ETV Bharat / state

বাবু পালের জীবনাবসান, চন্দননগরের আলোয় আজ নিকষ অন্ধকার - Babu Pal Passes Away

Babu Pal Passes Away: প্রয়াত হলেন প্রখ্যাত আলোকশিল্পী বাবু পাল ৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল 64 বছর ৷ গতকাল রাতে কলকাতার একটি হাসপাতালে তাঁর জীবনাবসান ঘটে ৷

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Aug 21, 2024, 5:37 PM IST

ETV BHARAT
বাবু পালের জীবনাবসান (নিজস্ব চিত্র)

চন্দননগর, 21 অগস্ট: চন্দননগরের আলোক শিল্পে নক্ষত্রপতন । প্রয়াত বিখ্যাত আলোকশিল্পী বাবু পাল । 64 বছর বয়সে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে রেখে গেলেন তিনি । অসুস্থ হয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি কলকাতার একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৷ গতকাল রাতে সেখানেই তাঁর জীবনাবসান ঘটে ৷ তাঁর প্রয়াণে শুধু দেশ নয়, শোকে মুহ্যমান বিদেশে থাকা বাঙালিরাও ।

বাবু পালের জীবনাবসানে চন্দননগরের আলোয় নিকষ অন্ধকার (নিজস্ব ভিডিয়ো)

যে কোনও পুজো বা উৎসবে চন্দননগরের আলোকসজ্জা অন্য এক মাত্রা দেয় । সেখানকার জগদ্ধাত্রী পুজো ও শোভাযাত্রার আলোকসজ্জার খ্যাতি আজ ছড়িয়ে পড়েছে দেশ থেকে দেশান্তরে । এই শিল্পের অন্যতম কারিগর ছিলেন বাবু পাল । অমিতাভ বচ্চন থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের বাড়িতে চন্দননগরের আলোর জাদু ফুটিয়ে তুলেছিলেন তিনি । তাঁর প্রয়াণে শোকাহত আলোকশিল্পী থেকে জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সদস্যরা ।

টুনি বাল্ব থেকে এলইডি আলোর যুগ । বিজ্ঞানের গতিপথ ধরে চন্দননগরের আলোক শিল্প যে উচ্চতায় পৌঁছেছে, তাতে বাবু পালের অবদান নেহাত কম নয় । গোটা ভারত-সহ দুবাই ফেস্টিভ্যাল, এমনকি প্যারিসেও গিয়েছে তাঁর আলো শিল্প । কলকাতার দুর্গাপুজো থেকে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয় আলোক শিল্পকে আলাদা মাত্রা দিয়েছিলেন তিনি । তাঁর মৃত্যুতে আলোকশিল্পের একটা অধ্যায় শেষ হয়ে গেল বলেই মনে করছে চন্দননগর ।

চন্দননগরের আলোকশিল্পের জনক হলেন শ্রীধর দাস । 1973 সালে চন্দননগর বাগবাজার জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটি প্রথমবার আলোর শোভাযাত্রা শুরু করে । তার দীর্ঘদিন পর কলকাতার লোহার ব্যবসা ছেড়ে চন্দননগরে চলে আসেন সুপ্রিমকুমার পাল ওরফে বাবু পাল । চুঁচুড়ার শিল্পী অলোক প্রামাণিককে সঙ্গে নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন । অল্পদিনের মধ্যেই তিনি খ্যাতি অর্জন করেন । জগদ্ধাত্রী পুজোর আলোর শোভাযাত্রা বিখ্যাত হয়ে ওঠে তাঁর হাত ধরেই । ওই শিল্পে টুনি বাল্ব থেকে এলইডি'র অভিনবত্ব আনেন তিনিই । বাঁশের বাকারি থেকে লোহার মেকানিক্যাল স্ট্রাকচার জনপ্রিয়তা পায় তাঁর আমলেই । হালের শ্রীভূমি স্পোর্টিং-এর পুজো থেকে কলকাতার একাধিক নামি দুর্গাপুজো মণ্ডপ বাবু পালের আলোতেই সেজে ওঠে । তিনি চেয়েছিলেন, চন্দননগরের আলোকশিল্পের সার্বিক উন্নতি হোক ।

চন্দননগর লাইট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন বাবু পাল । পঞ্চাননতলায় তাঁর আলোর স্টুডিয়ো । সেখানে হরেক আলো । আলোর মেলা । প্রতি বছরই নতুন কিছু সৃষ্টির লক্ষ্যে মেতে থাকতেন তিনি । সেই অধ্যায়ের শেষ হল ।

বাবু পালের প্রয়াণে শোকাহত আলোকশিল্পের শ্রমিক থেকে শিল্পী থেকে শুরু করে চন্দননগর পুরনিগমের মেয়র রাম চক্রবর্তী, ডেপুটি মেয়র মুন্না আগরওয়াল, চন্দননগর ও ভদ্রেশ্বরের জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সদস্য-সহ অনেকেই । এই শিল্পের কিংবদন্তি শ্রীধর দাস বলেন, "বাবু আমার অনেক পরে কাজ শুরু করে । আগে লোহার ব্যবস্থা করত । পঞ্চানন তলায় একজনের থেকে আলো কিনে বাবু কাজ শুরু করে । অলোক প্রামাণিকের কাছে কাজ শিখেছিল । তারপর নিজের চেষ্টায় ও এতদূর পৌঁছেছে । ভালো লাগে যখন চন্দননগরের আলো মানেই বাবু পালের নাম আসে । ওর চলে যাওয়া দুঃখের ।"

বাবু পালের সঙ্গে অনেক শিল্পী ও কর্মচারী কাজ করতেন । তাঁদের অন্যতম শিল্পী রাজু কর বলেন, "বাবুদা শুধু ভালো শিল্পী নন, ভালো মানুষও ছিলেন । দীর্ঘদিন ধরে তাঁর সঙ্গে কাজ করেছি । আমাদের কারখানায় 40 থেকে 60 জন শ্রমিক কাজ করে । করোনার সময়ও আমাদের কাজ দিয়েছিলেন বাবুদা । কারওকে বসাননি ।"

চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজোর সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ সাউ বলেন, "বাবু পালের হাত ধরে চন্দননগরে বহু শিল্পী তৈরি হয়েছে । দেশ বিদেশে নাম করেছে চন্দননগরের আলোকশিল্প । তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া আলো জগতে ।"

চন্দননগর, 21 অগস্ট: চন্দননগরের আলোক শিল্পে নক্ষত্রপতন । প্রয়াত বিখ্যাত আলোকশিল্পী বাবু পাল । 64 বছর বয়সে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে রেখে গেলেন তিনি । অসুস্থ হয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি কলকাতার একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৷ গতকাল রাতে সেখানেই তাঁর জীবনাবসান ঘটে ৷ তাঁর প্রয়াণে শুধু দেশ নয়, শোকে মুহ্যমান বিদেশে থাকা বাঙালিরাও ।

বাবু পালের জীবনাবসানে চন্দননগরের আলোয় নিকষ অন্ধকার (নিজস্ব ভিডিয়ো)

যে কোনও পুজো বা উৎসবে চন্দননগরের আলোকসজ্জা অন্য এক মাত্রা দেয় । সেখানকার জগদ্ধাত্রী পুজো ও শোভাযাত্রার আলোকসজ্জার খ্যাতি আজ ছড়িয়ে পড়েছে দেশ থেকে দেশান্তরে । এই শিল্পের অন্যতম কারিগর ছিলেন বাবু পাল । অমিতাভ বচ্চন থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের বাড়িতে চন্দননগরের আলোর জাদু ফুটিয়ে তুলেছিলেন তিনি । তাঁর প্রয়াণে শোকাহত আলোকশিল্পী থেকে জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সদস্যরা ।

টুনি বাল্ব থেকে এলইডি আলোর যুগ । বিজ্ঞানের গতিপথ ধরে চন্দননগরের আলোক শিল্প যে উচ্চতায় পৌঁছেছে, তাতে বাবু পালের অবদান নেহাত কম নয় । গোটা ভারত-সহ দুবাই ফেস্টিভ্যাল, এমনকি প্যারিসেও গিয়েছে তাঁর আলো শিল্প । কলকাতার দুর্গাপুজো থেকে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয় আলোক শিল্পকে আলাদা মাত্রা দিয়েছিলেন তিনি । তাঁর মৃত্যুতে আলোকশিল্পের একটা অধ্যায় শেষ হয়ে গেল বলেই মনে করছে চন্দননগর ।

চন্দননগরের আলোকশিল্পের জনক হলেন শ্রীধর দাস । 1973 সালে চন্দননগর বাগবাজার জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটি প্রথমবার আলোর শোভাযাত্রা শুরু করে । তার দীর্ঘদিন পর কলকাতার লোহার ব্যবসা ছেড়ে চন্দননগরে চলে আসেন সুপ্রিমকুমার পাল ওরফে বাবু পাল । চুঁচুড়ার শিল্পী অলোক প্রামাণিককে সঙ্গে নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন । অল্পদিনের মধ্যেই তিনি খ্যাতি অর্জন করেন । জগদ্ধাত্রী পুজোর আলোর শোভাযাত্রা বিখ্যাত হয়ে ওঠে তাঁর হাত ধরেই । ওই শিল্পে টুনি বাল্ব থেকে এলইডি'র অভিনবত্ব আনেন তিনিই । বাঁশের বাকারি থেকে লোহার মেকানিক্যাল স্ট্রাকচার জনপ্রিয়তা পায় তাঁর আমলেই । হালের শ্রীভূমি স্পোর্টিং-এর পুজো থেকে কলকাতার একাধিক নামি দুর্গাপুজো মণ্ডপ বাবু পালের আলোতেই সেজে ওঠে । তিনি চেয়েছিলেন, চন্দননগরের আলোকশিল্পের সার্বিক উন্নতি হোক ।

চন্দননগর লাইট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন বাবু পাল । পঞ্চাননতলায় তাঁর আলোর স্টুডিয়ো । সেখানে হরেক আলো । আলোর মেলা । প্রতি বছরই নতুন কিছু সৃষ্টির লক্ষ্যে মেতে থাকতেন তিনি । সেই অধ্যায়ের শেষ হল ।

বাবু পালের প্রয়াণে শোকাহত আলোকশিল্পের শ্রমিক থেকে শিল্পী থেকে শুরু করে চন্দননগর পুরনিগমের মেয়র রাম চক্রবর্তী, ডেপুটি মেয়র মুন্না আগরওয়াল, চন্দননগর ও ভদ্রেশ্বরের জগদ্ধাত্রী পুজো কমিটির সদস্য-সহ অনেকেই । এই শিল্পের কিংবদন্তি শ্রীধর দাস বলেন, "বাবু আমার অনেক পরে কাজ শুরু করে । আগে লোহার ব্যবস্থা করত । পঞ্চানন তলায় একজনের থেকে আলো কিনে বাবু কাজ শুরু করে । অলোক প্রামাণিকের কাছে কাজ শিখেছিল । তারপর নিজের চেষ্টায় ও এতদূর পৌঁছেছে । ভালো লাগে যখন চন্দননগরের আলো মানেই বাবু পালের নাম আসে । ওর চলে যাওয়া দুঃখের ।"

বাবু পালের সঙ্গে অনেক শিল্পী ও কর্মচারী কাজ করতেন । তাঁদের অন্যতম শিল্পী রাজু কর বলেন, "বাবুদা শুধু ভালো শিল্পী নন, ভালো মানুষও ছিলেন । দীর্ঘদিন ধরে তাঁর সঙ্গে কাজ করেছি । আমাদের কারখানায় 40 থেকে 60 জন শ্রমিক কাজ করে । করোনার সময়ও আমাদের কাজ দিয়েছিলেন বাবুদা । কারওকে বসাননি ।"

চন্দননগর কেন্দ্রীয় জগদ্ধাত্রী পুজোর সাধারণ সম্পাদক শুভজিৎ সাউ বলেন, "বাবু পালের হাত ধরে চন্দননগরে বহু শিল্পী তৈরি হয়েছে । দেশ বিদেশে নাম করেছে চন্দননগরের আলোকশিল্প । তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া আলো জগতে ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.