হিঙ্গলগঞ্জ, 18 মার্চ: স্বাধীনতার 77 বছর পেরিয়ে গিয়েছে ৷ আজও পরিশ্রুত পানীয় জলের অভাব উত্তর 24 পরগনার সুন্দরবন লাগোয়া হিঙ্গলগঞ্জের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ৷ সেই অঞ্চলের পানীয় জলের উৎস পুকুর ৷ তা-ও দূষিত জল ! আর তার প্রভাব সরাসরি এসে পড়েছে মানব শরীরে ৷ আক্রান্ত হতে হচ্ছে চর্মরোগ-সহ পেটের বিভিন্ন সমস্যায় ৷
আর এবার গরমের দাপট মার্চের শুরু থেকেই ৷ এই পরিস্থিতিতে কী করবেন হিঙ্গলগঞ্জের কয়েক হাজার মানুষ ৷ কোথায় পাবেন পরিশ্রুত পানীয় জল ৷ এ সব প্রশ্নের উত্তর চেয়েও মিলছে না ৷ সমস্যার সুরাহায় স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং প্রশাসনের দরজায় বারবার কড়া নেড়েছেন হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের অধিকাংশ গ্রামের বাসিন্দারা ৷ কিন্তু, তারপরেও পানীয় জলের সমস্যা মেটেনি বলে অভিযোগ ৷ কোথাও-কোথাও সাবমার্সিবল বসানো হলেও, জলের স্তর খুবই নীচে ৷ ফলে সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি ৷ ক্ষোভে ফুঁসছেন সুন্দরবনের প্রান্তিক এলাকার মানুষজন ৷
উত্তর 24 পরগনার বসিরহাট মহাকুমার সুন্দরবন লাগোয়া হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক ৷ এখানকার দুলদুলি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত লেবুখালি-সহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস ৷ বসিরহাট শহর থেকে সুন্দরবনে যাওয়ার মূল প্রবেশদ্বার হল হিঙ্গলগঞ্জের লেবুখালি ৷ সেখান থেকে ভান্ডারখালি, হাটগাছা, কালীতলা, হেমনগর, সামশেরনগরে সহজেই যাওয়া যায় ৷ এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটলেও, মেটেনি নাগরিক অধিকারের অন্যতম দাবি, পরিশ্রুত পানীয় জল ৷

অভিযোগ, কোথাও কল আছে তো, জল নেই ৷ আবার কোথাও পাইপলাইন বসলেও, পানীয় জল আসে না ৷ অভিযোগ, তাই বাধ্য হয়েই পুকুরের দূষিত জল পান করতে হচ্ছে ৷ সেই জল পান করে চর্ম ও পেটের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন গ্রামের বাসিন্দারা ৷ যদিও, প্রশাসনের তরফে গ্রামগুলিতে বেশকিছু টিউবওয়েল বসানো হয়েছিল ৷ কিন্তু উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে, কয়েক বছর ধরে সেগুলিও খারাপ হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ ৷
আবার হিঙ্গলগঞ্জের দুলদুলি পঞ্চায়েতের দক্ষিণ লেবুখালি, বিধানবাড়ি, তিন নম্বর লেবুখালি, স্বরূপকাটি-সহ একাধিক গ্রামে পানীয় জলের কোনও প্রকল্পই নেই বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ এই অঞ্চলের মানুষজন কয়েক কিলোমিটার দূর থেকে জল বয়ে নিয়ে আসেন ৷ আর তা না-করতে পারলে, পকেটের কড়ি খরচ করে কিনতে হচ্ছে পানীয় জল ৷

গ্রামে থাকা দু-একটি টিউবওয়েল থেকে জল ওঠে ৷ তবে, সেই জল পানের যোগ্য নয় বলে অভিযোগ ৷ সেগুলি থেকে নোনাজল ওঠে ৷ অভিযোগ, পানীয় জলের সমস্যা শুধু হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের ক্ষেত্রেই নয়, কমবেশি একই পরিস্থিতি হয়ে রয়েছে সুন্দরবন লাগোয়া মিনাখাঁ, সন্দেশখালি 1 ও 2 নম্বর ব্লক, হাসনাবাদ, হাড়োয়া-সহ প্রায় সর্বত্র ৷
গ্রামবাসী সুকদেব দাস বলেন, "দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের এখানে পানীয় জলের সমস্যা ৷ পরিশ্রুত পানীয় জল না-পেয়ে, বাধ্য হয়েই আমাদের নোনাজল পান করতে হচ্ছে ৷ সেই জল পান করে গ্রামের শিশুদের চর্মরোগ হচ্ছে ৷ বয়স্করা ভুগছেন বিভিন্ন পেটের রোগে ৷ কোথাও-কোথাও পানীয় জলের পাইপ বসেছে ঠিকই ৷ কিন্তু, তার কাজ এখনও শেষ হয়নি ৷ কবে শেষ হবে, তা-ও জানা নেই কারও ৷ গরমকালে আরও সমস্যা বাড়বে ৷ তখন কী হবে, সেটা ভেবেই কূল পাচ্ছি না । আমরা চাই পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে পঞ্চায়েত অথবা প্রশাসন কোনও উদ্যোগ নিক ৷"
একই দাবি পাঞ্চালি দাস নামে আরেক গ্রামবাসীরও ৷ তাঁর কথায়, "আমরা গরিব মানুষ ৷ দিনমজুরের কাজ করে কোনও মতে সংসার চালাই ৷ পানীয় জল আমরা কিনব কীভাবে ? তাই, জল না-পেয়ে বাধ্য হয়ে আমাদের পুকুরের দূষিত জল খেতে হচ্ছে ৷ এই সমস্যা চলছে বহু বছর ধরেই ৷ পানীয় জলের সমস্যার সুরাহা হোক ৷ সেটাই চাই আমরা ৷ নইলে বাঁচাই দায় হয়ে পড়বে ৷"
অন্যদিকে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি অবশ্য মূল সমস্যাকে আড়াল করতে ব্যস্ত থাকলেন ৷ দুলদুলি গ্রামপঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য বিধান মুণ্ডা বলেন, "সরকারি প্রকল্প থেকে গ্রামগুলিতে নতুন করে দ্রুত টিউবওয়েল বসানোর কাজ শুরু করব ৷ কয়েকটি জায়গায় পাইপ লাইনের কাজ শুরু হয়েছিল ৷ কিন্তু, রাস্তার পাশে উপযুক্ত পাইলিং না-থাকায়, সেই কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে ৷ নতুন করে টেন্ডার করিয়ে আবার কাজ শুরু হবে ৷ সুন্দরবন লাগোয়া গ্রামে জলের সমস্যা, এটা ঠিক কথা নয় ৷ কিছু মানুষ অপপ্রচার করতে ব্যস্ত ৷ কিন্তু, কাজটা করব আমরাই ৷ এটুকু বলতে পারি, মাসখানেকের মধ্যে পানীয় জলের সমস্যা মিটে যাবে ৷"
পঞ্চায়েত সদস্য সমস্যা মাসখানেকের মধ্যে মিটে যাওয়ার দাবি করেছেন ৷ তবে, হিঙ্গলগঞ্জের পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে শাসকদলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি গেরুয়া শিবির ৷ বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার যুব মোর্চার সভাপতি পলাশ সরকার বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে ৷ তারপরেও কেন সুন্দরবনের মানুষ পানীয় জল পেলেন না ? তার জবাব দিতে হবে তৃণমূল সরকারকেই ৷ আসলে সরকার দুর্নীতিতে ভরে গিয়েছে ৷ এর প্রতিফলন ঘটবে আগামী দিনের ভোটগুলিতে ৷"
অপরদিকে, হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক প্রশাসনের দাবি, পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে সেখানে বিকল্প কোনও ব্যবস্থা করা যায় কি না, সে বিষয়ে চিন্তভাবনা শুরু হয়েছে ৷ আপাতত পানীয় জলের ট্যাংক পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে ৷