শান্তিপুর, 20 মার্চ: ভূতুড়ে ভোটার বিতর্ক নিয়ে বঙ্গ রাজনীতি এখন সরগরম ৷ বৃহস্পতিবার সেই বিতর্কে নতুন মোড় এল ৷ রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার হল বস্তা বস্তা ভোটার কার্ড ৷ ঘটনাস্থল নদীয়ার শান্তিপুর থানার কৃষ্ণ কালীতলা ৷ এই নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে এলাকায় ৷
স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে ওই ভোটার কার্ড উদ্ধার করে পুলিশ ৷ সেগুলি কী আসল, নাকি নকল ! আপাতত সেটাই পুলিশ খতিয়ে দেখছে ৷ একদিকে যখন এই নিয়ে পুলিশি তদন্ত শুরু হয়েছে, তখন অন্যদিকে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও ৷ তৃণমূল ও বিজেপি এই নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে ৷
পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, কৃষ্ণ কালীতলা এলাকাটি শান্তিপুর পুরসভার 24 নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ছে ৷ সেখানেই রয়েছে বিসর্জন ঘাট ৷ সেই ঘাট সংলগ্ন যে রাস্তা, সেই রাস্তার পাশ থেকেই এদিন উদ্ধার হয়েছে বস্তা বস্তা ভোটার পরিচয়পত্র ৷

স্থানীয় বাসিন্দা সুরজিৎ মিদ্দা বলেন, ‘‘এটা আমাদের বাঁশবাগান৷ এখানে নোংরা ফেলে গিয়েছে৷ গতকাল (বুধবার) যখন মাঠ থেকে ফিরছিলাম, তখন দেখতে পাই ৷ সেই সময় অনেকগুলি বস্তা পড়েছিল এখানে ৷ ভেবেছিলাম আবর্জনা-কাগজ আছে, পুড়িয়ে দেব ৷ কিন্তু ধুলো উড়ছিল বলে এখানে দাঁড়াইনি ৷ আজ জানতে পারলাম যে বস্তার মধ্যে ভোটার কার্ড রয়েছে ৷ এখন প্রশাসন যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিক ৷’’

স্থানীয়দের দাবি, এদিন রাস্তার পাশে বস্তায় প্রচুর ভোটার কার্ড পড়ে থাকতে দেখা যায় ৷ তা দেখে শোরগোল পড়ে এলাকায় ৷ ভিড় জমে যায় ঘটনাস্থলে ৷ যেহেতু এখন ভুয়ো ভোটার কার্ড বিতর্ক চলছে, তাই অনেকেরই সন্দেহ যে কার্ডগুলি ভুয়ো হতে পারে ৷ সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় শান্তিপুর থানায় ৷ সেখান থেকে পুলিশ গিয়ে কার্ডগুলি উদ্ধার করে নিয়ে যায় ৷

রানাঘাট পুলিশ জেলার এসপি কুমার সানিরাজ বলেন, ‘‘পড়ে থাকা ভোটার কার্ডগুলো ইতিমধ্যেই উদ্ধার করা হয়েছে । আমাদের তরফে নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ রিপোর্ট প্রদান করা হবে । পাশাপাশি কে বা কারা কোন উদ্দেশ্যে ভোটার কার্ডগুলো ফেলে রেখে গেল, তা নিয়েও তদন্ত চলছে ।’’
উল্লেখ্য, ভোটার তালিকা সংশোধন থেকে ভোট ও গণনায় প্রক্রিয়া নির্বাচন কমিশনের অংশ হিসেবে কাজ করেন প্রশাসনের আধিকারিকরাই ৷ যেমন ব্লকস্তরের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে কাজ করেন বিডিও ৷ এক্ষেত্রে শান্তিপুরের বিডিও সন্দীপ ঘোষ সেই কাজ করেন ৷ তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ পড়ে থাকা ভোটার কার্ডগুলো উদ্ধার করেছে । আমার তরফ থেকেও তদন্ত শুরু করেছি । তবে বেশিরভাগ ভোটার কার্ডগুলি অন্যান্য জেলার । কী কারণে এখানে ফেলে রেখে গেল, ভোটার কার্ডগুলি বৈধ কি না, সেই বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে ।’’
এদিকে এই নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা ৷ বিজেপি ও তৃণমূল একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করেছে ৷ বিজেপির নদীয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার মুখপাত্র সোমনাথ কর বলেন, ‘‘প্রশাসন কাদের নিয়ন্ত্রণে আছে, তা নিশ্চয় জানেন৷ বস্তা বস্তা যে ভোটার কার্ড উদ্ধার হয়েছে, সেগুলিই ভোটে কারচুপি করতে ব্যবহার করা হতো ৷ এই ভূতুড়ে ভোটারদের মাধ্যমেই তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় রয়েছে ৷ অভিনব কায়দায় ছাপ্পা দিয়ে গণতন্ত্রকে ধূলিস্যাৎ করে তৃণমূল ক্ষমতায় টিকে আছে ৷ এই অভিযোগ আমরা বারবার করেছি ৷’’
তাঁর আরও দাবি, আধারের সঙ্গে ভোটার কার্ডের লিঙ্ক হলেই ভূতুড়ে ভোটারের পর্দাফাঁস হয়ে যাবে ৷ সেই কারণে তৃণমূলের নেতারাই বাড়িতে রাখা বস্তা বস্তা ভুয়ো ভোটার কার্ড ফেলে দিচ্ছেন ৷ তাই এই বিষয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করেছেন ৷
তৃণমূল আবার এই নিয়ে পালটা বিরোধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তির ছুঁড়েছে ৷ 24 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের বিকাশ সাহা বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ভুয়ো ভোটার ধরার জন্য বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি ৷ ভোটার তালিকা মিলিয়ে দেখছি ৷’’ কিন্তু এদিন যে কার্ডগুলি উদ্ধার হয়েছে, সেগুলি ভুয়ো কি না, এই বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাননি ৷ বিষয়টি প্রশাসনের খতিয়ে দেখা উচিত বলে তিনি মনে করেন ৷
তবে যে কার্ড উদ্ধার হয়েছে, সেগুলি অন্য জেলার জানতে পেরে বিকাশ সাহা বলেন, ‘‘তাহলে পরিকল্পিতভাবে এই কাজ করা হয়েছে ৷ প্রশাসন বা নির্বাচন কমিশন বিষয়টি দেখুক ৷’’ এর পর তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় যে কারা এই পরিকল্পনা করতে পারে ? উত্তরে তিনি বিজেপির দিকেই আঙুল তোলেন৷ বলেন, ‘‘বিজেপিই এই কাজ করেছে ৷’’ এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই বলে তিনি দাবি করেন ৷