
রিলস বানানোর নামে পুলিশকর্মীর নাবালিকা মেয়েকে লাগাতার ধর্ষণ, গ্রেফতার ইউটিউবার বাবা-ছেলে
ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর 24 পরগনার হাড়োয়ায়৷ ঘটনায় জড়িত চার৷ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ দু’জন পলাতক৷

Published : October 12, 2025 at 5:15 PM IST
হাড়োয়া (উত্তর 24 পরগনা), 12 অক্টোবর: রিলস বানানোর জন্য ডেকে পুলিশকর্মীর নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল উত্তর 24 পরগনার হাড়োয়া থানা এলাকায়৷ অভিযোগের তির একজন ইউটিউবার ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে৷ অভিযোগ, তাঁরা প্রথমে নির্যাতিতার গোপন ছবি তোলে৷ তার পর সেই ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেল করে ধর্ষণ করে ওই নাবালিকাকে৷
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত ইউটিউবার অরবিন্দ মণ্ডল ঘটনার মাস্টারমাইন্ড। এই ঘটনায় পরোক্ষভাবে জড়িত অরবিন্দর স্ত্রী ও আরও একজন৷ ঘটনার পর থেকে তাঁরা বেপাত্তা। পলাতক দু'জনের খোঁজে তল্লাশি চলছে। ঘটনার তদন্তে নেমেছে হাড়োয়া থানার পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পনেরোর ওই নাবালিকার বাবা কলকাতা পুলিশে কর্মরত। নির্যাতিতার বাড়ি হাড়োয়ার মোহনপুরে। ওই এলাকারই বাসিন্দা অভিযুক্ত ইউটিউবার অরবিন্দ মণ্ডল। নাবালিকা মেয়েটি স্থানীয় একটি স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। নাচ ও গানে সে যথেষ্ট পারদর্শী। নাচ-গানের ভিডিয়ো বানানোর নাম করে কয়েকমাস আগে তাঁকে ডেকেছিলেন ওই ইউটিউবার এবং তাঁর নাবালক ছেলে।
ভিডিয়ো বানানোর নামে ওই নাবালিকাকে বিভিন্ন জায়গায় নিয়েও যাওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। প্রতিবেশী বলে ওই নাবালিকার পরিবার বিষয়টি নিয়ে প্রথমে আপত্তি তোলেনি। কিন্তু, পরে তারা জানতে পারে রিলস তৈরির নামে নাবালিকা মেয়ের কিছু অশ্লীল ছবি ও ভিডিয়ো গোপনে বানিয়ে রেখেছেন গুণধর বাবা-ছেলে। সেই ছবি-ভিডিয়ো দেখিয়েই শুরু হয়েছিল ব্ল্যাকমেল করা!
অভিযোগ, ওই নাবালিকাকে ফাঁকা বাড়িতে প্রথমে ধর্ষণ করেন ইউটিউবার অরবিন্দ। সেকথা তাঁর ছেলেকে জানায় মেয়েটি৷ সে নাবালিকা মেয়েটিকে বলে, ‘নাচ-গানের কনটেন্ট করতে গেলে এগুলো হয়েই থাকে’। অভিযোগ উঠেছে, তারই মধ্যে বিয়ে করার নামে ওই নাবালিকার সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেয় ওই নাবালক৷ এর পর সে-ও মেয়েটিকে ধর্ষণ করে৷ কাউকে কিছু জানালে নির্যাতিতার গোপন ছবি ও ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে অভিযুক্তরা ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকিও দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী কালীদাস মণ্ডল বলেন, "ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে চলতি মাসের সাত তারিখে। সেদিন অরবিন্দ তাঁর বাড়িতে নাবালিকাকে ধর্ষণ করেন। তার পর ছেলেও বিয়ে করার নামে সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে ধর্ষণ করেন তাকে। রাত হয়ে গেলেও বাড়িতে না-ফেরায় অরবিন্দর বাড়িতে গিয়ে নির্যাতিতার পরিবারের লোকজন দেখেন, নাবালিকার সিঁথিতে সিঁদুর। ভয়ে সে কেঁদে চলেছে। সেই অবস্থায় মেয়েটিকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে গেলে অভিযুক্তদের পরিবার বাধা দেয়। করে গালিগালাজও। এরপর, গ্রামের লোকজনকে ডেকে এনে নাবালিকাকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যায় পরিবারের লোকজন।’’
এর পরেই নির্যাতিতার পরিবার দ্বারস্থ হয় পুলিশের। অভিযোগও দায়ের করা হয় হাড়োয়া থানায়। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার সকালে পুলিশ ইউটিউবার অরবিন্দ মণ্ডল ও তার ছেলেকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছে। অভিযুক্ত দু'জনেরই কঠোর শাস্তি চেয়ে সরব হয়েছে নির্যাতিতার পরিবার।
বসিরহাট জেলার পুলিশ সুপার হোসেন মেহেদি রহমান বলেন, "পকসো আইনে মোট চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তার ভিত্তিতে দু'জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি দু'জন পলাতক। তাদের ধরতে সব রকমের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে নির্যাতিতার মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়েছে। ধৃত ওই দু'জনকে রবিবার দুপুরে বসিরহাট মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।"

