মালদা, 7 জুন: ডেঙ্গি আক্রান্ত হলে জেলাবাসীর শেষ ভরসা মালদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ৷ সেই হাসপাতাল এখন মশার আঁতুড়ঘর ৷ হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে এদিক-ওদিক জমা জলের ছবি দেখে ক্ষুব্ধ ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী ৷ এই ঘটনায় ঠিকাদার সংস্থাকে কাঠগড়ায় তুললেন তিনি ৷ হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে ঠিকাদার সংস্থার এক কর্তাকে তুলোধনা করেন তিনি ৷
ডেঙ্গিপ্রবণ জেলা মালদা ৷ প্রতি বছর বর্ষায় এই জেলায় ডেঙ্গির দাপট গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যানে প্রমাণিত ৷ তাই স্বাস্থ্য দফতর বর্ষা শুরুর আগে জেলায় ডেঙ্গি প্রতিরোধে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছে ৷ সেই নির্দেশ মেনে ময়দানে নেমেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর ৷ জেলার দুই পুরসভা ও গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকেও বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে ৷ এদিকে প্রাক বর্ষার বৃষ্টিও নেমেছে ৷ জেলার দুই পুরসভার চেয়ারম্যান প্রায় প্রতিদিনই শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ৷ কোথায় জমা জল কিংবা জঞ্জাল রয়েছে, তা খতিয়ে দেখছেন ৷ তাঁদের সেই পরিদর্শনেই ধরা পড়েছে প্রদীপের নীচে অন্ধকার ৷
স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট বলছে, এই মুহূর্তে ডেঙ্গি প্রাদুর্ভাবের ক্ষেত্রে মালদা রাজ্যে সপ্তম স্থানে রয়েছে ৷ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ্ত ভাদুড়ি বলেন, "চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন 92 জন ৷ গত সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল 80 ৷ এক সপ্তাহে 12 জনের রক্তের নমুনায় নতুন করে ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়েছে ৷"
তিনি জানান, গত সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যায় মালদা ছিল অষ্টম স্থানে ৷ নতুন 12 জন আক্রান্তের সুবাদে এই সপ্তাহে জেলা সপ্তম স্থানে উঠে এসেছে ৷ উত্তরবঙ্গের আটটি জেলার মধ্যে সবার আগে রয়েছে মালদা ৷ এরই সঙ্গে আধিকারিক আশ্বস্ত করেন, "তবে এই পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের তুলনায় এবার পরিস্থিতি খানিক ভালো ৷ গত বছর এই সময় জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল 138 জন ৷ আমরা সতর্ক ৷"
এদিকে রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য হিসাবে মালদা মেডিক্যালের বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী ৷ মেডিক্যাল ক্যাম্পাসের উত্তর দিকে তৈরি হচ্ছে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট বিল্ডিং ৷ ওই এলাকাটি এখন বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার দখলে ৷ পিজি বিল্ডিং-এর জন্য তৈরি হচ্ছে বহুতল ৷ পিলার করতে একাধিক গর্ত খোঁড়া হয়েছে ৷ কয়েক সপ্তাহ ধরে সেসব গর্তে জল জমে রয়েছে ৷ খোঁড়াখুঁড়ির কাজে তৈরি হয়েছে একাধিক অস্থায়ী নিকাশি নালা ৷ সেসব জায়গাতেও জল জমেছে ৷ সেখানে বাসা বেঁধেছে মশা ৷ জলের মধ্যে মশার লার্ভা খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে ৷

এসব দেখে মেজাজ হারিয়ে বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার এক কর্তাকে তুলোধনা করেন পুরসভার চেয়ারম্যান ৷ কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ বলেন, "এটা মেডিক্যাল কলেজ নাকি ডেঙ্গির আঁতুরঘড় ! মানুষ এই হাসপাতালে সুস্থ হতে ভর্তি হয় ৷ কিন্তু যা পরিস্থিতি করেছেন, তাতে যে কোনও মানুষ এই হাসপাতালে ভর্তি হতে ভয় পাবে ৷"
ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান বলেন, "ক’দিন ধরে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে ৷ যদিও আমরা নিকাশি ব্যবস্থা সচল রেখেছি ৷ হাসপাতালের জল বেরিয়ে যাচ্ছে ৷ কিন্তু ভিতরের নালাগুলো থেকে জল বেরচ্ছে না ৷ এখানে ঠিকাদার সংস্থার কর্মীরা চারদিকে গর্ত খুঁড়ে রেখেছেন ৷ সেসব গর্তে জল জমছে ৷ সেখানে মশার লার্ভা ঘুরে বেড়াচ্ছে ৷ হাসপাতাল চত্বরটা ডেঙ্গিপ্রবণ হয়ে উঠেছে ৷ স্থানীয় কাউন্সিলর এনিয়ে একাধিকবার অভিযোগ করেছেন ৷ গতকাল আমি নিজে এসব দেখতে বলেছি ৷ ওই ঠিকাদার সংস্থাকে জানিয়েই ভিজিটে এসেছি ৷ কিন্তু ঠিকাদার সংস্থার কর্তাকে এসব নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, আমাদের কোনও প্রশ্নের উত্তর দেবেন না ৷ যা বলার উপরে বলবেন ৷ আমরা এই ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে নোট পাঠাব ৷”
মালদা মেডিক্যালের সহকারি অধ্যক্ষ তথা হাসপাতাল সুপার প্রসেনজিৎ বর বলেন, "বিভিন্ন সময়ে ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ আসে ৷ আমরা সেসব অভিযোগের ভিত্তিতে ঠিকাদার সংস্থাকে চিঠিও দিয়েছি ৷ কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার ঢিলেমি আমাদের নজরে এসেছে ৷ আমরা মেডিক্যালের তরফে সমস্ত রিপোর্ট ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠিয়ে দিয়েছি ৷" যদিও এনিয়ে ঠিকাদার সংস্থার তরফে কেউ সংবাদমাধ্যমকে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি ৷