কলকাতা, 17 এপ্রিল: গত 3 এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি বাতিল হয়েছে প্রায় 26 হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মীর। কিন্তু রাজ্যের স্কুলগুলোর কথা বিবেচনা করে ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল এসএসসি। সেখানে সুপ্রিম কোর্টের নয়া নির্দেশ অনুযায়ী, নবম, দশম এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষকরা 31 ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যেতে পারবেন। যেখানে 'আপদকালীন স্বস্তি' দেখছেন শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এদিন সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রসঙ্গে বলেন, "সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে তাতে আপদকালীন একটা স্বস্তি পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু এই স্বস্তি সাময়িক। এটা আমাদের কাছে আশাব্যঞ্জক একটি খবর।"
সুপ্রিম কোর্টে এদিনের নতুন নির্দেশের পর চাকরিহারা 'যোগ্য' শিক্ষকদের মধ্যে অবশ্য দেখা গিয়েছে অসন্তোষ। চাকরিহারা যোগ্য শিক্ষক মেহেবুব মণ্ডল বলেন, "একটা আমাদের কাছে সাময়িক স্বস্তি নয়। কারণ আমারা স্কুলে যাওয়ার পর থেকেই মাথায় আসবে এই বছরের পর এই স্কুলের সঙ্গে আমার আর কোনও সম্পর্ক থাকবে না।" তাঁদের কথায় সায় দেন শিক্ষামন্ত্রীও। ব্রাত্য বসু বলেন, "যতক্ষণ না বঞ্চিত যোগ্য শিক্ষকরা আইনি পরামর্শ-সহ তাদের পূর্ণ মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে পারছি, ততক্ষণ আমাদের স্বস্তি নেই। আমরা এটার শেষ পর্যন্ত দেখব। আমরা যাতে ওদের পূর্ণ সহযোগিতা দিয়ে পাশে থাকতে পারি।"
তবে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ক্ষেত্রে একটু সুবিধা দেওয়া হলেও সেখানে বাদ পরে যান গ্রুপ ডি ও সি-এর অশিক্ষক কর্মীরা। যদিও তাদের পাশে থাকার বার্তা দেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, "এটা পরের ধাপ। যোগ্য অশিক্ষক কর্মীদের পাশেও আমরা আছি। ওদের চিন্তা করতে বারণ করব। শিক্ষকদের ক্ষেত্রে আজকে যেমন রায় এসেছে, তাদের ক্ষেত্রে আমরা সর্বতোভাবে থাকব। আমরা আপাতত এটুকু বলতে পারি।" তবে মুখ্যমন্ত্রীর আদেশ অনুযায়ী তাদের সঙ্গেও বৈঠকে বসবেন শিক্ষামন্ত্রী।
অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে স্কুলে ফিরছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সেই প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী পড়ুয়াদের কথা চিন্তা করতে বলেন। তিনি বলেন, "বঞ্চিত যোগ্য শিক্ষকদের প্রথমদিন আমি ধৈর্য্য ধরতে বলেছিলাম। যদিও এর মাঝে কসবায় একটা অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে গিয়েছে। তবে আমি ওদের বলেছিলাম আশাবাদী হওয়ার কারণ, অবকাশ আছে। এটা যখন সর্বচ্চ চেহারা পাবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। আমর মনে হয় এখন আপনাদের পড়ুয়াদের কথা ভাবা উচিত। আপনাদের কাজে আপনাদের ফেরত যাওয়া উচিত।"
তবে আদালত অবমাননা করতে চান না শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষক মেহেবুব মণ্ডল বলেন, "আমার স্কুলে যাব। না-হলে আদালত অবমাননা করা হবে। কিন্তু আমাদের আন্দোলন থামবে না।" আগামী দিনে একাধিক কর্মসূচি বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেন যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মী অধিকার মঞ্চের তরফে। 18 এবং 19 তারিখ তারা জেলায় বিভিন্ন কর্মসূচি নিচ্ছেন। জেলার মানুষদের নিজেদের কথা তুলে ধরার জন্য মিছিল করে লিফলেট বিলিও করবেন তারা। এর পাশাপাশি 21 তারিখ করুণাময়ী থেকে আচার্য সদন অর্থাৎ এসএসসি অফিস অভিযান করবেন যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকেরা।
22 তারিখ শিয়ালদা থেকে রাজভবন পর্যন্ত মিছিল করবেন তারা। সেখানে রাজ্যপালের হাতে ডেপুটেশন তুলে দেবেন যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকেরা। তবে এই মুহূর্তে আন্দোলন স্তিমিত হওয়ার কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী। ব্রাত্য বলেন, "আন্দোলন স্থিমিত হওয়া উচিত। কিন্তু স্তিমিত হবে না। বিরোধী দল যোগ্য বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের ছিল না। বিরোধী দল আজও বানচাল করার জন্য কেউ কেউ হাজির হয়েছিল। সেই বিরোধী দিলদের আমরা শুধু বলব, সরকার সবার। দলমত নির্বিশেষে সবার পাশে থাকুন।"