কলকাতা, 12 এপ্রিল: 207 বছরের মাথায় প্রথম সমাচার দর্পণ পত্রিকার সংস্করণ প্রদর্শিত হল কলকাতায় । এই পত্রিকা পঞ্চানন কর্মকারের তৈরি ছাপার হরফ দিয়ে মুদ্রিত হয়েছিল । কলকাতার পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের খেলাত ভবনে শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে প্রদর্শনী, যা চলবে বাংলা নববর্ষ অর্থাৎ মঙ্গলবার পর্যন্ত ।
সমাচার দর্পণ বাংলা ভাষার প্রথম সাপ্তাহিক সংবাদপত্র । শ্রীরামপুরের ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস থেকে 1818 সালে 23 মে প্রকাশিত হয় এই পত্রিকা । সম্পাদক ছিলেন জন ক্লার্ক মার্শম্যান । দেবনগরী ও বাংলা ছাপার হরফ প্রথম তৈরি করেছিলেন পঞ্চানন কর্মকার । তাঁর তৈরি বাংলা হরফে প্রথম বই ছাপা হয়েছিল 1778 সালে 'অ্যা গ্রামার অফ দ্য বেঙ্গলি ল্যাংগুয়েজ' । পরে 1799 সালে উইলিয়াম কেরির সঙ্গে যোগাযোগ হওয়াতে তিনি শ্রীরামপুরে মিশন প্রেসে যোগদান করেন ।
পঞ্চানন কর্মকারের দক্ষতায় এশিয়ার সর্ববৃহৎ টাইপ ফাউন্ডারি তৈরি হয় এই মিশন প্রেস । 1801 সালে উইলিয়ার কেরির বাইবেলের নতুন নিয়মের বাংলায় অনুবাদ বইটি তাঁর তৈরি অক্ষরে প্রকাশ হয় । এরপর 1818 সালে বাংলা ভাষার প্রথম সংবাদপত্র সমাচার দর্পণ প্রকাশিত হয় শ্রীরামপুরের ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস থেকে । সেই পত্রিকায় ব্যবহার হয় পঞ্চানন কর্মকারের তৈরি বাংলা ছাপার হরফ ।

আজ থেকে 50 বছর আগে সেই সংবাদপত্রের সংস্করণ প্রেসের তরফে কর্মকার পরিবারের তৎকালীন প্রজন্মের হাতে তুলে দেওয়া হয় । এছাড়াও বেশ কয়েকটি বাংলা ছাপার হরফ তৈরির যন্ত্র সেই সময় ব্রিটেন থেকে এসেছিল । সেগুলি প্রদর্শিত হচ্ছে কলকাতায় ৷ এই সমস্ত দুষ্প্রাপ্য জিনিসগুলি চাক্ষুষ করতে হলে আসতে হবে খেলাত ভবনের প্রদর্শনীতে ।

পঞ্চানন কর্মকারের পঞ্চম প্রজন্ম প্রিয়াঙ্কা মল্লিক বলেন, "পঞ্চানন কর্মকারের তৈরি অক্ষর দিয়ে ছাপা বাংলার ভাষায় প্রথম বই যেমন এই প্রদর্শনীতে আছে, তেমনই বাংলার প্রথম সাপ্তাহিক সংবাদপত্র সমাচার দর্পণ আছে । এই পত্রিকা সেই সময় বাংলার শিক্ষিত মানুষকে গদ্য রস গ্রহণে সাহায্য করে । তাই এই বই ও সংবাদপত্র যেমন আছে তেমনই পঞ্চানন কর্মকারের তৈরি 300টি টাইপ ফেস ও 4টি অক্ষর তৈরির যন্ত্র এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে ।"

তাঁর কথায়, "পারিবারিক উদ্যোগেই এই প্রদর্শন । 207 বছরের মাথায় এই সব সংগ্রহ প্রকাশ করা হচ্ছে । এত দিন বাড়িতেই রাখা থাকত । গবেষণার কাজে যুক্ত ছাত্রছাত্রী বা বিশেষজ্ঞরা বাড়িতে আসতেন এগুলি দেখতে । এখন আমজনতা যাতে পঞ্চানন কর্মকারের কাজ জানতে পারেন তাই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ।"