুই জেলার মানুষ । চরম ক্ষতির মুখে কৃষকরা ।
বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে দারকেশ্বর নদের জল: নিম্নচাপের চোখরাঙানিতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে আরামবাগে । বেশকিছু জায়গায় বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে জল । মাটির বস্তা দিয়ে কোনও রকমে বাঁধ রক্ষার কাজ চলছে । বহু মানুষ গৃহহীন । আশ্রয় নিয়েছে ত্রাণ শিবিরে । দারকেশ্বর নদের জলও বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে । বাঁধ উপচে নদীর জলে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা । বেশকিছু রাজ্য সড়কের উপর দিয়ে বইছে জল । আরামবাগের বেশকিছু ওয়ার্ডে বাড়ির ভেতরে জল ঢুকেছে । আরামবাগের নেতাজি মহাবিদ্যালয় জলমগ্ন । অপরদিকে কামারপুকুর কলেজেও ঢুকেছে জল । গবাদি পশু ও মানুষ একত্রে আশ্রয় নিয়েছে ত্রাণ শিবিরে । অপর দিকে প্রশাসনের তরফ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে ক্রমাগত ।
বারাবনিতে গোয়াল ঘর ভেঙে একজনের মৃত্যু: টানা বৃষ্টির কারণে গোয়াল ঘরের দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হল এক ব্যক্তির । সোমবার এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে বারাবনি থানার ইটাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের চটি রানিগঞ্জ গ্রামে । মৃত ব্যক্তির নাম অশোক বন্দোপাধ্যায় (52)। ওই ব্যক্তি ছাড়াও গোয়ালের ভাঙা দেওয়ালের তলায় চাপা পড়ে মারা গিয়েছে একটি গরু । আরও একটি গরু জখম হয়েছে ।
- বাঁকুড়া
বন্যা পরিস্থিতি সোনামুখীতে: সোনামুখীর দামোদর নদীর জল বেড়ে তৈরি হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি ৷ নড়বড়ে হয়ে পড়েছে বাঁধ ৷ আতঙ্কিত দামোদর তীরবর্তী বিস্তৃত এলাকার সাধারণ মানুষরা ৷ অন্যদিকে টানা বৃষ্টিতে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে কৃষকরা । সোনামুখী ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কয়েকশো বিঘা সবজি জমিতে পচন ধরতে শুরু করেছে ।
জল ছাড়া হল মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে: গত তিনদিনের টানা বৃষ্টির কারণে এবার জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিল বাঁকুড়ার কংসাবতীর মুকুটমণিপুর জলাধার কর্তৃপক্ষ ৷ সোমবার বেলা 12টা নাগাদ কংসাবতী জলাধার থেকে নদী বক্ষে 10000 কিউসেক জল ছাড়া হয় । এর জেরে নিম্ন অববাহিকায় বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ৷ তবে জল ছাড়া দেখতে পেয়ে খুশি পর্যটকেরা ।
বৃষ্টিতে মাটির দেওয়াল ধসে মৃত্যু প্রৌঢ়ার: মাটির দেওয়াল ধসে পড়ে মৃত্যু হল এক প্রৌঢ়ার । মৃতার নাম জ্যোৎস্না বাগদি (54)। ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়া 2 নম্বর ব্লকের হরিয়ালগাড়া গ্রামে । এই নিয়ে বাঁকুড়া জেলায় গত এক সপ্তাহে দেওয়াল ধসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল 2। নিম্নচাপের জেরে গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে বাঁকুড়ায় । স্থানীয়দের দাবি, তার জেরেই এই দুর্ঘটনা ।
- মুর্শিদাবাদ
ঝড়ের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড কলাবাগান: এক রাতের ঝড়েই লণ্ডভণ্ড মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি ব্লকের বিঘের পর বিঘে কলাবাগান । মাথায় হাত কলা চাষিদের । শুক্রবার সকাল থেকে আকাশ মেঘলাই ছিল । দুপুরবেলায় হঠাৎ ঘন কালো মেঘ নিয়ে আকাশ ঘনিয়ে আসে । তারপরেই শুরু হয় জেলা জুড়ে ভারী বৃষ্টি । সে বৃষ্টি গত শুক্রবার থেকে এখনও পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে ।