কলকাতা, 14 এপ্রিল: অফিস টাইমের চরম ভিড় ঠেলে ট্রেন উঠে গিয়ে ট্রেন থেকে পরে গিয়ে মহিলা যাত্রীদের আহত হওয়া বা মৃত্যু হওয়ার খবর অনেকবারই সামনে এসেছে । তাই মহিলা যাত্রীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে পূর্ব রেলের শিয়ালদা বিভাগে ইএমইউ (ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট) লোকাল ট্রেনগুলিতে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত কামরার সংখ্যা বাড়ানো হল ৷ শিয়ালদা ডিভিশনের 114টি রেকেই মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত কামরা দিয়ে চালু হয়েছে পরিষেবা।
নিত্য যাত্রীদের 'লাইফ লাইন' লোকাল ট্রেনে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ যাতায়াত করেন। শহর থেকে শহরতলীর মধ্যে যাতায়াত করেন প্রচুর মানুষ। মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে দিনে দিনে বাড়ছে যাত্রী সংখ্যা। প্রতিদিন প্রায় 15 থেকে 18 লক্ষ যাত্রী শিয়ালদা স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করেন। রেল বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে দিনের ব্যস্ত সময় প্রতিটি ইএমইউ লোকালে গড়ে প্রায় 3,000 যাত্রী যাতায়াত করেন।
একটি 12 বগির কোচে প্রথম এবং একেবারে শেষ কামরাটি যথাক্রমে চালক এবং গার্ডের জন্য বরাদ্দ থাকে। তার পরের কামরা অর্থাৎ সামনের এবং পিছনের দিকের দ্বিতীয় কামরা দু'টি মহিলা যাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। এই নিয়ম প্রথম থেকেই ছিল। আর তৃতীয় কামরাটি তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল: জেনারেল, ভেন্ডার এবং বিশেষভাবে সক্ষম যাত্রীদের জন্য। এবার এই জেনারেল অংশটিকে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে। অর্থাৎ একবার থেকে মোট তিনটি কামরা মহিলা যাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে ।
শিয়ালদা ডিভিশনের ডিআরএম দীপক নিগম জানিয়েছেন, সম্প্রতি এই ইএমইউ (ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট) রেকেই এই সারাদিনে 950টি পরিষেবা পাওয়া যাবে। ফলত মহিলা যাত্রীরাও যেমন উপকৃত হবেন তেমনই জন্য বাকি কোচে অতিরিক্ত ভিড় কমবে এবং যাত্রীরা আরও আরামে যাতায়াত করতে পারবেন।
রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই পরিষেবা চালু হওয়ার পর অশোকনগর বারাসাত-সহ আরও কয়েকটি স্টেশনে এই পরিষেবাকে ঘিরে পুরুষ যাত্রীরা বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ যে মহিলাদের জন্য বাড়তি কামরা সংরক্ষণ করার ফলে জেনারেল কামরার সংখ্যা কমে গিয়েছে তাই তাঁদের দিনের ব্যস্ত সময় ভিড় ঠেলে ট্রেনে চড়তে নকল হতে হচ্ছে ।
তবে এই অভিযোগ মানতে নারাজ রেল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের তরফে সাফাই, দিনের ব্যস্ত সময় মোট যাত্রী সংখ্যার 25 শতাংশই মহিলা ৷ তাই এই অনুপাতকে মাথায় রেখে মহিলা যাত্রীদের জন্য আরেকটি কামরা সংরক্ষণ করা প্রয়োজন ছিল। এছাড়াও ব্যস্ত সময় মহিলা যাত্রীরদের সংখ্যা এতটাই থাকে যে, কোন স্টেশনে ট্রেন থেকে নামা এবং ট্রেনে ওঠার ক্ষেত্রে একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে ৷ এতে অনেকে আহত হয়েছেন এবং দু-একজনের মৃত্যুও হয়েছে ৷ অনেকেই নির্দিষ্ট স্টেশনে নামতে পারেন না ৷ আবার নির্দিষ্ট স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠতে পারেন না। আরও বলা হয়েছে যে আগে যখন 9 কোচের ট্রেন ছিল, তখন দুটি কোচ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকত এবং 7টি বগিতে পুরুষ যাত্রীরা যাতায়াত করতে পারতেন। কিন্তু এখন 12 বগির ট্রেন হওয়ার পরে তিনটি বগি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে এবং বাকি 9টি বগিই পুরুষ যাত্রীরা জন্য রাখা হয়েছে ।
এই বিষয় দীপক নিগম জানান, বিভিন্ন সময় দেখা গিয়েছে কিছু পুরুষ যাত্রীদের অশালীন ব্যবহারের জন্য জেনারেল কোচ ফাঁকা থাকলেও মহিলারা তাতে উঠতে চান না। এবং ভিড় ঠেলে মহিলা কামড়ায় তেই ওঠেন কোনক্রমে। তাই সবদিক বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।